জাবেদ তালুকদার, নবীগঞ্জ থেকে ॥ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ ফজলুর রহমানের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে। গতকাল রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে নবীগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুর রহমানের পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে, রবিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃতদেহের সন্ধান মিলে। এর আগে নিখোঁজ ছিলেন অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান।
নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্র জানায়, গত শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সকাল ৮টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া বোনের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান। এরপর থেকে তার সন্ধান মিলছে না। এদিন সন্ধ্যা ৭টায় এক অজ্ঞাত ব্য ক্তি তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রবিবার (২০ অক্টোবর) সকাল ৭টায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় অধ্যক্ষকে নারায়নগঞ্জ জেলার রুপনগর থেকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি। খবর পেয়ে শাহবাগ থানার এসআই খালেদ আহমেদসহ একদল পুলিশ লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে প্রেরণ করেন। তবে কি কারণে বা কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে এ বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। তার পকেটে ব্যাংকে টাকা জমার রশিদ ও কলেজের হিসাব বিবরণীর কাগজপত্র ও কলেজের একটি সীল পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। অধ্যক্ষ মোঃ ফজলুর রহমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সড়াইল থানার কাটানিশার গ্রামের মৃত আব্দুল করিমের পুত্র। নবীগঞ্জ সরকারি কলেজে যোগদানের পর থেকে তিনি নবীগঞ্জ শহরের ওসমানী রোডে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন।
ফজলুর রহমানের স্ত্রী সৈয়দা সুলতানা আক্তার জানান, গত ১৮ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বোনের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়ার পর থেকেই তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর গতকাল রবিবার সকালে কলেজে উপস্থিত হয়ে শিক্ষকগণকে বিষয়টি অবগত করেন তিনি। পরে নিখোঁজের বিষয়ে নবীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়।
তিনি আরও জানান, তার স্বামী ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে কলেজ ছাত্রদের আন্দোলন নিয়ে মানসিক অস্থিরতায় ছিলেন তিনি। নিখোঁজের ডায়েরীতে তাকে মানসিকভাবে অসুস্থ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরেই অধ্যক্ষ ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছিল শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অধ্যক্ষ মো. ফজলুর রহমানকে প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে। গতকাল রবিবার সকাল ১১টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত কলেজ প্রাঙ্গণে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে অধ্যক্ষকে কলেজে হাজির করার দাবীতে সকল শিক্ষকদের তালাবদ্ধ করে রাখে তারা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানায়, রবিবার অনার্স ১ম বর্ষের ভর্তির ফি নিয়ে পূর্বনির্ধারিত ছাত্র শিক্ষক বৈঠক হবার কথা ছিল। কিন্তু তিনি (অধ্যক্ষ) আজ কলেজে আসেননি। এ খবর সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবীতে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে তারা। কর্মসূচি শেষে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছে অধ্যক্ষ না আসার কারণ ও অনার্স ১ম বর্ষের ভর্তি ফি কমানোর বিষয়ে জানতে চান। কিন্তু শিক্ষকরা অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে কোন সিদ্ধান্ত দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে শিক্ষকদের তালাবদ্ধ করে রাখে। প্রায় ১ ঘন্টা পর শিক্ষকরা অনার্স ১ম বর্ষের ভর্তির ফি কমানো আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা তাদের মুক্ত করে দেয়।
এদিকে অধ্যক্ষ ফজলুর রহমানের মৃত্যুর খবরে তার পরিবার ও ছাত্র-শিক্ষকসহ সর্বমহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেকেই মৃত্যুর বিষয়টিকে রহস্যজনক উল্লেখ করে বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত দাবী করেছেন।
এ বিষয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি মোঃ কামাল হোসেন পিপিএম বলেন, নিখোঁজের বিষয়ে রবিবার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে। পরে আমরা অধ্যক্ষের মৃত্যুর খবর জানতে পেরে পরিবারকে বিষয়টি অবগত করেছি।