স্মৃতিচারণ

আব্দুস শহীদ মামুন

যতটুকু মনে পড়ে ১৯৯৮ সালের কথা। খালাম্মা তখন হাসপাতালে। অপারেশন হবে দুপুর ১টার দিকে। বাসায় গিয়ে দেখি খালুজান ছাত্র-ছাত্রীদের অত্যন্ত মনযোগের সাথে পড়াচ্ছেন। কোনো টেনশন নেই। খালাম্মার বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে হাসিমুখে বললেন, সবাই হাসপাতালে আছে। তুমিও যাও। জিজ্ঞেস করছিলাম খালু আপনি যাবেন না? স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বললেন আল্লাহ তায়ালাই দেখবেন। এই শিক্ষার্থীরা আমার কাছে আমানত। তাদের রেখে যেতে পারব না। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা অত্যন্ত কষ্ট করে মাস শেষে আমাকে সম্মানী দেয়। অনেকে অক্ষমতা পেশ করে। খালুর যখন ইন্তেকালের সংবাদ শুনি, তখন কথাগুলো আমার কানে ভেসে আসে। দায়িত্ব কি জিনিস, কত প্রকার ও কি কি আর সত্যিকারের জবাবদিহিতা কেমন হওয়া উচিৎ তা যেন বুঝিয়ে দিলেন। ন্যায়ের ব্যাপারে কখনো কোনো আপোষ করতে দেখিনি এই অসাধারণ মানুষটিকে।
শিক্ষার্থীরা ভোর সকালে আসতো, যেতো রাতেঃ উনার শিক্ষালয়ে ছাত্ররা ভোর সকালে আসতো আর যেতো রাতে। একটানা ১২ ঘন্টা পড়তে হতো। শিক্ষার্থীরা দুপুরের খাবার উনার বাসায়ই গ্রহণ করতো।
শিক্ষার্থীদের ভেতরের শক্তি প্রকাশের চেষ্টা করতেন তিনিঃ গতানুগতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো নয়। প্রতি মাসেই থাকতো কুইজ, রচনাসহ বিতর্ক প্রতিযোগিতা। স্কুলের একদম পেছনের সারিতে বসা ছাত্রটিকে নিয়ে আসতেন সামনে। যাদের যোগ্যতার সীমাবদ্ধতা ছিলো, তাদের মধ্য থেকে বের করে নিয়ে আসতেন মেধা, মনন ও প্রজ্ঞা। এক অলৌকিক যাদুর কাঠি ছিলো খালুর নেতৃত্বে।
হবিগঞ্জ বিতর্ক পরিষদের যাত্রাঃ এক সময় বিতর্ক হতো শুধু উনার বাসায়। হতো প্রতিযোগিতা। বিতার্কিক হিসেবে বের করে নিয়ে আসলেন, আনসারী (পরবর্তীতে ডাক্তার), আবুল ফজল, জাদিল, তুলিসহ অনেককে। উনার হাত দিয়েই আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করলো হবিগঞ্জ বিতর্ক পরিষদ।
একজন সার্থক বাবা! একজন মানুষ জীবনে কতটুকু সার্থক তার পরিচয় পাওয়া যায় তার সন্তানাদীর দিকে তাকালে। উনার প্রথম সন্তান শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএসএস বিভাগের প্রফেসর ড. জহিরুল হক শাকিল, যিনি ডিস্টিংশনসহ অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ইংল্যান্ডের লিডস ইউনিভার্সিটি থেকে কমনওয়েলথ স্কলারশীপ নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন, বর্তমানে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর। দ্বিতীয় ছেলে ছায়েদুল হক এসএসসিতে স্ট্যান্ড করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা সম্পন্ন করে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন, তৃতীয় ছেলে কবিরুল হক অত্যন্ত মেধা ও দক্ষতা প্রদর্শন করে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে সাংবাদিক হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মেয়েরাও তাদের স্ব স্ব যোগ্যতা প্রদর্শন করে এগিয়ে যাচ্ছেন। উনার জামাতারা হচ্ছেন সিকৃবির সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার শাহীদ আলী ও প্রকৌশলী গোলাম সরোয়ার।
গত ৭ জুন ঢাকায় চিকিৎসারত অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন খালুজানকে জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করুন।
লেখক ঃ আব্দুস শহীদ মামুন
সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
email. ashahidmamun19717@gmail.com