এম.এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ নবীগঞ্জ উপজেলায় করোনা ভাইরাস দূর্যোগে শ্রমজীবী মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলের ৭২ টন চাল ও নগদ ৩ লাখ টাকার ত্রান বিতরণ করা হয়েছে। একটি ইউনিয়ন ছাড়া আর কোথায় অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এদিকে ত্রান বিতরণকে কেন্দ্র করে নবীগঞ্জের শ্রমজীবী মানুষেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এান বিতরণে দুই ধরনের প্যাকেট পাওয়ার অভিযোগ করেছে ত্রান গ্রহীতারা। সরকারী ভাবে এখন পর্যন্ত ৮২ টন ত্রান বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ১৩টি ইউনিয়নে ৫ টন করে দেয়া হয়েছে এবং পৌরসভায় ৭ টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। শুধু আউশকান্দি ইউনিয়ন ব্যতিত আর কোথায়ও এখনো অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ঐ ইউনিয়নের মধ্যে ৫ কেজি করে ৩০ মার্চ চাল বিতরণের অভিযোগ পাওয়া যায়।
এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, করোনা ভাইরাসে সারা দেশ লকডাউনের কারনে উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৩ টি ইউনিয়নের ১৭৭টি ওর্য়াডে ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে বিতরনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রান তহবিল থেকে ত্রান হিসাবে ১০ কেজি চাল ২ কেজি আলু ১ কেজি পেঁয়াজ আধা লিটার তেল, ১কেজি ডাল ও ১টি সাবান দেওয়ার কথা থাকলে প্রশাসনের অর্থ সংকটের কারনে দুই ধরনের প্যাকট করে নবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। যার জন্য অনেকে পেয়েছেন ১০ কেজি চালের সাথে পেয়েছেন ১টি মাত্র সাবান। সেই হিসেবে গত কয়েকদিনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিটি পরিবারগুলোকে দুই ধরনের প্যাকেটে ত্রান বিতরণ করা হয়। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমজীবী ৭২০০ জনের নাম তালিকাভুক্ত করে ত্রান বিতরণ করা হয়েছে। আরো ১৪০০০ জনের তালিকা করা হয়েছে। এদের মধ্যে উপজেলার পূর্ব বড় ভাকৈর ইউনিয়নের হলিমপুর ও আউশকান্দি ইউনিয়নের আউশকান্দি বাজারের কয়েকজন ত্রাণ গ্রহীতা জানান, তারা শুধু চালের সাথে ১টি সাবান পেয়েছেন এমনকি ১০ কেজি চালের জায়গায় ৫-৬ কেজি চালও পেয়েছেন বলে অনেকে জানান। এাছাড়া অনেক জায়গায় এক পরিবারের দুইজন ও অনেক সঞ্চল দোকান মালিকও ত্রান পেলেও অনেক প্রকৃত শ্রমজীবী পরিবারগুলো ত্রান থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বিশেষ করে উপজেলার অনেক ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারা স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে তালিকা করায় অনেক প্রকৃত শ্রমজীবী মানুষ তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।
এদিকে উপজেলার আউশকান্দি বাজারে ত্রান গ্রহীতাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুলবুল আহমেদ নামে স্থানীয় এক সাংবাদিকের ফেইসবুক আইডি থেকে ফেইসবুক লাইভের মাধ্যমে ত্রানের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করলে এই খবর সমগ্র উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে। গত ৩০ মার্চ ত্রাণে অনিয়মের অভিযোগে সংবাদ প্রকাশ করায় আউশকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান হারুন সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে সাংবাদিক শাহ সুলতান আহমেদ উপর অতর্কিত হামলা চালান। এসময় চেয়ারম্যান হারুন নিজেই ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে পেটান সাংবাদিককে। খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে আহত হন সাংবাদিক এম মুজিবুর রহমান ও সাংবাদিক বুলবুল আহমেদ। এ ঘটনায় সাংবাদিক এম মুজিবুর রহমান বাদি হয়ে পরের দিন ইউপি চেয়ারম্যান হারুনকে প্রধান আসামী করে ১০ জনের বিরুদ্ধে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় অভিযান চালিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে এক আসামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় চেয়ারম্যান হারুন।
নির্যাতনের শিকার সাংবাদিকদের অভিযোগ, নির্যাতনের শিকার হয়ে মামলা দায়েরের পর থেকেই কিভাবে সাংবাদিকদের সায়েস্থা করা যায় এমন নিল নকশা তৈরী করেন চেয়ারম্যান হারুন ও তার বাহিনী। এরই জের ধরে নবীগঞ্জে কর্মরত ৫ সাংবাদিককে আসামী করে বিতর্কিত এক মহিলাকে বাদী করে মামলা দায়ের করা হয়। এমনকি মামলায় ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান হারুনের মালিকানাধীন অরবিট হসপিটাল। ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ ছাদু মিয়া জানিয়েছেন, ইউপি চেয়ারম্যান যে তালিকা করেছেন তার ভিত্তিতেই তারা ত্রাণ বিতরণ করেছেন। চাল কম দেওয়ার বিষয়টি সত্য নয় আমরা তদন্তে করে এর সত্যতা পাইনি।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন, অর্থ সংকটের কারনে আমরা এখন পর্যন্ত প্রতি ইউনিয়নে ৫ টন চাল প্যাকেট করে ত্রান বিতরণ করি। এর মধ্যে কিছু প্যাকেটে ১০ কেজি চালের সাথে ৫টি আইটেম দিলে ও কিছু প্যাকেটে শুধু সাবান দিয়ে ত্রান বিতরণ করি। এছাড়া তালিকা তৈরিতে যদি কোনো অনিয়ম হয় তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন এখন পর্যন্ত ৮২ টন চাল বরাদ্দ পেয়ে ৭২ টন বিতরণ করেছি ও নগদ ৪ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে ত্রান সামগ্রী কিনে বিতরণ করেছি ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা।