স্টাফ রিপোর্টার ॥ বীণা রবি দাস। সে পইল আসামপাড়া গ্রামের মৃত নিবারণ রবি দাসের মেয়ে। দুই ভাই এক বোনের মাঝে সে-ই সবার বড়। ২০০০ সালে সে পইল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৭ম শ্রেণি পাস করে ৮ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবার পর অর্থাভাবে স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি। ওই সময়ে তাকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে তার মা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মঈনুল হক আরিফের কাছে ছুটে যান। চেয়ারম্যান বীণার জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে সুপারিশ করলে তার ভর্তি ফিসহ অন্যান্য খরচ ১ হাজার টাকা মওকুফ করা হয়। তাকে জানানো হয় ৫শ’ টাকা দিতেই হবে। কিন্তু বীণার পক্ষে ওই ৫শ’ টাকা জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। তাই সে বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেনি। এভাবে কেটে যায় দুই বছর। এদিকে পিতা বেঁচে না থাকায় তার ছোট দুই ভাইও লেখাপড়া করতে পারেনি। অসহায় মা ইট ভাঙার শ্রমিক হিসেবে কাজ করে কোন রকম তিন সন্তানকে নিয়ে জীবন চালাতে থাকেন। এ অবস্থায় ভেঙে পড়ে ঘরের ছাউনি। কিন্তু অর্থাভাবে ঘরটিও মেরামত করতে পারেননি। ছুটে গিয়েছেন ইউনিয়ন অফিসে। আবেদন করেছেন উপজেলায়। কিন্তু কোন স্থান থেকেই পাননি কোন ধরণের সহায়তা। ফলে ঘর মেরামত করা হয়ে উঠেনি। ঘরের চালা বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গিয়ে কোন রকম টিকে আছে। তবে বৃষ্টি আটকানোর মতো সক্ষমতা নেই। তবুও আশায় বুক বেঁধে সন্তানদের নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবার স্বপ্ন মায়ের চোখে। সম্প্রতি ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নিরীক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পইল আসামপাড়া গ্রামে গেলে বিষয়টি নজরে আসে এডভোকেসী নেটওয়ার্ক হবিগঞ্জ সদর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোতালিব তালুকদার দুলাল ও সদস্য দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক মঈন উদ্দিন আহমেদ এর। এ সময় সেখানে এসে হাজির হয় ঝুমা রবি দাস ও লিপি রবি দাস নামে আরও দুই শিক্ষার্থী। তারা ৬ষ্ঠ শ্রেণি পাস করে ৮ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু তারাও অর্থাভাবে বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে না বলে জানায়। এ অবস্থায় এ তিন জনকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর উদ্যোগ নেন মোতালিব তালুকদার দুলাল ও মঈন উদ্দিন আহমেদ। এ ব্যাপারে এডভোকেসী নেটওয়ার্ক হবিগঞ্জ সদর উপজেলা কমিটির সভাপতি পইল ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মঈনুল হক আরিফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি পইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করে ওই তিন শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করেন। সোমবার বীণা রবি দাসকে ৮ম শ্রেণিতে এবং ঝুমা রবি দাস ও লিপি রবি দাসকে ৭ম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়।
বীণা রবি দাস জানায়, যেহেতু সে পুনরায় বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরেছে এবং লেখাপড়া করার সুযোগ পেয়েছে, পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে সে চেষ্টা করবে ভালভাবে লেখাপড়া করে মায়ের মুখে হাসি ফুটাতে। সে যেন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের সেবা করতে পারে এজন্য সে সকলের দোয়া/আশীর্বাদ ও সহযোগিতা কামনা করেছে।
ঝুমা রবি দাস জানায়, তার পিতা কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তিনি যে টাকা রোজগার করেন তা দিয়ে সংসার চলে না। তারা ৫ ভাই ও দুই বোন। পরিবার বড় হওয়ায় তার বাবা মাকে সংসার চালাতে খুবই কষ্ট করতে হয়। তাই অর্থাভাবে সে স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি। শুধু তাই নয়, তার বোন এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। কিন্তু অর্থাভাবে ফিস দিতে না পারায় তার আর পরীক্ষা দেয়া হয়ে উঠেনি।
অপরদিকে লিপি রবি দাসের পিতা জুতা মেরামতের কাজ করে থাকেন। বর্তমান সময়ে ওই পেশায় জীবন চালানো খুবই কষ্টকর। তবুও বৃদ্ধ বয়সে তিনি এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে চলেন জীবিকার আশায়। সন্তানদের মুখে এক মুঠো অন্ন তুলে দেয়ার স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হিসাব মেলাতে পারছিলেন না। তাই ৩/৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া করার পর তার দুই ভাই ও বোনের আর লেখাপড়া করা হয়ে উঠেনি। পরিবারের শুধুমাত্র সেই লেখাপড়ার সাথে সম্পৃক্ত ছিল। এ বছর ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৭ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলেও অর্থাভাবে তার স্কুলে ভর্তি হওয়া সম্ভব হয়নি। যেহেতু সে এডভোকেসী নেটওয়ার্ক হবিগঞ্জ সদর উপজেলা কমিটির সভাপতি পইল ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মঈনুল হক আরিফ, সাধারণ সম্পাদক মোতালিব তালুকদার দুলাল ও সদস্য মঈন উদ্দিন আহমেদ এর উদ্যোগে পুনরায় বিদ্যালয়ে ভর্তি ও লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছে এজন্য সে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সকলের সহযোগিতা কামনা করে।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com