উত্তম কুমার পাল হিমেল, নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ দেশবরেণ্য আলেম মৃত্যুবরণ করলে লাখ লাখ ভক্ত আশেকান জানাজার নামাজে অংশ নেয়াটা স্বাভাবিক বিষয়। এর ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাওলানা জুবায়ের আহমেদ আনসারীর জানাজার নামাজে লাখো জনতার ঢল নামে। সেদিন এ রকম লোকে লোকারণ্যের দৃশ্য হতে পারতো নবীগঞ্জের ইমামবাড়িতে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মহামারীর মধ্যে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসানের নির্দেশে এবং নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পালও থানা পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে ঘটে এর ব্যতিক্রম। গত ৭ এপ্রিল মঙ্গলবার গভীর রাতে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন হবিগঞ্জের কৃতি সন্তান প্রখ্যাত আলেম জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র সভাপতি খলীফায়ে মাদানী আল্লামা আবদুল মোমিন শায়েখে ইমামবাড়ি। ৮ এপ্রিল রোজ বুধবার দুপুর ২:৩০ মিনিটে উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের পুরানগাঁও মাঠে জানাজার নামাজের সময় ও স্থান নির্ধারণ করা হয়। লাখ মুসল্লীদের ঢল নামার কথা ছিল জানাজার নামাজে। ছিল সকল ধরণের প্রস্তুতি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জানাজার নামাজে উপস্থিত হওয়ার জন্য সকাল থেকে রওয়ানা হয় ইমামবাড়ি হুজুরের ভক্ত আশেকানসহ সর্বসাধারণ মানুষ। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সকল ঝুঁকি ও জনসমাগম এড়াতে কঠোর অবস্থানে ছিল প্রশাসন। বুধবার সকাল থেকেই হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসানের নির্দেশনায় নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পালের নেতৃত্বে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি সুমাইয়া মমিন, নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো.আজিজুর রহমান সহকারে একদল পুলিশ ও একদল সেনাবাহিনী ইমামবাড়ি এলাকায় কঠোর অবস্থান নেয়। করোনা ঝুঁকি এড়াতে বেলা ১২টা থেকে অঘোষিত লক ডাউন করা হয় নবীগঞ্জের সকল প্রবেশ মুখ। বন্ধ করে দেয়া হয় হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক, আউশকান্দি-নবীগঞ্জ সড়কসহ অধিকাংশ প্রবেশ পথ। প্রবেশমুখে আটকে দেয়া হয় সকল ধরণের যানবাহন। জনসমাগম এড়াতে ইসলামী ফাউন্ডেশনসহ বিজ্ঞ আলেম, মৃত ব্যক্তির পরিবারের সাথে দফায় দফায় করোনা পরিস্থিতির সতর্কতা ও জানাজার নামাজের পরবর্তী ভয়াবহতা নিয়ে সচেতনার আহবান জানান নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল ও সরকারি কর্মকর্তারা। সার্বিক পরিস্থিতি উপলব্ধি করে প্রশাসনের আহবানে সাড়া দেয় জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয়রা। দুপুর আড়াইটায় জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও জনসমাগম এড়াতে প্রশাসনের কঠোর নজরদারীর মধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনায় জানাজার নামাজের নির্ধারিত সময়ের ১ ঘন্টা আগেই অর্থাৎ ১.৩০ মিনিটে জানাজার নামাজ সম্পন্ন করা হয়। তারপরও কয়েক হাজার মুসল্লীর অংশগ্রহণ ঘটে। তবে করোনা ভাইরাসের এই মহামারী পরিস্থিতিতে সকল ঝুঁকি এড়াতে লাখ মুসল্লীর অংশগ্রহণ টেকাতে তৎপর ছিল প্রশাসন।
উল্লেখ্য, আল্লামা আব্দুল মোমিন শায়েখে ইমামবাড়ি ২০০০ সালে প্রাচীন ইসলামী রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র কেন্দ্রীয় পৃষ্ঠপোষক নির্বাচিত হন। ২০০৫ সাতে তৎকালীন দলের সভাপতি মাওলানা আশরাফ আলী বিশ্বনাথীর ইন্তেকালের পর তাঁকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। মরহুম ইমামবাড়ি (রাহ.) এর ইন্তিকালের সময় বয়স হয়েছিল ৯৯ বছর। তিনি ৪ পুত্র ও ২ কন্যা এবং স্ত্রীকে রেখে যান। এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন, সেদিনের পরিস্থিতি এবং জনসমাগমের ভয়াবহতা ব্যাপক হতে পারতো, করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে ও মানুষকে সচেতন করতে, হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসন মো. কামরুল হাসান স্যারের নির্দেশে পুলিশ বিভাগ, সেনাবাহিনীসহ আমরা কঠোর অবস্থানে ছিলাম। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে আমাদের আহবানে সাড়া দেন স্থানীয় আলেম সমাজ। সেজন্য তাদের ধন্যবাদ। অন্যতায় নবীগঞ্জের জনসাধারণকে বড় ধরণের করোনা ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হতো।