উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকসহ ১০ জন আহত

এম, এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ থেকে ॥ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলকে স্বাগত জানানোর মিছিলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় শহরজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সংঘর্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সিদ্দিকসহ ১০ জন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নবীগঞ্জ শহরে নতুন বাজার এলাকায় কয়েক দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়- বুধবার রাতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন উদ্যোগে মিছিল বের করা হয়। নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে সাধারণ সম্পাদক গতি গোবিন্দ দাশ, সাইফুল জাহান চৌধুরীসহ নেতৃবৃন্দ মিছিল ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওইসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সিদ্দিক ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক লোকমান খানসহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী মিছিল ও পথসভায় যোগ দেন। পথসভা শেষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সিদ্দিক তাদেরকে নামাজে রেখে কেন মিছিল শুরু করা হলো এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদ সাধারণ সম্পাদক গতি গোবিন্দ দাশের কাছে জানতে চান। এসময় উক্ত বিষয় নিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজু ও পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইউপি সদস্য বাবলু আহমদের মধ্যে বাকবিত-া হয়। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা মীমাংসা করার জন্য বৃহস্পতিবার সকালে নবীগঞ্জ শহরের শেরপুর রোডস্থ আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল মালিক মিয়ার অফিসে সালিশ বৈঠকে বসেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। এসময় জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজু ও বাবলু আহমদের বিরোধটি মীমাংসা করে দেওয়া হলে ঘটনার শেষ পর্যায়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ মিলুর মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সিদ্দিক (৫৫), পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাবলু মিয়া (৩০), সঞ্জয় দাস (৪০), মিঠু শীল (৩০), সৌরভ তালুকদার (২৫), আনহার আহমদ (৩৫), জিজু মিয়া (৩০), জায়েদ মিয়া (৩২) সহ উভয়ের পক্ষের ১০ জন আহত হন। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ শহরে অবস্থান নেয়। পরে বাহুবল-নবীগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল খয়ের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এদিকে শহরজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী বলেন- রাতের বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ বসেন। বিষয়টি মীমাংসাও হয়ে যায়, আমার সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে মোস্তাক আহমেদ মিলু উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করে মিলু পিস্তল বের করে আমার দিকে তাক করে। এ ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ মিলু বলেন- গত বুধবার রাতের ঘটনা মীমাংসার জন্য বসলে সিনিয়র নেতা হিসেবে সিদ্দিক ভাইয়ের সঙ্গে সাজুকে মিলার জন্য বলি, এ সময় সাইফুল জাহান চৌধুরী উশৃঙ্খল কথা বার্তা বলেন এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পিস্তল প্রসঙ্গে বলেন- সাইফুল-সাজুর সঙ্গে তো আমার সঙ্গে কোনো ঝামেলা নেই, আমি কেন পিস্তল বের করবো। পিস্তলের বিষয়টি সঠিক নয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদ বলেন- বুধবার রাতের ঘটনাটি জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশনায় আমিসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বসে সমাধান করে দেই, কিন্তু এক পর্যায়ে আমাকে অমান্য করে কিছু নেতা তর্কে জড়িয়ে পড়েন, এরপর ঝামেলার সৃষ্টি হয়। মোস্তাক আহমেদ মিলুর পিস্তল বের করার বিষয়ে তিনি বলেন- আমি শুনেছি মিলু পিস্তল বের করেছে তবে দেখিনি।
এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ থানার ওসি মো. মাসুক আলী বলেন- বুধবার রাতে তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ একটি মিছিল বের করে, মিছিলে একটি পক্ষকে রেখে অপর পক্ষ মিছিল করায় বাকবিত-া হয় ও উত্তেজনা ছড়ায়। বৃহস্পতিবার সকালে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বিষয়টি মীমাংসার জন্য বসেন পরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ নেতার পিস্তল বের করার বিষয়টি আমার জানা নেই। বতর্মানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাহুবল-নবীগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল খয়ের বলেন- আমি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে উভয়পক্ষকে নিয়ে সমাধানের জন্য চেষ্টা করছি, বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি বলেন- পিস্তল বের করার বিষয়টি আমার জানা নেই।
সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম, বাহুবল-নবীগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল খয়ের, ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গতি গোবিন্দ দাশ, নবীগঞ্জ থানার ওসি মোঃ মাসুক আলী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান এমদাদুর রহমান মুকুল, সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য মোঃ আব্দুল মালিক, করগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান নির্মলেন্দু দাশ রানা, পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র এবং উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জায়েদ চৌধুরীসহ স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ বৈঠকে বসে হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির এমপিকে নিয়ে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়।