দাঁতের রোগ ক্যানসারের মতোই নীরব ঘাতক; যখন টের পাওয়া যায় তখন অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যায়

আতাউর রহমান কানন

২৫ এপ্রিল ২০০৭, বুধবার। সকাল ৯টায় অফিসে যাই। সারাদিন অফিসে কাজ করে সন্ধ্যা ৬টায় বাসায় ফিরে আসি। কয়েকদিন ধরে আমার একটি দাঁতে মাঝে মাঝে ব্যথা করছে। প্রচন্ড ব্যথা না হওয়ায় আমি তেমন গুরুত্ব দেইনি। এখন ব্যথা বাড়ায় সময় হয়েছে গুরুত্ব দেওয়ার। খোঁজখবর নিয়ে জানলাম, হবিগঞ্জের বিশিষ্ট সমাজসেবী ও শিশু চিকিৎসক ডা. জমির আলীর ছেলে আল আমিন সুমন নাকি ভালো ডেনটিস্ট। এনডিসি আজ সেই সুমনের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছে। রাত ৮টায় এনডিসিকে সাথে নিয়ে ডেনটিস্ট সুমনের ক্লিনিকে গেলাম। তাঁদের নিজেদের দোতলা বাড়ির নিচতলায় ক্লিনিক। সেখানে গিয়ে দেখি সুমনের পিতা ডা. জমির আলী ও মাতা নজরুল একাডেমির সভাপতি কবি তাহমিনা বেগম গিনি ও ডেনটিস্ট সুমন আমার অপেক্ষায় আছেন। আমাকে নিয়ে দোতলার ড্রয়িংরুমে বসিয়ে দন্ত চিকিৎসার বদলে নাশতায় আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এরপর নাশতা শেষে সুমন আমাকে নিয়ে তার ক্লিনিকের চেয়ারে শুয়ায়ে দাঁত পরীক্ষা করলেন। একটি দাঁতের জন্য গিয়েছি, পরীক্ষা করে আরও একটির ক্যারেজ বের করলেন। যে দাঁতের জন্য গিয়েছি সেটার অবস্থা নাকি ভালো না। রুট ক্যানেল লাগবে। বুঝলাম, দাঁতের রোগ ক্যানসারের মতোই নীরব ঘাতক; যখন টের পাওয়া যায় তখন অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যায়।
ডা. সুমন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে আজ আমার সব দাঁত স্কেলিং করে ক্ষতিগ্রস্ত দাঁত দুটিতে অস্থায়ী ফিলিং করে দেন। এছাড়া দাঁতের ওপিজি এক্সরে অ্যাডভাইজ করেন। রাত দশটায় দাঁতের প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে আসি। আমি আর দাঁতের চিকিৎসা নিয়ে হেলাফেলা না করে পরদিন সন্ধ্যায় সিলেট স্টেডিয়াম মার্কেটের পাইওনিয়ার ক্লিনিকে গিয়ে ওপিজি এক্সরে করে নিয়ে আসি।
৩০ এপ্রিল ২০০৭, সোমবার। সকাল থেকেই আজ কয়েকটি সভায় সভাপতিত্ব করি। এর মধ্যে জেলা ধান-চাল সংগ্রহ কমিটির সভা ছিল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। দেশে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে চালের দামও বেড়ে চলছে। সরকার মার্কেট ইন্টারভেশন করার জন্য ন্যায্য মূল্যের ওএমএস কর্মসূচি চালু করেছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান-চাল সংগ্রহ করতে পারলে সরকারের বিতরণ ব্যবস্থায় কোনো ঘাটতি দেখা দেবে না। আর বাজারেও চালের মূল্য স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে। হবিগঞ্জ জেলায় সরকারের সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করে সভাটি শেষ করি।
১ মে ২০০৭, মঙ্গলবার। সরকারি ছুটি থাকায় আমি সারাদিন বাসাতেই কাটাই। রাতে দাঁতের জন্য তৃতীয় দফা চিকিৎসা নিই। বামপাশের ওপরের মাড়ির ৭ নম্বর দাঁতে রুট ক্যানেল চিকিৎসা চলছে। আরও কয়েকটা সিটিং লাগবে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।
৩ মে ২০০৭, বৃহস্পতিবার। সকালে অফিসে গিয়ে এডিএম-এডিসিদের নিয়ে বসে অফিসের কিছু জরুরি বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। অতঃপর এডিএমকে সাথে নিয়ে ১২টায় জেলা কারাগারে যাই। সেখানে কারা সপ্তাহ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠান উদ্বোধন করি। অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে কারারক্ষীগণ রক্তদান করেন। সন্ধানীর কর্মীরা সে রক্ত সংগ্রহ করেন। সেখান থেকে অফিসে ফিরে আবার নিজের অফিসিয়াল কাজকর্মে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। বিকেল সাড়ে ৫টায় বাসায় আসি। পায়ের ব্যথা সেরে যাওয়ায় আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় টেনিস মাঠে গিয়ে এক ঘণ্টা টেনিস খেলি।
৭ মে ২০০৭, সোমবার। আজ সকাল ৮টায় হবিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও ডিভিল ডিফেন্স স্টেশনে যাই। সেখানে আজ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষ্যে মহড়াসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আমি প্রধান অতিথি হিসেবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সপ্তাহের উদ্বোধন করি। এরপর মার্চপাস্টে সালামি গ্রহণ শেষে তাদের মহড়া দর্শন করি। আমার সাথে পুলিশ সুপার সহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও সুধীজন উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকে অফিসে ফিরে সাড়ে ৯টা থেকে একনাগাড়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাসহ পরপর ৯টি সভা করি। এর ফাঁকে লাঞ্চ বিরতিতে কয়েকজন ভিজিটরকে সাক্ষাৎ দিই।
আজ রাতের টিভি সংবাদে দেখলাম, শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে ৫১ দিন পর নিরাপদেই দেশে ফিরে এসেছেন। তাঁকে দেশে ঢুকতে না দেওয়ার সরকারি মনোভাব রিউমার হিসেবেই থাকল।
৮ মে ২০০৭, মঙ্গলবার। আজ সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসন ও যৌথ বাহিনীর সাথে জেলার সকল পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যাদের নিয়ে এক সমন্বয় সভা হয়। এতে হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুজিবুর রহমান বীরবিক্রম উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন যে, যৌথবাহিনী মাঠ পর্যায়ে মূলত ৪টি বিষয়ের ওপর কাজ করে যাচ্ছে, যেমনÑ এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা, সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা, দেশের আর্থিক কর্মকা- নির্বিঘেœ চলতে সহায়তা প্রদান ও দেশের চলমান জরুরি অবস্থা কার্যকরে ব্যবস্থা গ্রহণ। এ ছাড়া জাতীয়ভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন। ১১টায় তিনি আমার অফিস থেকে বিদায় নিলে আমি আমার অফিসের কাজে মনোনিবেশ করি।
রাত সাড়ে ৭টায় সুরবিতান ললিতকলা একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীতে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করি। সেখানে অতিথিদের বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করে সাড়ে ৯টায় টেনিস ক্লাবে যাই। ক্লাবে আজ বার্ষিক ডিনারের আয়োজন ছিল। ডিনারে শহরের গণ্যমান্য অনেকেই আমন্ত্রিত ছিলেন। এছাড়া পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান, সেনা ইউনিটের সিও কর্নেল মনির ও টুআইসি মেজর আরিফ ডিনারে অংশগ্রহণ করেন। (চলবে…)