হবিগঞ্জ-৪ ॥ ৮ প্রার্থীর মধ্যে দুই প্রার্থী মাঠে

কাজী মাহমুদুল হক সুজন ॥ হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) সংসদীয় আসনে চা শ্রমিকদের কদর বেড়েছে। গত কয়েক বছর কেউ তাদের খবর না নিলেও এখন তাদের প্রতিদিন খবর নেয়া হচ্ছে। তাদের ভোট নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে কাজ করছেন প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকরা। কারণ এ আসনে চা শ্রমিকদের ভোটের পাল্লা যেদিকে ভারি সেদিকেই বিজয় অর্জন হয়। এমনটাই মনে হচ্ছে গত কয়েকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলে।
নির্বাচন বিজয়ের গ্রীনকার্ড চা শ্রমিকদের হাতে এমনটিই মনে হচ্ছে ভোটারদের সাথে আলাপ করে। এই আলোচনাই হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) সংসদীয় আসনের সর্বত্র। চা বাগান বেষ্টিত এই আসনে চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর ভোটই মূলত যে কোন প্রার্থীকে তার কাক্সিক্ষত বিজয়ে পৌঁছে দিয়ে থাকে। এ আসনে ৮ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিলেও আলোচনায় দুইজন ছাড়া কেউ মাঠে নেই। এ আসনে নৌকা প্রতিক নিয়ে লড়ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোঃ মাহবুব আলী (নৌকা)। অন্যজন স্বতন্ত্র প্রার্থী সোস্যাল মিডিয়ায় পরিচিত মুখ কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন (ঈগল পাখি)।
বিএনপি বিহীন এ নির্বাচনে আমেজ না থাকলেও ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন চুনারুঘাট-মাধবপুর উপজেলায় নির্বাচন জমিয়ে ফেলেছেন এমনটাই মনে করেন সাধারণ ভোটাররা। চা বাগানের শ্রমিকরা জানান- নির্বাচন আসলেই আমাদেরকে ঘিরে উন্নয়ন আর প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ফুঁটান। নির্বাচন চলে গেলে আমরা ঘুরেফিরে বঞ্চিত হই। অনেক নেতা আমাদের দুর্গাপূজায়ও আসেন না। এ জন্যই এবার এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে ভোট দিব বলে জানান তিনি।
হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনে ছোট বড় মিলে ২০টি চা বাগান রয়েছে। বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোঃ মাহবুব আলী বিভিন্ন পথসভা ও জনসংযোগে গিয়ে বিগত দিনের উন্নয়নের চিত্র তোলে ধরে আবারো ভোট চাইছেন। আবারো তাকে বিজয়ী করতে ভোটারদের প্রতি আহবান জানান।
অপরদিকে ব্যারিস্টার সুমন নিজের অর্থায়নে নির্মিত ৪৯টি ব্রিজ ও করোনাকালীন সময়ে সহযোগিতার কথা চা শ্রমিকদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন গণমাধ্যম সহ ভিডিও কনটেন্ট এর মাধ্যমে। তিনিও ভোট চেয়ে বিভিন্ন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তবে চা শ্রমিকরা বলছেন, তাদের বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনের সময় যিনি পাশে ছিলেন তাকেই এবার তারা বেছে নিবেন। আর এসব বিষয় মাথায় নিয়েই দুই প্রার্থী চেষ্টা করে যাচ্ছেন চা শ্রমিকদের নিজ বলয়ে নিয়ে আসার জন্য।
সাতছড়ি ত্রিপুড়া পল্লীর বাসিন্দা চিত্ররঞ্জন ত্রিপুরা বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে বঞ্চিত। একটি ব্রীজের অভাবে কত দুর্ভোগ পোহাচ্ছি আমরা পল্লী বাসি জানি। তাই এবার আমরা দেখে শুনে ভোট দিব।
শ্রীবাড়ী চা বাগানের নির্মল নামের এক শ্রমিক বলেন, দুইজনই আওয়ামী লীগের প্রার্থী। আমরাতো সব সময় আওয়ামী লীগকে সমর্থন করি। তবে এবারের নির্বাচনে গণেশ উল্টে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মাধবপুর উপজেলার বহরা ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য গত ১০ বছরে দুই উপজেলায় কোন উন্নয়নমূলক কাজ করেননি। তাই তারা জনস্বার্থে স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সুমনের পক্ষে কাজ করছেন। ব্যক্তি উদ্যেগে ৪৯টি ব্রীজ নির্মাণ করে দিয়ে ব্যারিস্টার সুমন ইতিমধ্যে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চা শ্রমিক বলেন, চা বাগানে সব সময় নৌকা নিরস্কুশ ভোট পায়। তবে এবার ব্যারিস্টার সুমনও ভোট পাবে। এক্ষেত্রে ব্যারিস্টার সুমন যদি চা শ্রমিকের ভোট আদায় করতে পারেন চমক থাকবে এ আসনে। এক্ষেত্রে অবাক হবার কিছু থাকবে না। তবে এ আসনে হেভিওয়েট দুই প্রার্থীই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।