স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাষা সৈনিক ও সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী চুনারুঘাট-মাধবপুর থেকে ৬ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য একুশে পদকপ্রাপ্ত অ্যাডভোকেট এনামুল হক মোস্তফা শহীদের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি। এ উপলক্ষে তার পরিবারের পক্ষ থেকে চুনারুঘাট উপজেলার কুঠিরগাঁও গ্রামে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।
মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামীলীগ নেতা এনামূল হক মোস্তাফা শহীদ ২৮ মার্চ ১৯৩৮ সালে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার কুঠিরগাঁও গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হবিগঞ্জের সরকারি বৃন্দাবন কলেজ থেকে বিএ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রী লাভ করেন। পেশাগত জীবনে তিনি একজন আইনজীবী হলেও দেশ ও জাতির কল্যাণে রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি আওয়ামীলীগের জন্মলগ্ন থেকেই এর কার্যক্রমের সাথে সরাসরি জড়িত। জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে দলকে সুসংগঠিত করেন। এনামূল হক এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা ও সমাজকল্যাণমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। এলাকার বেশ কিছু স্কুল কলেজ স্থাপনে তিনি অগ্রণি ভূমিকা পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারত থেকে সিএনসি স্পেশাল ট্রেনিং গ্রহণ করেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং ইয়ূথ ক্যাম্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিভিন্ন সেক্টরে সিভিল এফেয়ার্স এডভাইজার হিসেবে কাজ করেন।
ষাটের দশকে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ও আইয়ূব শাহীর বিরুদ্ধে গণআন্দোলনে তিনি তাঁর এলাকায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন এবং ঊনসত্তরের গণঅভুত্থানে তিনি স্মরণীয় ভূমিকা রাখেন। তিনি বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ৮০’র দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে তাঁর অনন্য ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। তিনি প্রথম জীবনে একজন শিক্ষক ছিলেন। ভাল অভিনয় করার পাশাপাশি বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেন তিনি।
এনামূল হক ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনসহ হবিগঞ্জ-৪ (নির্বাচনী এলাকা-২৪১) (চুনারুঘাট-মাধবপুর), ১৯৭৩, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পঞ্চম জাতীয় সংসদে তিনি ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সপ্তম জাতীয় সংসদে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে এবং ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে শপথ নেন এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। এ সময় তিনি চা শ্রমিকদের রেশন চালুসহ সামাজিক নিরাপত্তা বলয় শক্তিশালী করতে বলিষ্ট ভূমিকা রাখেন।
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ২০১৩ সালে এনামুল হক মোস্তফা শহীদ হবিগঞ্জের ১ম ব্যক্তি হিসাবে একুশে পদক লাভ করেন।