স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ শহরে ৩ দিনব্যাপী ‘জেলা ইজতেমা’ নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনা স্তিমিত হয়ে গেছে। ইজতেমা নিয়ে দুই গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়ালে জেলা প্রশাসন সাদপন্থীদের ইজতেমার আবেদন খারিজ করে দেয়। এর আগে ইজতেমা আয়োজনে বন্ধপরিকর ছিল সাদ পন্থীরা। অপরদিকে, যে কোন মূল্যে প্রতিহত করার ঘোষনা দেয় অপরপক্ষ। আয়োজকরা পালন করেছেন অবস্থান ধর্মঘট, আর প্রতিপক্ষ স্মারকলিপি প্রদানসহ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা দেন বিক্ষোভ কর্মসুচি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি তাবলীগ জামায়াতের সুরা সদস্য ভারতের মাওলানা সাদ খান্দলবী এর অনুসারীরা হবিগঞ্জ শহরতলীর সুলতান মাহমুদপুরে আগামি ২৭, ২৮ ও ২৯ ফেব্রুয়ারী হবিগঞ্জে ‘জেলা ইজতেমা’ আয়োজনের ঘোষণা দেয়। ঘোষণার পর থেকেই বিশ্ব ইজতেমার অপর সুরা সদস্য ও ঢাকা কাকরাইল মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা জুবায়ের আহমেদের অনুসারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পরে ক্ষোভ। ইজতেমা প্রতিহত করতে স্মারকলিপি প্রদানসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে শুরু করেন দৌঁড়ঝাপ। এ অবস্থায় জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আটকা পড়ে ইজতেমার অনুমোদন। বিষয়টি আচঁ করতে পেরে অনুমোদনের দাবিতে রবিবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসুচি পালন করেন মাওলানা সাদ অনুসারীরা। অবস্থান কর্মসুচিতে বক্তারা ইজতেমা অনুমোদনের জোর দাবি জানান। অপরদিকে, একই দিন দুপুরে তৌহিদী জনতার ব্যানারে জেলা মার্কাজ মসজিদে মাওলানা যুবায়ের অনুসারীরা করেন সংবাদ সম্মেলন। এ সময় বক্তারা বলেন, ‘জেলা পর্যায়ে ইজতেমা করার সরকারি কোন সিদ্ধান্ত নেই। ইজতেমার আয়োজকরা এর মাধ্যমে সমঝোতার শর্ত লঙ্ঘন করছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাবলীগ জামায়াতের জেলা শুরা সদস্য আব্দুল হান্নান (সাদ পন্থি) বলেন, ‘হবিগঞ্জে জেলা ইজতেমা অনুষ্ঠানের অনুমতির জেলা প্রশাসক বরাবরে দু’ দফা আবেদন করেছিলাম । অনুমতি না পেয়ে আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি।’
জানতে চাইলে হবিগঞ্জ জেলা বেফাক সভাপতি মাওলানা আব্দুল্লা আকিলপুরী বলেন, ‘স্ব-ঘোষিত আমীর মাওলানা সাদ দীর্ঘদিন ধরে তাবলীগ জামায়াত ও বিশ্ব ইজতেমায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপতৎপরতা করছেন। এরই মাঝে তার অনুসারীরা হবিগঞ্জে বিতর্কিত ইজতেমা আয়োজনের ঘোষণা দিয়ে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।’ জেলা প্রশাসন তাদের আবেদন খারিজ করায় আমরা আনন্দিত।
তিনি বলেন, ‘বিগত কয়েক বছর যাবত বিশ্ব তাবলীগের শুরা সদস্য ভারতের দিল্লীর নিজামুদ্দিন মার্কাজের মুরুব্বী মাওলানা সাদ খান্দলবী হঠাৎ করে তাবলীগের উসুল ও নিয়ম ভঙ্গ করে কোন ধরণের পরামর্শ ছাড়াই নিজেকে ‘বিশ্ব আমীর’ ঘোষণা করেন। এতে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দেয়। এর পর থেকে বাংলাদেশে তাবলীগ জামায়াত দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। উভয় গ্রুপের মুরুব্বীদের নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়, জেলায় জেলায় মাওলানা সাদপন্থীরা ইজতেমা করতে পারবেন না। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মাওলানা সাদপন্থীরা হবিগঞ্জে ইজতেমার আয়োজন করছে।
হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, আমরা ইজতেমা করার জন্য কোন অনুমতি প্রদান করব না। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন থেকে সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করা হয়েছে।
হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা জানান, জেলা প্রশাসন যেহেতু ইজতেমার আবেদন খারিজ করে দিয়েছে তাই এখানে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।