প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি ॥ ইউএনও বললেন রাজাকার আলবদরের তালিকা তৈরি করতে কাউকে কোন দায়িত্ব দেয়া হয়নি
আজমিরীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ আজমিরীগঞ্জে আবারও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টির পায়তারা করছে একটি মহল। এরই অংশ হিসেবে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে দিয়ে আগামীকাল রবিবার আজমিরীগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে মুজিব শতবর্ষ উদ্যাপনের লক্ষ্যে সভা আহবান করা হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে দাওয়াত দেওয়া হলেও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দাওয়াত দেয়া হয়নি। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ মিয়া সাক্ষরিত এজেন্ডায় উল্লেখ করা হয়েছে (১) বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ (২) ৭১ সালের শান্তি কমিটির থানা/ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি, সেক্রেটারী ও অন্যান্য যুদ্ধাপরাধী রাজাকার আলবদরদের তালিকা প্রণয়ন প্রসঙ্গে। এদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান- এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। যার সাক্ষরে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে তিনিই কিছুই জানেন না। তাহলে জানেন কে এ প্রশ্ন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের?
এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, একটি মহল বিশেষ উদ্দেশ্যে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে ব্যবহার করে বিতর্কিত কিছু কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। গত ২২ সেপ্টেম্বর একইভাবে মুক্তিযোদ্ধা বহুমুখি সমিতির নামে এক সভা করে সেখানে স্থানীয় তিনজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছিল। বীরমুক্তিযোদ্ধাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা নিয়ে পত্রিকায় প্রতিবাদ পাল্টা প্রতিবাদ ছাপা হয়েছে। থানায় জিডি করা হয়েছিল। যারা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিলেন তারা কেন ৩ জন মুক্তিযোদ্ধাকে অবাঞ্চিত করেছিলেন, কোন এখতিয়ারে করেছিলেন তার কোন জবাবও কেউ দিতে পারেননি। যার সভাপতিত্বে সভা হয়েছিল তিনি তখনও বলেছিলেন তিনি কিছু জানেন না। তিনি তখন আরও বলেছিলেন সভায় গেলে বুঝতে পারবো। এবারও বীর মুক্তিযোদ্ধা রশীদ বললেন তিনি কিছুই জানেন না। এমতাবস্থায় বিষয়টি নিয়ে এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে আলোচনা-সমালোচনা, চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধার সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে তারা কোন চিঠি পাননি।
এ ব্যাপারে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান- মুজিববর্ষ উপলক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আলোচনা করবেন জেনেছি। কিন্তু রাজাকার আলবদরের তালিকা তৈরী করতে তাদের কোন দায়িত্ব দেয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে মেঘনা রিভার ফোর্সের কোম্পানি কমান্ডার ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফজলুর রহমান চৌধুরী, সদ্য সাবেক উপজেলা কমান্ডার তৈয়বুর রহমান খান বাচ্চু, সুনীল চন্দ্র দাস, দীলিপ কুমার চৌধুরী, আশরাফ উদ্দিন, মর্তুজ আলী, দাস পার্টির সেকেন্ড ইন কমান্ড ইলিয়াছ চৌধুরী, রমজান মিয়া, হরেন্দ্র চন্দ্র সরকার, শ্রীকান্ত দেব, পিযুষ রায় প্রমূখ বীর মুক্তিযোদ্ধার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। তাদের অনেকেই মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অনুষ্ঠানে তাদের অংশগ্রহণ অনস্বীকার্য। যে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বশস্ত্র যুদ্ধ করেছিলেন এবং আজমিরীগঞ্জ হানাদার মুক্ত করেছিলেন সেই সব বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ছাড়া এ অনুষ্ঠান কারা করবেন। আবার যারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এলাকায় ছিলেন না, এলাকায় কোন অপারেশন করেননি তারা কিভাবে এলাকার স্বাধীনতাবিরোধী এবং রাজাকার আলবদরদের তালিকা করবেন? এ নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছর রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অনেক সমালোচনা হয়েছিল। অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। কাজেই এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থানীয়ভাবে করা হলে আবারও জটিলতা তৈরি হবে বলে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ মনে করেন।