সার্জন ও যন্ত্রপাতি সংকট
এস কে কাওছার আহমেদ, আজমিরীগঞ্জ থেকে ॥ হাওড় ও ভাটি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত আজমিরীগঞ্জ উপজেলা। ১টি পৌরসভা ও ৫টি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য সেবার প্রধান অবলম্বন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু দীর্ঘ ৬ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে সিজার কার্যক্রম। কয়েক বছর ধরে রয়েছে গাইনি চিকিৎসক পদ শুন্য। গাইনি ও প্রসূতি ডাক্তার না থাকায় জরুরি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আজমিরীগঞ্জের প্রসূতি মায়েরা। আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় রূপান্তর করা হলেও গাইনি ডাক্তারের অভাব রয়েছে। গাইনি ও প্রসূতি ডাক্তার ছাড়াই চলছে গাইনি বিভাগের কার্যক্রম। চিকিৎসক না থাকায় বছরের পর বছর ধরে সিজার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন প্রসূতি মায়েরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারি সেবা থাকলেও সিজারের কোনো ব্যবস্থা নেই। অনেক সময় উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে জরুরি প্রসূতি রোগীরা আসলে যাতায়াত দুর্ভোগের কারণে অবস্থা আরও খারাপ আকার ধারণ করে। খারাপ অবস্থায় অনেক সময় জরুরি ভিত্তিতে সিজার করার সিদ্ধান্ত দেন দায়িত্বরত ডাক্তারগণ। এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসূতি ও সার্জারী বিশেষজ্ঞ না থাকায় নষ্ট হচ্ছে সিজারের যন্ত্রপাতি। সিজার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতাল ও প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে সেবা নিতে হয় প্রসূতি রোগীদের।
জানা যায়, ২০১৫ সালের শেষের দিকে এক জুনিয়র কনসালটেন্ট আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনি চিকিৎসক হিসাবে যোগদান করেন। ২০১৮ সালের শুরুতেই তিনি বদলি হন। ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ সিজার করানো হয় আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এরপর থেকে বন্ধ রয়েছে সিজার কার্যক্রম। আড়াই লাখ মানুষের একমাত্র স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের জায়গা আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। আড়াই লাখ মানুষের সেবার জন্য ১৪ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও দায়িত্বরত আছেন ১১ জন। সার্জনের পাশাপাশি অ্যানেস্থেসিয়া ও ওটি বয়ের সংকটের কারণেই বন্ধ রয়েছে সিজার কার্যক্রম বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কয়েকজন সিনিয়র নার্স থাকায় প্রসূতি মায়েরা নরমাল ডেলিভারি সেবা পেয়ে থাকেন। প্রায়ই প্রসূতি রোগীদের সামান্য জটিলতা দেখা দিলে রেফার করা হয় হবিগঞ্জ।
দৈনিক হবিগঞ্জের মূখ পত্রিকার আজমিরীগঞ্জ প্রতিনিধির সাথে কথা হলে আলামিন মিয়া নামে একজন জানান- কিছুদিন পূর্বে তার স্ত্রীকে প্রাইভেট চেম্বারে ডাক্তার দেখানো হলে ডাক্তার সিজার করার সিদ্ধান্ত দেন। স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ১৬ হাজার ৫০০ টাকায় সিজার করানো হয়। সিজারের পর ৪ হাজার টাকার ঔষধ সেবনের জন্য একটি প্রেসক্রিপশন দেন ক্লিনিকের ডাক্তার।
আলামিন মিয়া আরো জানান- আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় হুমকির মুখে পড়তে হয় রোগীদের। জরুরি ভিত্তিতে সিজারের জন্য নিয়ে যেতে হয় জেলা সদর বা প্রাইভেট হাসপাতালে।
এ বিষয়ে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মো. ইকবাল হোসেন এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন- ডাক্তার সংকটের পাশাপাশি সিজারের কিছু সরঞ্জামও সংকট রয়েছে। আমরা এর ব্যবস্থা খুব শিগগিরই নেব। গাইনী সার্জন চিকিৎসক, ওটি বয় ও সরঞ্জামের চাহিদা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।
সিজার করতে সরকারি কত টাকা খরচ হতে পারে জানতে চাইলে তিনি জানান- সরকারি ফি বাবদ ২ হাজার টাকার মতো খরচ হয় এবং যতদিন রোগী ভর্তি থাকবে প্রতিদিন কেবিন ভাড়া ২০০ টাকা ফি দিতে হয়। খুব দ্রুত সিজার কার্যক্রম চালু হবে বলে তিনি আশাবাদী।