লাইন নির্মাণে বিদ্যুত জ্বালানী ও খনিজ মন্ত্রীর কাছে বিমান প্রতিমন্ত্রীর ডিও লেটার
আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট থেকে ॥ বনবিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা বিদ্যুত সুবিধা ভোগ করলেও অভয়ারন্য আইনের অজুহাত দেখিয়ে বাধাঁ দিয়ে বিদ্যুত লাইন নির্মাণ বন্ধ রেখেছে বনবিভাগ। ফলে আদিবাসী সাড়ে ৩শ’ পরিবার বিদ্যুত সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার মুজিববর্ষে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনার কথা থাকলেও উপজেলার কালেঙ্গার ৬টি আদিবাসী পাড়ায় দুবছর ধরে বন্ধ রয়েছে বিদ্যুত লাইন নির্মাণ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়নে আদিবাসীদের জন্য মঙ্গোলিয়া বাড়িতে একটি মেডিকেল সেন্টার ও শিশু বিকাশ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুত না থাকায় সেটিও সচল করা যাচ্ছে না। ফলে আদিবাসীদের শিশুরা লেখাপড়া থেকে শুরু করে দৈনন্দিন সকল কাজে বিদ্যুত ব্যবহার করতে পারছে না।
এদিকে দ্রুত আদিবাসী পরিবারগুলোর মধ্যে বিদ্যুত সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী রবিবার বিদ্যুত, জ্বালানী ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে ডিও লেটার দিয়েছেন। এতে তিনি বন বিভাগের বাধাঁ দূর করে দ্রুত আদিবাসী পরিবারগুলো যাতে বিদ্যুত পায় সে ব্যবস্থার জন্য অনুরোধ করেছেন।
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার রানীগাও ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের কালেঙ্গা রেঞ্জের ভিলেজার হিসেবে প্রায় ৩শ বছর ধরে বসবাস করছে আদিবাসী ত্রিপুরা, হাজং, সাওতালসহ নানা নৃগোষ্ঠী। কালেঙ্গা রেঞ্জের ৪টি বনবিটের আওতাধীন মঙোলিয়া বাড়ি, ছনবাড়ি, ছোট ছনবাড়ি, ডেবরাবাড়ি, কালিয়াবাড়ি, পুরানবাড়ি ও কৃষ্ণছড়া নামে ৭টি পাড়ায় সাড়ে ৩শ পরিবারের বসবাস। ২০১৮ সালে প্রথম কালেঙ্গা রেঞ্জের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতায়ন শুরু হয়। তখন কালেঙ্গা রেঞ্জ ও বিট অফিস, কালেঙ্গা শিবির, বিজিবি ক্যাম্প, রশিদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুত লাইন নির্মাণ করা হয়। চলতি বছর এসব এলাকা বিদ্যুত সংযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু বনবিভাগের এক আবেদনের কারণে কালেঙ্গার আদিবাসী অধ্যুষিত ৭টি পাড়ায় বিদ্যুত লাইন নির্মাণ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কালেঙ্গা সংরক্ষিত বনে বিদ্যুত লাইন নেওয়া হলে বনের ক্ষতির কারণ দেখিয়ে বনবিভাগের উপর দিয়ে বিদ্যুত লাইন নির্মাণ বন্ধ রাখার জন্য বন বিভাগ হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুত সমিতি বরাবর একটি চিঠি দেয়। এরপরও স্থানীয় নেতাকর্মীদের চাপে পল্লী বিদ্যুত সমিতি লাইন নির্মানের জন্য খুটি নেওয়া শুরু করে। কিন্তু কালেঙ্গা রেঞ্জ কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আলী খুটি পরিবহনে বাধা দিয়ে আদিবাসী পাড়ায় বিদ্যুত লাইন নির্মাণ বন্ধ করে দেন। এ নিয়ে আদিবাসী নেতারা জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও কোন কাজ হয়নি। ফলে ৭টি আদিবাসী পাড়ার প্রায় ৩ হাজার মানুষ বিদ্যুত সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। বিদ্যুত সুবিধা না থাকায় আদিবাসী পরিবারের সদস্যদের লেখাপড়াসহ দৈনন্দিন কাজে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আদিবাসী নেতা অঘু দেববর্মা বলেন, পল্লী বিদ্যুত সমিতি জরিপ করে আমাদের ৭টি পাড়ায় চাহিদা মোতাবেক ৩৫০টি মিটার বসানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্ত বনবিভাগের বাধাঁর কারণে আমরা বিদ্যুত পাচ্ছিনা, অথচ তারা নিজেরা বনবিভাগে বসবাস করেও বিদ্যুত সুবিধা ভোগ করছে। পাশাপাশি কালেঙ্গার মুসলিম ভিলেজাররা বিদ্যুত সুবিধা ভোগ করছে। ক্ষিতিশ দেববর্মা বলেন, আমরা আজীবন আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে আসছি, অথচ আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাবস্থায় বনবিভাগ আমাদের বিদ্যুত বন্ধ রেখেছে। এজন্য তারা জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন স্থানে আবেদন করেও কোন ফল পাচ্ছেন না।
মঙ্গোলিয়া বাড়ির পঞ্চায়েত প্রধান আঞ্জু দেববর্মা বলেন, আমাদের আদিবাসীরা বিদ্যুতের জন্য বিভিন্ন স্থানে আবেদন করেছি। কিন্তু বনবিভাগের বাধার কারণে আমরা বিদ্যুত সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
এবিষয়ে কালেঙ্গা রেঞ্জ কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আলী বলেন, বনের মধ্যে দিয়ে বিদ্যুত লাইন নির্মাণ করলে বন্যপ্রাণী মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়বে। তাই বিভাগীয় কর্মকর্তার নির্দেশে আমরা বিদ্যুত লাইন নির্মাণ বন্ধ রাখার কথা বলেছি। আপনারা নিজেরা বিদ্যুত সুবিধা ভোগ করছেন, অথচ আদিবাসীদের বিদ্যুত পেতে বাধাঁ দিচ্ছেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বিষয়টি আলোচনা হচ্ছে, পল্লী বিদ্যুত লাইনে বনের ভিতর কাভারিং তার ব্যবহার করে বিদ্যুত লাইন নির্মাণ হলে তারা কোন বাধাঁ দিবেন না। তবে ডেবরা বাড়ি অভয়ারন্যের মধ্যে থাকায় তারা বিদ্যুত পাবে না।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সত্যজিত রায় দাশ বলেন, আমরা সবাই চাই এবং চেষ্টা করছি আদিবাসীরা বিদ্যুত সুবিধা পাক, কিন্তু বনবিভাগের আইনের কারণে বনের ভিতর দিয়ে বিদ্যুত লাইন টানা যাচ্ছে না। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে, সেটি হলেই তারা বিদ্যুত পেয়ে যাবে।