এক কাউন্সিলর পদপ্রার্থীকে নিয়ে ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক
স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ নবীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন। কে হচ্ছেন পৌরপিতা? তা নিয়ে চলছে শহরের সর্বত্র আলোচনা ও ভোটের হিসাব-নিকাশ। নবীগঞ্জ পৌরসভার ৫ম নির্বাচনে মেয়র পদে ৩ জন, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১২ ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৭ জন প্রার্থী মিলিয়ে মোট ৫২ প্রার্থীর মধ্যে আজ হচ্ছে ভোটযুদ্ধ। গতকাল শুক্রবার দিনব্যাপী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীগণ নিজেদের পক্ষে ভোটারদের টানতে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে পৌর এলাকার বিভিন্ন গ্রাম, মহল্লা, হোটেল, রেস্তোঁরা সহ বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনের মাঝে সর্বশেষ প্রচারণায় ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেছেন। কনকনে শীত উপেক্ষা করে প্রার্থীদের নির্ঘুম প্রচারণায় শহরে উৎসবমুখর ভোটের আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মেয়র পদে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী, বর্তমান মেয়র ছাবির আহমেদ চৌধুরী ধানের শীষ ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গোলাম রসুল চৌধুরী রাহেল নৌকা এবং একমাত্র স্বতস্ত্র প্রার্থী মাহবুবুল আলম সুমন জগ প্রতীক নিয়ে ত্রিমুখী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন।
নির্বাচনকে ঘিরে গোটা পৌরসভায় উৎসবমূখর পরিবেশ বিরাজ করলেও ৯নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ফজল আহমদ চৌধুরীকে নিয়ে ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দীর্ঘদিন যাবত তিনি পৌর যুবলীগের সভাপতি ও আহবায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ রয়েছে- রাজনৈতিক পদকে পুঁজি করে তিনি দীর্ঘদিন যাবত নবীগঞ্জ পৌরএলাকার হসপিটাল রোডসহ তিমিরপুর-জয়নগরে বেপরোয়াভাবে অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়েছেন। তার প্রায় ডজন খানেক টোকাই, মাদকসেবি তরুন ও যুবক-যুবতীর বাহিনী রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাদের নিয়ে তিনি অসামাজিক কার্যকলাপসহ নানাবিধ অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ২০১২ সনের ১৫ অক্টোবর নবীগঞ্জ শহরের ওসমানী রোডস্থ নাইস রেস্টুরেন্ট ও অজিদ ড্রাগ হাউজের সামনে দিনদুপুরে ফিল্মী সাইলে এক ব্যবসায়ীর নিকট থেকে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা ছিনতাই করেন যা জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে ফলাও করে প্রকাশিত হয়। ২০১১ সালের পৌর নির্বাচনে তিমিরপুর সেন্টারে একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর ১০০ ব্যালট সরিয়ে ফেলার ঘটনাও সংঘটিত হয়েছে, যার কারণে ঐ ওয়ার্ডে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই ব্যালট সরানোর ব্যাপারে কেউ কেউ ঐ গ্রুপের দিকে সন্দেহের ইশারা করেন। ঐ সন্ত্রাসী ও মাদকসেবি সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা ও হুমকি-ধমকি নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক ভোটার ভোটের দিন দাঙ্গা-হাঙ্গামার ব্যাপারে আশংকা ব্যক্ত করেন। তাই তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ৯নং ওয়ার্ডের সকল স্তরের ভোটারদের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।
নবীগঞ্জ পৌরসভায় মোট ৯টি ওয়ার্ডে নারী পুরুষ মিলে ১৮ হাজার ৮ শত ৭৭ জন ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে ১নং ওয়ার্ডের একমাত্র ভোট কেন্দ্র গন্ধা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট ভোটার ২ হাজার ৫৮ জন। এ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ জাকির হোসেন, সাবেক কাউন্সিলর মোঃ মিজানুর রহমান ও মোঃ আক্তার উজ্জামান চৌধুরী রুহেল। ভোটাদের ধারনা এই ওয়ার্ডে ত্রিমূখী লড়াই হবে। ২নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ৫ জন। তারা হলেন বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ সুন্দর আলী, আঃ ছোবহান, আকমল হোসেন আজাদ টিটু, এটি.এম রুবেল মিয়া ও মোঃ সাহেদুর রহমান। ভোটাদের ধারনা এই ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর সুন্দর আলী, আকমল হোসেন আজাদ টিটু এবং আঃ ছোবহানের মধ্যে ত্রিমূখী লড়াই হবে। এ ওয়ার্ডের একমাত্র ভোট কেন্দ্র হিরা মিয়া গার্লস হাই স্কুলে মোট ২ হাজার ১ শত ৯৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ৩নং ওয়ার্ডে প্রার্থী হচ্ছেন ৩ জন। তারা হলেন সাবেক কাউন্সিলর শাহ মোঃ রিজভী আহমেদ খালেদ, মোঃ অহি চৌধুরী ও মোঃ নানু মিয়া। এ ওয়ার্ডের ভোট কেন্দ্র নবীগঞ্জ জে.কে উচ্চ বিদ্যালয়ে মোট ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৩০ জন। এই ওয়ার্ডে ত্রিমূখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডে প্রার্থী হচ্ছেন ৪ জন। তারা হলেন বর্তমান মহিলা কাউন্সিলর ফারজানা মিলন পারুল, সাবেক মহিলা কাউন্সিলর জাকিয়া আক্তার লাকী, শামেলা বেগম ও মোছাঃ স্বপ্না বেগম।
