বিয়ের মাত্র ৯ মাসের মাথায় যৌতুকের জন্য মধ্যরাতে সাত মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা তাহেরা খাতুনকে পিটিয়ে হত্যা করে ঘাতক স্বামী শাশুড়ি ভাসুর ননদ ও ননাশ ॥ মৃত্যুদন্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করেন বিচারক ॥ জরিমানার টাকা নিহত তাহেরার পিতাকে দেয়ার আদেশ
স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে বিয়ের মাত্র ৯ মাসের মাথায় যৌতুকের জন্য মধ্যরাতে সাত মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার দায়ে স্বামী শাশুড়ি ভাসুর ননদ ও ননাশসহ একই পরিবারের পাঁচজনকে মৃত্যুদ- দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ৪ আসামীর উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোঃ জাহিদুল হক। রায়ে প্রত্যেক আসামীকে বাধ্যতামূলক এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয় এবং উক্ত জরিমানার টাকা বাদীকে প্রদান করার আদেশ দেন বিচারক।
মৃত্যুদ-ে দন্ডিতরা হলেন- চুনারুঘাট উপজেলার সাদেকপুর গ্রামের মরহুম হরমুজ আলীর ছেলে রাসেল মিয়া (২৫), রাসেলের বড় ভাই কাউছার মিয়া (৩২), মা তাহেরা বেগম (৫০), ছোট বোন হোছনা বেগম (২০) ও বড় বোন রোজী বেগম (২৭)। রায় ঘোষণার সময় কাউছার মিয়া পলাতক ছিলেন। অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর পিএ/স্টেনোগ্রাফার মোঃ শিপন মিয়া জানান, চুনারুঘাট উপজেলার পঞ্চাশ গ্রামের আব্দুস সাত্তারের মেয়ে তাহেরা খাতুন আয়েশাকে (২০) একই উপজেলার সাদেকপুর গ্রামের হরমুজ আলীর ছেলে রাসেল মিয়ার সাথে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের পর থেকেই তাহেরা খাতুন আয়েশাকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করতে থাকে তার স্বামীসহ শ^শুর বাড়ির লোকজন। ২০১৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে যৌতুকের জন্য স্বামী শাশুড়ি ভাসুর ননদ ও ননাশ মিলে নিজেদের বাড়িতে রাসেল মিয়ার স্ত্রী তাহেরা খাতুন ওরফে আয়েশাকে পিটিয়ে হত্যা করে। হত্যাকান্ডের শিকার হওয়ার সময় তাহেরা খাতুন ৭ মাসের অন্ত:স্বত্ত্বা ছিলেন। এ ঘটনায় তাহেরার পিতা আব্দুস সাত্তার বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চুনারুঘাট থানার এসআই ফারুক হোসেন ২০১৭ সালের ৩ মার্চ আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। কিন্তু বাদীপক্ষ এতে নারাজি দিলে আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি পুনরায় তদন্ত করার আদেশ দেন। পিবিআই’র এসআই মইনুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করে ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশীট দেন। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিজ্ঞ বিচারক রায় ঘোষণা করেন।
নিহতের বাবা মামলার বাদী আব্দুস সাত্তার বলেন, যৌতুকের জন্য মারপিট করে জামাতা, শাশুড়ি, ননদ, ননাশ ও ভাসুর মিলে আমার মেয়েকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমার মেয়ে ৭ মাসের গর্ভবতী ছিল। আমি রায়ে সন্তুষ্ট। তবে দ্রুত রায় কার্যকর করার দাবি জানাই।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবুল মনসুর চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ রায় একটি যুগান্তকারী রায়। এ রায়ের কারণে সমাজে নারী নির্যাতন ও যৌতুক কিছুটা হলেও কমবে।