সৈয়দ আখলাক উদ্দিন মনসুর, শায়েস্তাগঞ্জ থেকে ॥ বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসে এক করুণ অধ্যায় বধ্যভূমি আর গণহত্যার ইতিহাস। সারাদেশের অনেক জায়গার মতো হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনের দাউনগর বাজার রেলগেইট এলাকায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর গণহত্যার দলিল বধ্যভূমিটি এখনও অরক্ষিত।
জানা যায়, ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর গণহত্যার এক শোকাবহ স্মৃতিচিহ্ন অঙ্কিত হয়ে আছে এই বধ্যভূমিতে। ওই স্থানে পাকিস্থানী সেনারা লালচান চা বাগানসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধাসহ ১১ জনকে ধরে এনে এই স্থানে হত্যা করে গণকবর দেয়। যাদের হত্যা করা হয় তারা হলেন- অনু মিয়া, শ্রীকৃষ্ণ আউরি, জয়াজ কুমার, শ্রীবভাবরা বাউরি, শুনিলা বাউরি, নেপু বাউরি, লাল সাধু বাউরি, রাজেন্দ্র রায়, গফুর রায়, মহাদেব বাউরি ও দিপক বাউরি। এর মধ্যে একজন ছিলেন মুসলমান। তাদেরকে যথাযোগ্য সম্মান দেয়া বাঙালি জাতির দায়িত্ব ও কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। সে বিবেচনায় শায়েস্তাগঞ্জের এই বধ্যভূমি উপযুক্ত মর্যাদা ও সম্মান পাওয়া থেকে অনেকাংশেই বঞ্চিত রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শায়েস্তাগঞ্জ বধ্যভূমি রেল লাইন সংলগ্ন হওয়ায় রেল লাইন অতিক্রম ব্যতীত সেখানে যাওয়ার সহজ কোনো রাস্তা নেই। শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় শায়েস্তাগঞ্জ-হবিগঞ্জ সড়ক থেকে বধ্যভূমিতে যাতায়াতের সুবিধার্থে একটি পাকা সড়ক নির্মাণ করা হলেও ওই সড়কটি এখন সিএনজি অটোরিকশার দখলে। বধ্যভূমি সংরক্ষণের জন্য একজন মুক্তিযোদ্ধা তার নিজস্ব অর্থায়নে ভবন নির্মাণ করে দিয়েছেন। কিন্তু বধ্যভূমিতে গড়ে ওঠেনি কোনো স্মৃতিস্তম্ভ। শুধুমাত্র একটি সাইনবোর্ড বসানো রয়েছে। যার লেখাও অনেকটা মুছে গেছে। ভালো করে না দেখলে কেউ বুঝতেই পারবে না এটি বধ্যভূমির সাইনবোর্ড। আর কয়েকটি পাকা পিলার দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও এখনো অযতœ আর অবহেলায় পড়ে আছে বধ্যভূমিটি। রক্ষণাবেক্ষণ কার্যালয়ের সামনে ১১ জনের নাম সংবলিত একটি ফলক থাকলেও তা মুছে যাওয়ার উপক্রম।
এ ব্যাপারে আলাপকালে বধ্যভূমি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সাবেক আহ্বায়ক শিপন মিয়া জানান, তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুস ছাত্তার বধ্যভূমির পাশে নিজের অর্থায়নে একটি মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয় ভবন নির্মাণ করেন। বর্তমানে তিনি বধ্যভূমির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এ ব্যাপারে শায়েস্তগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী গোলাম মর্তুজা এ প্রতিনিধিকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে এ বধ্যভূমি স্বীকৃতি পেয়েছে এবং গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বর্তমানে পৌর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ওই বধ্যভূমি রক্ষণাবেক্ষণ করছে। অন্যদিকে এই বধ্যভূমির পবিত্রতা রক্ষার বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে রক্ষণাবেক্ষণ কর্তৃপক্ষ পাকা পিলার দিয়ে বধ্যভূমির সীমানা চিহ্নিত করে ঘিরে দিয়েছেন। এতে বধ্যভূমির সীমানা চিহ্নিত হলেও এর পবিত্রতা ও মর্যাদা রক্ষা নিশ্চিত হয়নি এখনো।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com