পাঠকের কলাম
আক্তার হোসেন আলহাদী
নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ ভালো নেই। নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে, সব স্তরের মানুষ ভোগান্তিতে পড়লেও সীমিত আয়ের মানুষের জন্য তা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। জীবনযাত্রার ব্যয় সংকুলান করার কোনো পথ তারা খুঁজে না পেয়ে মধ্যবিত্তরা বেশি দিশেহারা। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে আকাশ ছুঁয়েছে, তাতে সৎ উপার্জনকারীদের সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে। চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা, ময়দা, পিয়াজ, রসুনসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। মাছ-মাংসে তো হাত দেওয়ার উপায় নেই।
দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ খুবই অসহায়ত্বের মাঝে দিন কাটাচ্ছে, তারা না পারে নিম্নবিত্ত মানুষের সাথে মিলে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে, না পারে লাগামহীন দ্রব্যমূল্যে পরিস্থিতির আর্থিক ও মানসিক কষ্ট সহ্য করতে। আত্মসম্মানের ভয়ে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার নিরবে চোখের জল ফেলে খেয়ে না খেয়ে দিনপার করছে।
দ্রব্যমূল্যের লাগামহীনতার কারণে সীমিত আয়ের অনেকেই এখন সংসারের ব্যয় কাটছাঁটের চাপে পড়েছেন। কারণ ডিম, আলু, পাঙাশ মাছ, তেলাপিয়া, ব্রয়লার মুরগির মতো সবচেয়ে সস্তার খাবারগুলোও এখন উচ্চমূল্যে কিনতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদেরকে। অনেকে বলছেন, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে ‘আগুনে হাত পুড়ে’ যাওয়ার মতো অবস্থা দাঁড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য বাজার করা আর্থিক ও মানসিক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যাদের আলুভর্তা ও ডিম-ডাল দিয়ে কোনোভাবে দুবেলা চলত, তারাও এখন প্রায় নিরুপায়। বাড়তি দামের কারণে পুষ্টির চিন্তা দূরে থাক, ডাল-ভাত জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে। মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বেড়েই চলেছে, কিন্তু আয় বাড়ছে না। এমন পরিস্থিতিতে স্বল্প-আয়ের মানুষ নিত্যদিনের চাহিদায় কাটছাঁট করলেও তাদের হাঁসফাঁস অবস্থার নিরসন হচ্ছে না। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা যেভাবে অতিমুনাফার লোভে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন, তা সাধারণ মানুষের জন্য অভিশাপে পরিণত হয়েছে। সিন্ডিকেট চক্র নিম্ন ও মধ্যবিত্তের জীবনযাত্রাকেই ফেলে দিয়েছে হুমকির মুখে।
বাজার করতে আসা সাধারণ মানুষের সাথে কথা হলে তারা জানান, বাজারে পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দূরে থাক, তাদের খুঁজে বের করতেও দেখছি না আমরা। অসাধু পন্থায় যারা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না। সরকার কিছু দিন আগেও আলু, ডিম ও পেঁয়াজের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা তা মানছেন না। এখন প্রতিটি পিস ডিম ১৬-২০ টাকা, ডায়মন্ড আলু ৬০ টাকা, দেশি আলু ৭০ টাকা এবং পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০৫-১১০ টাকায়।
ব্যবসায়ী মোঃ জাহিদুল ইসলাম বলেন, এখন শীত মৌসুম শুরু হয়েছে আশা করি শাক-সবজি সহ বিভিন্ন তরি-তরকারির দাম সাধ্যের ভিতরে চলে আসবে। বর্তমানে টমেটো ১০০, শিম ৫০, মুলা ৫০, পিয়াজ ১১০, কাচামরিচ ১৫০, ধনে পাতা ১০০ টাকা দরে প্রতি কেজি বিক্রি করছি।
সীমিত আয়ের মানুষ সাধারণত ডিম পোল্ট্রি মুরগি, পাঙাশ, তেলাপিয়া ও আলুর ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল। কিন্তু এই সবকটি পণ্যই এখন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। সরজমিনে বানিয়াচং উপজেলা সদরের বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে ব্রয়লার মুরগি ১৬০-১৭০ টাকায়, তেলাপিয়া ২০০-২২০ টাকা, ব্রিগেট ১৭০-১৮০ টাকা, পাঙাশ মাছ দাম বেড়ে এখন ১৮০-১৯০ টাকার মধ্যে এসব মাছের দাম আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে। হাসের ডিম প্রতি হালি ৭৫-৮০ টাকা, ব্রয়লার লাল মুরগির ডিম প্রতি হালি ৬০-৬৫ টাকা। সবকিছুরই দাম বাড়ার কারণে দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের কোনো বিকল্প থাকে না, কষ্টের মধ্যেই চলতে হয়।