ফিরে দেখা ২০২৩
আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট থেকে ॥ বিদায় নিচ্ছে ২০২৩ সাল। নানা ঘটনার জন্মদিয়ে বছর জুড়েই আলোচনায় ছিল হবিগঞ্জের চুনারুঘাট। স্ত্রী সন্তান হত্যার মতো একাধিক ঘটনা, একই স্থানে বার বার দুর্ঘটনায় একাধিক ব্যক্তির মৃত্যু, কিশোর গ্যাং এর হাতে খুন, চেতনা নাশক স্প্রে করে বাসায় চুরি, আলোচিত হিরো আলমকে গাড়ি উপহার দেয়াসহ বিভিন্ন ঘটনায় দেশে বিদেশে আলোচিত ছিল চুনারুঘাট।
২০২৩ সালে বছরের শুরতেই দেশের আলোচিত ইউটিওবার হিরো আলমকে নিজের নোহা গাড়ি উপহার দিয়ে আলোচনায় আসেন চুনারুঘাটের মাওলানা মুখলেছুর রহমান। নানা আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি হিরো আলমকে নিজের ফিটনেস ও কাগজপত্র ডেটফেল অবস্থায় গাড়ি উপহার দেন মুখলেছুর রহমান। গাড়ি নিতে এসে হিরো আলমকে জরিমানা দেয়া এবং গাড়ি এম্বুলেন্স তৈরীর ঘোষণাও ছিল বেশ আলোচিত। যদিও গাড়ির কাগজপত্র তৈরীতে সাড়ে ৪ লাখ টাকারও বেশি লেগেছে হিরো আলমের। ২৩ মার্চ উপজেলার আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের গাদিশাল গ্রামের সরজুল হক প্রথমে তার স্ত্রী জেসমিন আক্তার এবং পরে তার ১০ বছরের সন্তান ইয়াসমিনকে কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর সে তার ৪ বছরের অপর সন্তানকে হত্যার জন্য রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। যদিও সে বেঁচে যায়। পরে সে নিজেই গাছের সাথে ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় দেশ বিদেশে নানা আলোচনার জন্ম দেয়। এখনো জানা যায়নি, কেন সে তার স্ত্রী সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছে। সরজুলের ছোট ছোট অপর তিন সন্তানকে দেশ বিদেশ থেকে নানা সহায়তা প্রদান করা হয়। ৮ এপ্রিল উপজেলার ছনখলা গ্রামে এক গৃহবধূকে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে গ্রাম্য মাতব্বররা বেত্রাঘাত করে। আলোচিত এ ঘটনায় পুলিশ ৫ মাতব্বরকে আটক করে জেল হাজতে পাঠায়। জুলাই ও আগস্ট মাস জুড়েই উপজেলার পৌর এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়িতে চেতনানাশক স্প্রে করে চুরির একাধিক ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত হয় ১০/১২ জন। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো উপজেলায়। মানুষ রাত জেগে পাহারা দিয়েছিল নিজের বাসা-বাড়ি। পরে সারা জেলায় সাড়াশি অভিযানে স্বস্তি আসে। ২৬ আগস্ট ঘটে আরেক আলোচিত হত্যাকান্ড। ঐদিন সন্ধ্যায় উপজেলার সোনাচং বাজার এলাকায় স্বামী সুজন মিয়া তার স্ত্রী আকলিমা খাতুনকে হাত পা কেটে হত্যা করে। ঘটনার পর পরই পুলিশ এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ঘাতক স্বামী সুজনকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। এতে তার ৭টি সন্তান অসহায় হয়ে পড়ে। আলোচিত এ ঘটনায়ও দেশ বিদেশের মানবিক মানুষজন তাদের পাশে দাঁড়ায়। ৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় উপজেলার শায়েস্তাগঞ্জ-চুনারুঘাট সড়কের চানভাঙ্গা তেমনিয়া এলাকায় ট্রাক, ভ্যান ও অটোরিক্সার ত্রিমুখী সংঘর্ষে ৪টি তাজা প্রাণ ঝড়ে। সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচিত এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ১৪ সেপ্টেম্বর একই স্থানে আবারও পিকআপ ভ্যান ও অটোটেম্পুর সংঘর্ষে আরো ৩ জন মারা যায়। ২১ নভেম্বর মা মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে ২ জনের যাবজ্জীবন সাজা, ২৬ অক্টোবর উপজেলার সাদেকপুর গ্রামের এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগে আদালতের দেয়া ৫ জনের ফাঁসির আদেশ ছিল বেশ আলোচনায়। এ ঘটনায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত হোছনা বেগম তার ১০ মাসের শিশুকে নিয়ে এখনো কারাগারে রয়েছে। এনিয়ে চলতি মাসে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ থেকে একটি রুল জারি করে। এতে মায়ের সাথে দুধের শিশু কি অবস্থায় আছে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বছরের শেষে এসে নতুন করে আলোচনায় আসে সাবেক স্বামীর খোঁজে পাকিস্থানী নারীর বাংলাদেশে আসা। ওই নারী চুনারুঘাট পৌর এলাকার মৃত সফিউল্লাহ মজুমদারের ছেলে সাজ্জাম মজুমদারকে ১০ বছর আগে পাকিস্থানে বিয়ে করেছিলেন। তিনি চলতি বছরের ৮ ডিসেম্বর চুনারুঘাটে স্বামীর খোঁজে আসেন এবং মারধোরের শিকার হন। পরে তিনি হবিগঞ্জ আদালত, চুনারুঘাট থানায় ৩টি পৃথক মামলা দায়ের করেন। তিনি সাজ্জাদকে স্বামী দাবি করলেও সাজ্জাদ তাকে তালাক দিয়েছে বলে জানায়।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com