আগামী মাসে উন্মুক্ত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মানিক চৌধুরী পাঠাগার
আজ ২০ ডিসেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা সৈনিক মরহুম কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরীর ৮৭তম জন্মদিন। এই বীর মুুক্তিযোদ্ধার নিজস্ব জমির ওপর তাঁরই নামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে জাদুঘর ও পাঠাগার ভবন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের এক কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন ৩২৭টি স্মারক রয়েছে এই জাদুঘরে। এই জাদুঘর ভবনের নকশা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা স্থপতি নূরুল করিম দিলু। আগামী ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে হবিগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মানিক চৌধুরী পাঠাগার জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী হবিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৩ সালের ২০ ডিসেম্বর। ১৯৫২ সালে ¯œাতক শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় ভাষা আন্ধোলন সংগঠিত করতে যেয়ে কারাবন্দী হন। এরপর ঐতিহাসিক ছয় দফা সংগ্রামে তার বলিষ্ঠ ভুমিকা ছিল। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশ গ্রহন করে কারাভোগ করেন। ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে চুনারুঘাট-বাহুবল-শ্রীমঙ্গল আসন থেকে তখনকার জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ওয়্যারলেসে পাঠানো স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি তিনি পেলে শুরু করেন সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। তিনি তার নির্বাচনী এলাকার চা-শ্রমিকদের নিয়ে গঠন করেন বিশাল তীরন্দাজ বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধ শেষে স্বাধীন দেশে ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০১৮ সালের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ এই ভবণ নির্মাণ কাজের শুভ সূচনা শুরু করেন মরহুম কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরীর স্ত্রী বেগম রোকেয়া চৌধুরী। পাঁচ তলা বিশিষ্ট জাদুুঘর ও পাঠাগারের ভবন নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকবে কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী’র নামে একটি অত্যাধুনিক পাঠাগার। পাঠাগারে থাকবে দেশ বিদেশের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গসহ লেখকের সংগৃহীত বই। পাঠাগারটি ভ্রাম্যমান কার্যক্রমও চালাবে। এই পাঠাগারের মাধ্যমে হবিগঞ্জ জেলার গ্রামে-গঞ্জে গিয়ে শিশুদেরকে পাঠ-অভ্যাসে অভ্যস্ত করতে ভূমিকা পালন করবে। ভবনের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় থাকবে হবিগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। বাংলাদেশের সোনালী ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরবে জাদুঘর। মুক্তিযুদ্ধকালীন সংগৃহীত বিভিন্ন স্মারক ছাড়াও এ জাদুঘরে থাকবে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট ও সুনামগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন চিঠি, ব্যবহার্য দ্রব্যাদি ও তথ্যচিত্র। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে চা-বাগানের শ্রমিকদের তীরধনুক ও যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ এই জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে। এই জাদুঘর সম্পর্কে হবিগঞ্জ নিবাসী মুক্তিযোদ্ধা মর্তুজ আলী বলেন, হবিগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মানিক চৌধুরী পাঠাগার ইতিমধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রিয় প্রাঙ্গণে পরিণত হয়েছে। এখানে আসলে ১৯৭১ সালে সিলেটের মুক্তিযোদ্ধাদের মনে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধা রাজিয়া খাতুন বলেন, কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরীর মেয়ে ২০০৪ সাল থেকে তাঁর বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য বিভিন্ন বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি ও স্মারক সংগ্রহের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। সাবেক অধ্যক্ষ ও মানিক চৌধুরী পাঠাগারের সভাপতি ইকরামুল ওয়াদুদ বলেন, হবিগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও পাঠাগার সমাজের বিভিন্ন পেশা ও অন্যান্য কাজের স্বীকৃতি পাবেন। একই ছাদের নিচে প্রবীণ এবং নারীদের দেশ গড়ার কাজে সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে আমি মনে করি।
জমিদাতা ও প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধুর ওয়ারলেস যোগে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি আমার বাবা কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী দীর্ঘ ৯ মাস বুক পকেটে রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁিপয়ে পড়েছিলেন। মায়ের কাছে এই গল্প শুনে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসাবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। প্রেস বিজ্ঞপ্তি