ফেনীর এক ডাক্তারের নামে নিজের নাম রেখে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে রোগীদের চিকিৎসা করতেন দন্ডিত মাসুদ রানা ॥ রোগীদের কাছ থেকে ফি নিতেন ৫শ’ টাকা এবং ইচ্ছামতো টেস্ট দিয়ে অত্যধিক কমিশন নিতেন
স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর এলাকার মুন জেনারেল হাসপাতালে মাসুদ রানা নামের এক ভূয়া ডাক্তারকে ১ বছরের কারাদন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। গতকাল বিকেলে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শামসুদ্দিন মোঃ রেজার নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত তাকে এ দন্ড প্রদান করেন। দন্ডপ্রাপ্ত ভূয়া ডাক্তার মাসুদ রানা নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরের হাতিখান গ্রামের বাসিন্দা। অথচ তিনি নিজেকে রংপুর জেলার সদর উপজেলার রাধাবল্বভ গ্রামের বাসিন্দা বলে পরিচয় দেন।
ভ্রাম্যমান আদালত সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে দন্ডপ্রাপ্ত ভূয়া ডাক্তার মাসুদ রানা ফেনী জেলার সোনাগাজীর ডাঃ মাসুদ করিমের নাম ব্যবহার তার পরিচয়ে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রেসক্রিপশনে ডাক্তার মাসুদ করিমের সকল ডিগ্রী উল্লেখ করে রেখেছেন। মুন জেনারেল হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় পর থেকেই ভূয়া ডাক্তার মাসুদ রানা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বোকা বানিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছিল। মুন জেনারেল হাসপাতালের ভিআইপি চেম্বারে বসে ভূয়া ডাক্তার মাসুদ রানা রোগী প্রতি ৫শ টাকা ফিস নিয়ে রোগীদের চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। ভ্রাম্যমান আদালতের সূত্রমতে ভূয়া ডাক্তার মাসুদ রানা ওরফে মাসুদ করিম মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে চিকিৎসা করতেন। প্রতিটি রোগী দেখার পরই তিনি একাধিক টেস্ট দিতেন। আবার ওই টেস্টের রিপোর্টও তিনি নিজেই দেখতেন। টেস্টে ভূয়া ডাক্তার মাসুদ রানা অত্যধিক কমিশন নিতেন। তার কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে প্রতারণার শিকার অনেকেই হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভূয়া ডাক্তারের বিষয়টি নজরদারী করা হচ্ছিল। অবশেষে গতকাল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মুন জেনারেল হাসপাতালে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় মাসুদ রানার সকল কাগজপত্র পর্যবেক্ষণ করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিশ্চিত হন তিনি ভূয়া ডাক্তার। অভিযুক্ত ভূয়া ডাক্তার দোষ স্বীকার করেন। ভ্রাম্যমান আদালতকে তিনি জানান- মুন জেনারেল হাসপাতালে চাকুরীতে যোগদানের সময় তিনি যে জীবন বৃত্তান্ত জমা দেন তা সম্পূর্ণ ভূয়া। তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ থেকে পিজিটি পাসের কাগজপত্র দেখালেও প্রকৃতপক্ষে তিনি এর কিছুই পাশ করেননি। এ সময় ভূয়া ডাক্তার মাসুদ রানাকে আটক করা হয়। পরে তাকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করেন ভ্রাম্যমান আদালতে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শামসুদ্দিন মোঃ রেজা।
এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শামসুদ্দিন মোঃ রেজা জানান, ডাঃ মাসুদ করিমের নাম ব্যবহার করে ভূয়া ডাক্তার মাসুদ রানা চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয় এবং তাকে ১ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকালে সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের আরএমও ডাঃ মোমিন উদ্দিন চৌধুরী।