চুনারুঘাট থানায় প্রবাসী স্ত্রীর অভিযোগ ॥ সিএমএম কোর্টে ইতালি প্রবাসী শোয়াইবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইতালিতে স্ত্রী ও ৩ সন্তান রেখে প্রবাসী স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই ২০ বছরের এক তরুণীকে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন চুনারুঘাটের ইতালি প্রবাসী শোয়াইব হক চৌধুরী। গত ২০ ডিসেম্বর তার বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলেও ২ জানুয়ারি বিষয়টি জানাজানি হয়। ইতালী প্রবাসী শোয়াইব হক চৌধুরী (৩৮) চুনারুঘাট উপজেলার ৭নং উবাহাটা ইউনিয়নের উবাহাটা গ্রামের পঞ্চায়েত বাড়ির মৃত এমদাদুল হক চৌধুরীর পুত্র। মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করে শোয়েব চৌধুরীর প্রথম স্ত্রী মেহজাবিন মুনীরা জানান, দীর্ঘ ৯ বছর সংসার করার পর মাঝ বয়সে এসে উবাহাটা কুদ্রতিয়া দাখিল মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষক ও রানিগাও ইউনিয়নের চাটপাড়া গ্রামের আব্দুর রউফ এর বড় মেয়ে চাটপাড়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার ফাজিল পড়–য়া ছাত্রী আফিফাকে নগদ ৪ লাখ টাকা দেনমোহরানায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও দুই পরিবারের লোকজনের উপস্থিতিতে বিবাহ করেছেন তার স্বামী। অপরদিকে প্রথম স্ত্রী মেহজাবিন মুনীরা ৩ সন্তান নিয়ে ইতালিতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
অভিযোগে জানা যায়, ২০১৪ সালের পহেলা জানুয়ারি রাজধানী ঢাকার ডেমরা ডগাইর হিজলতলার বাসিন্দা মৃত আব্দুল হাকিমের মেয়েকে পারিবারিকভাবে ৩ লাখ টাকা দেনমোহরানায় বিয়ে করেন শোয়াইব হক চৌধুরী। মেহজাবিন মুনীরার ভাই কামরুজ্জামান মাসুম জানান, বিয়ের সময় শোয়াইব হক চৌধুরীকে নগদ টাকা ও কয়েক লাখ টাকার ফার্নিচারসহ আসবাবপত্র দেন তারা। ওই সময় সুখেই সংসার চলছিল তাদের। দাম্পত্য জীবনে মুসআব (৯) মাশকুরা (৫) ও মুয়াফা (২) নামে তাদের ৩টি সন্তান রয়েছে। বিয়ের শুরু থেকেই শারীরিক নির্যাতন করেছে শোয়াইবের পরিবারের সদস্যরা। তার বোনের উপর শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে তারা। সেই সময়ে আমার বোন তার স্বামীর কাছ থেকে কোনো মানসিক সাপোর্ট পায়নি। ২০১৬ সালে হবিগঞ্জের জনৈক নারীর সাথে পরকিয়ায় ধরা খাওয়ার পর মুনিরা ইতালির গণ্যমান্যদের জানায়। পরে শোয়েব মুনীরাকে ২০১৭ সালে অনেকটা তার পরিবারের অমতে ইতালী নিয়ে যান। পরবর্তীতে ২০২২ সালের শুরুর দিক পর্যন্ত পরিবারের প্রতি তার যথেষ্ট উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয়। মূল সমস্যা সামনে আসে ২০২২ এর এপ্রিল মাস থেকে। খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে তিনটি মেয়েলি ঘটনায় শোয়াইব চৌধুরী ধরা পড়ে। যখন সে জানতে পারে যে তার অতীত সম্পর্কেও আমরা জেনে গিয়েছি তখন থেকে আমার বোনের প্রতি তার এক ধরনের অনাকর্ষণ সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন সময়ে কথায় কথায় বেশি বারাবারি করলে আমার বোনকে তালাক দিয়ে দিবে এই জাতীয় হুমকি ধামকি দিতে থাকে শোয়াইব। একপর্যায়ে তাকে হত্যার হুমকি প্রদান করে। আমার বোন তার এই ধরনের হুমকি ধামকিকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। কারণ সে ভেবেছিলো যে তার স্বামী মানসিকভাবে অসুস্থ থাকার কারণে এমন আচরণ করছেন। হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এর মধ্যে তার স্বামী যে, তাদেরকে বিপদে ফেলে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছিলেন তা আমার বোন বুঝতে পারেনি। এরপর বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, শোয়েবের একাধিক মেয়ের সাথে সম্পর্ক রয়েছে এবং তাদের মধ্যে কোনো একটি মেয়েকে বিয়ে করার পরিকল্পনা করছে এবং তার আগেই আমার বোন ও তাদের সন্তানদের কাছ থেকে সে পৃথক হয়ে যাবার উপায় খুঁজছিলো। