সুজনের স্ট্যাটাসে ফুটে উঠেছে পিন্টু আচার্য্যের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে রিবন রূপা দাশ কতটা চাপে ছিলেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার ভরপূর্ণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা রিবন রূপা দাশকে আত্মহত্যায় প্ররোচণা মামলার আসামী যুবলীগ নেতা বিপ্লব কুমার রায় সুজন আত্মপক্ষ সমর্থন করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এতে তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করেন।
দেশসেরা উদ্ভাবক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রিবন রূপা দাশের অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়টি এখন হবিগঞ্জে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। তার সহকর্মী শিক্ষক সমাজ যেমন তার মৃত্যুকে সহজভাবে মেনে নিতে পারছেন না, তেমনি সচেতন মহলেও এ মৃত্যু নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। সবাই জানতে চান কেন স্বনামধন্য একজন শিক্ষিকার এমন মৃত্যু। স্বামী-স্ত্রী দুজন শিক্ষক হয়েও ছোট সংসারে কেন সুদে টাকা আনতে হবে। শিক্ষিকা রিবন রূপা দাশ সুদে টাকা এনেছেন একথাও কেউ বিশ^াস করতে পারছেন না। এ পরিস্থিতিতে বুধবার বিকেলে শিক্ষিকা রিবন রূপা দাশের স্বামী লাখাই মুক্তিযোদ্ধা কলেজের শিক্ষক অজয় কুমার দাশ বাদি হয়ে লাখাই থানায় ৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলায় তিনি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রিচি গ্রামের বাসিন্দা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সদর উপজেলা আহবায়ক ও যুবলীগ নেতা পিন্টু আচার্য্য, হবিগঞ্জ শহরের বাসিন্দা যুবলীগ নেতা বিপ্লব কুমার রায় সুজন ও বাহুবল উপজেলার মিরপুরের বাসিন্দা সাংবাদিক অভিজিৎ ভট্টাচার্য্যকে আসামীভূক্ত করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন শিক্ষিকা রিবন রূপা দাশ এক ব্যক্তির কাছ থেকে সুদে কিছু টাকা নিয়েছিলেন। ওই টাকার জন্য তিনি প্রচন্ড চাপে ছিলেন। চাপ সহ্য করতে না পেরে মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। ফলে তিনি বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যার পূর্বে তিনি চিরকুটেও বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
মামলার খবর গতকাল দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকায় প্রকাশিত হলে হবিগঞ্জে আলোচনার ঝড় উঠে। সকলেই শিক্ষিকা রিবন রূপা দাশের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
এ পরিস্থিতিতে মামলার অন্যতম আসামী যুবলীগ নেতা বিপ্লব কুমার রায় সুজন আত্মপক্ষ সমর্থন করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। তার স্ট্যাটাসে পিন্টু আচার্য্যের কাছ থেকে রিবন রূপা দাশের সুদে টাকা নেয়ার চিত্র ফুটে উঠেছে। তার ফেসবুক স্ট্যাটাসের উল্লেখযোগ্য অংশ নিম্নে তুলে ধরা হলো-
আমার সংগঠন এর স্বার্থে পিন্টু আচার্যের সাথে আমার খুব ভাল সম্পর্ক। হঠাৎ একদিন আমায় ম্যাসেঞ্জারে ফোন দিয়ে রিপন রূপা দিদি আমায় বলতেছে দাদা ভাই আপনার সাথে দুটো কথা বলব অনুমতি দিলে দাদাভাই, আমি বললাম দিদি বলুন আপনি রিপন রূপা দাশ দিদি আমাকে যে লাইক কমেন্ট করুন। দিদি বল্লো হ্যা দাদা…
আমার ভাইকে বিদেশ পাঠিয়েছিলাম এমনই বলেছিলো মনে হয়, আমি পিন্টু দাদার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলাম লাভের উপর আপনার সাথে তো পিন্টু দাদার ভাল সম্পর্ক একটু সময় নিয়ে দিবেন দাদা ভাই। আমি বলছি টাকা যে নিয়েছেন আপনার স্বামী জানে? উনি বলছে না দাদা ভাই স্বামী জানে না। আমি বললাম এইসব ব্যাপারে আমি কথা বলতে পারবো না, আপনি কেমন শিক্ষিকা আপনার স্বামীকে না জানিয়ে ৫ লক্ষ টাকা সুদে নিয়েছেন?
