৫২ বছর পর ফুলপুরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ
আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট থেকে ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার পাইকপাড়া ইউনিয়নের ফুলপুর গ্রামবাসী স্বাধীনতার ৫২ বছর পর পেয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে নিহত ৯ জনেরর স্মরণে বধ্যভূমি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ। রবিবার সন্ধায় ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে এই স্মৃতিসৌধের উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী। পরে তিনি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। উদ্বোধনের পর এলাকাবাসী প্রতিমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাদের আবেগ অনুভুতির কথা জানান। এসময় চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল কাদির লস্কর, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিদ্ধার্থ ভৌমিক, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের, ভাইস চেয়ারম্যান আবিদা খাতুন, অফিসার ইনচার্জ ওসি রাশেদুল হক, পিআইও প্লাবন পালসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
১৯৭১ সালের ১৮ বৈশাখ (এপ্রিল মাসের শেষে) হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ৪নং পাইকপাড়া ইউনিয়নের ফুলপুর গ্রামের বধ্যভূমিতে এক পরিবারের গোলক দেবনাথ, রাম চরণ দেবনাথ, শ্যাম সুন্দর দেবনাথ, গোপেন্দ্র দেবনাথ, প্রফুল্ল দেবনাথ, রাজেন্দ্র দেবনাথ, মাখন দেবনাথ, ঠাকুরধন দেবনাথ, সুরেশ দেবনাথ এ ৯ জন মুক্তিকামী মানুষকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। এতদিন সেখানে ছিল না কোনও স্মৃতিসৌধ। শুধু একটি স্মৃতিফলকই সাক্ষ্য দিত সেই গণহত্যার। এনিয়ে অনেকবার লেখালেখি ও দাবি দাওয়া উত্থাপন করা হয়। তবে এবার সেখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। তৈরী করা হয়েছে সীমানা প্রাচীর এবং দৃষ্টিনন্দন ফটক।
প্রকল্প কর্মকর্তা প্লাবন পাল জানান, বিমান প্রতিমন্ত্রীর বরাদ্দে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে টি আর কর্মসূচির আওতায় উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কাজটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ বছরেরই জুন মাসে কাজ শুরু হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। সুন্দর একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কারণে গ্রামবাসী সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
চুনারুঘাটে কয়েকটি বধ্যভুমির মধ্যে ফুলপুর অন্যতম। যেখানে গোলক দেবনাথ ও তার ৩ ছেলেসহ তার আত্মীয় ৯ জনকে পাকিস্তানী বাহিনী ধরে এনে হত্যা করে। তাদের মধ্যে গোলক দেবনাথের বড় মেয়ের আত্মীয় বেড়াতে এসে হানাদারদের কবলে পড়েন। গোলক দেবনাথের স্ত্রী সুসিলা দেবনাথ কয়েক বছর পুর্বে মারা যান। মৃত্যুর পুর্বে তিনি তার স্বামী ও ছেলেদের স্বীকৃতির জন্য অনেক স্থানে ঘুরেছেন। পাননি স্বীকৃতি। পাননি কোন সহযোগিতা। গোলক দেবনাথে পুত্রবধু জানালেন, তারা অনেকের কাছে গিয়েছেন, কেউ কিছু দেয়নি। এবার তারা নিহতদের স্বীকৃতি চান। তারা এখনও বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি। তাদের পরিবারের দাবি, এবার তাদের স্বীকৃতির মাধ্যমে ছেলেমেয়েরা যাতে সরকারের সুযোগ সুবিধা পায়।