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন কথা বলে আমার বোনকে বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে প্ররোচনা দেয়। এক কথায় সব সময় আমার বোনকে মানুষিক ও শারীরিক নির্যাতন করতো শোয়াইব। ইদানীং শোয়াইব ও তার লোকজন আমাদের পরিবারকে হুমকি দিয়ে আসছে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। নির্যাতনের শিকার মেহজাবিন মুনীরা বলেন, ব্যবসা করার অযুহাতে মোটা অংকের যৌতুক দাবী করে শোয়াইব। সন্তানদের ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করে আমার জমানো ও ভাইর কাছে অনুরোধ করে স্বামী শোয়াইবকে ১ম ধাপে ২১ লক্ষ টাকা এবং ২য় ধাপে ১৪ লক্ষ টাকা দেই। কিন্তু শোয়াইব ওই টাকা ব্যবসায় ব্যয় না করে তার পরিবারকে দিয়ে দেয়। পুনরায় টাকার জন্য নির্যাতন শুরু করে শোয়াইব। বিষয়টি মিমাংসা হলে স্বামী সন্তানদের সুখের আশায় তাকে পুনরায় টাকা দেয়া হয়। ইদানীং দেশে মার্কেট করবে বলে ২০ লাখ টাকা দাবী করে। আমাকে এ টাকা মেনেজ করতে হবে এ কথা জানিয়ে দেন শাশুড়িও। এ কথা বলার পর আমি বলেছি, বারবার আমার আমি ও আমার পরিবার কোথায় থেকে এত টাকা দেবেন। এমন কথা বলার পর তারা বলেন, আমি মুখের ওপর কথা বলি। পরে গালমন্দ করে আমাকে এ সংসারে রাখবেনা বলে হুমকি দেয় তার পরিবার। কোন উপায়ন্তর না পেয়ে আমি তাকে টাকা পুনরায় টাকা দেই। টাকা নেবার কিছুদিন পর থেকেই সে আমাকে অবহেলা করে এবং পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এমনকি ইতালিতে শিশু যৌন নির্যাতন করে সামাজিকভাবে চরম হেনস্থার শিকার হয়। আমি আমার মান-সম্মান ও তিন ছেলে মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সব কিছু নিরবে সহ্য করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু শোয়াইব তার পরিবারের প্ররোচনায় ২০২২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আমার স্বামী আমার অজান্তে তার ইতালিস্থ দোকানপাট বিক্রি করে আমি ও বাচ্চাদেরসহ সকল টাকা-পয়সা নিয়ে দেশে চলে আসে। বাংলাদেশের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে আমার স্বামী প্রসাব করার নাম করে আমাকে ও বাচ্চাদের এয়ারপোর্টে ফেলে সুকৌশলে পালিয়ে তার বাড়ী উবাহাটা চলে যায়। তৎক্ষণাৎ আমি নিজের উদ্যোগে আমার শশুর বাড়ি পৌঁছালে বাচ্চাসহ আমাকে ধস্তাধ্বস্তি, গালিগালাজ ও মারধর করে আমার পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দেয়। এর মধ্যে আমার ১৪ মাস বয়সী কন্যা শিশু গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে ইতালিস্থ পারিবারিক ডাক্তারের পরামর্শে জরুরি ভিত্তিতে ২১ সেপ্টেম্বর ইতালি ফেরত এসে বাচ্চাকে জরুরি বিভাগে ভর্তি করি। পরবর্তীতে আমি আমার স্বামীর সাথে বারবার যোগাযোগ করে ব্যর্থ হই। বর্তমানে আমার স্বামী আমার ও সন্তানদের কোন খোজখবর নিচ্ছেনা। আমার পৈত্রিক সম্পত্তির জমানো ৩৫ হাজার ইউরো নিয়ে দেশে পালিয়ে আসে। আমার পাওনা টাকা দিচ্ছেনা এমনকি বাচ্চাদের ও আমার খোরপোশ দিচ্ছেনা। মেহজাবিন আরও জানান, তার ৩ সন্তানের ইতালি সরকার প্রদত্ত ভাতা সে নিজে খরচ করে যাচ্ছে। বর্তমানে আমি ইতালিতে অসুস্থ মেয়ে সহ তিন সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। অপরদিকে সে এক তরুণীকে বিয়ে করে আমোদফুর্তি করছে। বর কনের নিকটাত্মীয়রা জানান, পূর্বের স্ত্রীকে তালাক দিয়ে এক তরুণীকে বিয়ে করেছে শোয়াইব তা মোটেও কাম্য নয়।
এ বিষয়ে চুনারুঘাট থানার উপপরিদর্শক এসআই অজিত কুমার তালুকদার জানান, শোয়াইব হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ আমার কাছে রয়েছে। এছাড়া শোয়াইব হক চৌধুরী তার স্ত্রী ৩ সন্তান রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে বলে জানতে পেরেছি। এদিকে শোয়াইব হক চৌধুরী প্রবাসী স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন দাবী করলেও প্রবাসী স্ত্রী মেহজাবিন মুনীরার দাবী প্রতারণা করে তালাক দিয়েছেন এবং সেটি আইনসম্মত নয় বলে দাবী করেন এবং তার ভাই প্রতারণার দায়ে ঢাকা সিএমএম কোর্টে শোয়াইব হক চৌধুরী, হবিগঞ্জের লাখাইর বুল্লা ইউনিয়নের নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার কাজী মাওলানা রুখন উদ্দিন খান ও দেবর মো: রাকিব হক চৌধুরীসহ ৫জনের নামে মামলা দায়ের করেন। মামলার বিচারক অভিযোগ আমলে নিয়ে ঢাকা পিবিআইকে তদন্তের আদেশ দেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। এ বিষয়ে রানিগাও ইউনিয়নের নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার কাজী আবুল খায়ের বিয়ের তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ইতালী প্রবাসী শোয়াইব হক চৌধুরীর পূর্বের বিয়ে আমার জানা নেই। যদি স্ত্রী সন্তান থাকে তাহলে আমার কাছে স্ত্রী সন্তানের তথ্য গোপন করে প্রতারণা করেছে।