আমার এক ছোট ভাই বলে পিন্টু দাদার সাথে চলুন যখন একটু কইয়া দিলাইন আমি কই এইসব ভেজালে যাওয়া ঠিক না। পিন্টু দাদার দোকানে আড্ডা দেই হঠাৎ রিপন রূপা দাশ হাজির পিন্টু আচার্য সাথে খুব কথাবার্তা চলছে বুঝা যায় আপন ভাই বোন। আমি পিন্টু দাদারে বললাম দিদি সহজ সরল মানুষ একটু সময় দিন তখন পিন্টু দা বলতেছে আমি অন্য জায়গা থেকে টাকা এনে দিয়েছি আমি লাভ মাসে মাসে পকেট থেকে দিয়ে যাইতাছি, তখন আমি বললাম মানুষ সুদের বেড়াজালে পড়লে দিশাহারা হয়ে যায় আর জামাইকে জিজ্ঞেস না করে টাকা দিলেন কেনো?
টাকা যখন অন্যের কাছ থেকে নিয়েই দিছেন বা আপনি দিয়েছেন সেটা আমার দেইখা লাভ নাই বিপদে পড়ছে একটু হ্যাল্প করুন তোমার সাথে ভাল সম্পর্ক এইজন্য আমাকে অনুরোধ করতেছে তখন আমার প্রবাসী বন্ধু বসা তারাও বলছে ভদ্র মহিলা শিক্ষিকা মহিলাকে হ্যাল্প করুন সময় দিন।
আমি দুবাই গেলাম একদিন বুল্লা ইউপি চেয়ারম্যান খোকন ঘোষের ফোন আমি ধরলাম। কয় দাদা আপনারে আমরা জ্বালাই মাঝে মধ্যে আমার এক বইন না বউদি কইছে যে রিপন রূপা দাস মনে হয় আপনারে ধইরা পিন্টু মামার কাছ থেকে তারিখ নিছে আমি কই ভাই আমারে এইসব মাতে মাতাইওনা ভাই বয়লা মাত কয় দাদা একটু দেখুন এরপর দুবাই যাওয়ার আগে নাকি পরে জানি অভিজিৎ দাদারে ফোন দিয়েছে সময় নেওয়ার জন্য। অভিজিৎ দা কয় এই মহিলাটা কে আমারে ফোন দিলো দিয়া কইলো পিন্টু দাদার ভাইর থেকে সময় লইয়া দিতাম বিপ্লব দাদা ভাইকে আর কইতাম না উনি রাগ করে ফোন দিলে।
অভিজিৎ দাদা আর আমি আবার সময় নিয়ে দেই পিন্টু দাদার কাছ থেকে তখন বলছে বিপ্লব দাদা আমার জন্য ভগবান হয়ে আসছেন অভিজিৎ দাদা ভগবান আমি আবার কইছি দাদারে বুঝাইয়া সুদি থেকে মুক্তি লন দিদি। ফাকে একদিন অনেক দুঃখ কইছে উনার জামাই এক টাকাও উনার ঋণ দিবে না। আমি বললাম টাকা দিয়ে কি করছেন দিদি আমায় বলছে ভাইকে লন্ডন নাকি আমেরিকা পাঠিয়েছে। আমি জানি না আমার নাম অভিজিৎ দাদার নাম কেরে দিয়া গেলে বইন। আমি তো বইন ভাল কইরা চেয়ারা হই চিনিনা তোর। অপরাধী না প্রমাণ হবে প্রশাসনকে বলবো ম্যাসেঞ্জার চ্যাক করতে আমার সাথে অভিজিৎ দাদার সাথে কি কথা হয়েছে রিকভার করবেন।
এই মহিলার সাথে ম্যাসেঞ্জারে দুই চারদিন আলাপ আর এক দুইদিন দেখা। ভাল করে চিনিওনা তবে খুব বেশি কথা বলে এইজন্য ফোন ধরতাম না, খুব বিরক্ত লাগত আমার।