৪নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী হচ্ছেন ৫ জন। তারা হলেন বর্তমান কাউন্সিলর প্রাণেশ চন্দ্র দেব, সাবেক কাউন্সিলর যুবরাজ গোপ এবং সমীরন দাশ। এই ওয়ার্ডে বর্তমান ও সাবেক কাউন্সিলরের দ্বিমূখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওয়ার্ডের গয়াহরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোটার হচ্ছেন ২ হাজার ২ শত ৬৬ জন।
৫নং ওয়ার্ডে মোট কাউন্সিলর প্রার্থী ৫জন। তারা হলেন, বর্তমান কাউন্সিলর এটিএম সালাম, মোঃ লুৎফুর রহমান, মোঃ আমির হোসেন, মোঃ সুহেলুজ্জামান লিপ্টন ও ইসমত আলী। এই ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ও মোঃ লুৎফুর রহমানের মধ্যে দ্বিমূখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওয়ার্ডের রাজাবাদ কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোটার হচ্ছেন ১ হাজার ৭ শত ৯৫ জন।
৬নং ওয়ার্ডে প্রার্থী হচ্ছেন ৫ জন। তারা হলেন বর্তমান কাউন্সিলর জায়েদ চৌধুরী, শেখ মোঃ আবুল কাশেম, আল আমিন চৌধুরী, মঈনুল ইসলাম চৌধুরী, মোঃ ইসলাম উদ্দিন চৌধুরী। এই ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ও শেখ আবুল কাশেম এবং আল আমীন চৌধুরী মধ্যে ত্রিমূখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওয়ার্ডের চরগাঁও শেখ আমিনা বিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোটার হচ্ছেন ১ হাজার ৭ শত ৮২ জন।
৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী হচ্ছেন ৫ জন, তারা হলেন বর্তমান মহিলা কাউন্সিলর মোছাঃ রুকেয়া বেগম, পূর্ণিমা রানী দাশ, মোছাঃ তৈয়মুন্নেছা, মোর্শেদা আক্তার নিতু ও রওশনারা বেগম।
৭নং ওয়ার্ডে প্রার্থী হচ্ছেন ৩ জন। তারা হলেন বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ কবির মিয়া, সাবেক কাউন্সিলর আলহাজ্ব রুহুল আমিন রফু ও ফখরুজ্জামান চৌধুরী বুলবুল। এই ওয়ার্ডে বর্তমান ও সাবেক কাউন্সিলরের দ্বিমূখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওয়ার্ডের নহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোটার হচ্ছেন ২ হাজার ২ শত ৫৮ জন। ৮নং ওয়ার্ডে প্রার্থী হচ্ছেন ৪ জন তারা হলেন বর্তমান কাউন্সিলর বাবুল চন্দ্র দাশ সাবেক কাউন্সিলর সন্তষ দাস, দিব্যেন্দু ধর দীপন ও ইঞ্জিনিয়ার আলমগীর হোসেন চৌধুরী। এই ওয়ার্ডে বর্তমান ও সাবেক কাউন্সিলরের দ্বিমূখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওয়ার্ডের শিবপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোটার হচ্ছেন ২ হাজার ১ শত ৪২ জন। ৯নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৬ প্রার্থী। তাদের মধ্যে বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ আলাউদ্দিন, শেখ শাহনূর আলম ছানু, মোঃ ফজল আহমদ চৌধুরী, শাহ ফজলুল করিম, শেখ জগলুল হাসান ও শাফি মিয়া তালুকদার। এই ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ আলাউদ্দিন, শেখ জগলুল হাসান ও মোঃ ফজল আহমদ চৌধুরীর মাঝে ত্রিমূখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওয়ার্ডের দুটি কেন্দ্র পূর্ব তিমিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জয়নগর পৌর আইডিয়াল স্কুলে মোট ভোটার হচ্ছেন ২ হাজার ২ শত ৫০ জন।
৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডে প্রার্থী হচ্ছেন ৩ জন, তারা হলেন বর্তমান মহিলা কাউন্সিলর সৈয়দা নাসিমা বেগম, মোছাঃ শেলী বেগম ও মোছাঃ রাজিয়া বেগম।
নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার দেবশ্রী দাস পার্লি জানান, একটি অবাধ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও উৎসবমূখর পরিবেশে নির্বাচন উপহার দিতে দিনরাত কর্তৃপক্ষ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা এবং সকল আইনশৃংখলা বাহিনীও মাঠে সোচ্চার ভুমিকা পালন করছে। পৌরসভায় ৯ জন নির্বাহী ম্যাজেস্ট্রেট, দশ সদস্য বিশিষ্ট দুইটি বিশেষ স্ট্রাইকিং ফোর্স, ৪ গাড়ি বিজিবি, ২ গাড়ি র্যাব, ১টি স্পেশাল টিম এবং প্রতিটি কেন্দ্রে ৯ জন আনসারসহ নিরাপত্তা বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। আলোচিত এক কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেয়র ও কাউন্সিলদের যে কোন জন নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘœ করার অপপ্রয়াস চালালে প্রার্থীতা বাতিল সহ জেল-জরিমানা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মহিউদ্দিন আহমদ জানান, নির্বাচনের সুন্দর ও উৎসবমুখর পরিবেশ নিশ্চিত করতে ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত করা হয়েছে। প্রয়োজনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃংখলা বাহিনীর পরিধি আরো বৃদ্ধি হতে পারে।