আব্দুল আউয়াল তালুকদার

চৌধুরী আব্দুল হাই চাচার সাথে আমাদের পরিবারের সম্পর্ক ছিল দীর্ঘদিনের। আমার মরহুম পিতা নিম্বর আলী তালুকদারের সাথে চৌধুরী আব্দুল হাই চাচার বড় ভাই চৌধুরী আব্দুল বারীর ছোটবেলা থেকেই বন্ধুত্ব ছিল। একই ইউনিয়নের এবং পাশের গ্রামে বাড়ি হওয়ার সুবাদে তাছাড়া আমার বাবার নানার বাড়ী ছিল বহুলা গ্রামে সে জন্যই ছোট বেলা থেকেই চৌধুরী বাড়িতে আব্বার যাওয়া আসা ছিল এবং চৌধুরী আব্দুল বারীর সাথে ছিল গভীর বন্ধুত্ব। সেই সুবাদে চৌধুরী আব্দুল হাই চাচা আমার বাবাকে বড় ভাই ডাকতেন। চৌধুরী আব্দুল হাই চাচাকে আমি প্রথম দেখি ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৮ দলীয় জোটের প্রার্থী ছিলেন তিনি। শায়েস্তাগঞ্জ কলেজ গেইটের কাছে নির্বাচনী সভাতে আমার বাবার সাথে তিনি ছিলেন ঐ নির্বাচনী সভাতে। সেই থেকেই পরিচয় এবং চাচার সম্পর্কে জানাশোনা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ের পরিক্রমায় চৌধুরী আব্দুল হাই চাচার কথা নানান সময়ে আমার বাবার মুখে শুনতাম। আমার বাবার সকল মামলা মোকদ্দমায় চাচা সহযোগিতা করতেন এবং চাচার ও সকল কাজে আমার বাবা পাশে থাকতেন। হবিগঞ্জে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে পদচারণা করতে গিয়ে চৌধুরী আব্দুল হাই চাচাকে আরও বেশী ঘনিষ্টভাবে চিনতে পেরেছি। কোন অনুষ্ঠানে দেখা হলে কথা হলে অত্যন্ত আপন জনের মত কুশলাদি জিজ্ঞেস করতেন এবং আমাদের পরিবারের খোঁজ খবর নিতেন। হবিগঞ্জ সাহিত্য পরিষদ আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম, নজরুল একাডেমী সুরবিতানের অসংখ্য অনুষ্ঠানে তিনি অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকতেন। ২০০৭ সালে হবিগঞ্জের অরাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সম্মিলিত প্রয়াস “হবিগঞ্জ নাগরিক কমিটি” নামে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে তিনি ভূমিকা পালন করেন। চৌধুরী আব্দুল হাই সভাপতি আমাকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়। শুরুতে অনেকেই মনে করেছেন হবিগঞ্জ নাগরিক কমিটির কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবো না। পরবর্তীতে হবিগঞ্জ নাগরিক কমিটি শুধু আজমিরীগঞ্জ উপজেলা বাদে হবিগঞ্জের সকল উপজেলায় এবং ইউনিয়নে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, শিক্ষাবৃত্তি, চক্ষু শিবির, শান্তি সমাবেশ, দরিদ্র মহিলাদের ঈদের সময় শাড়ি বিতরণ কার্যক্রম, ঢেউটিন বিতরণ, সেলাই মেশিন বিতরণ, বিবাহে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান সহ নানান কার্যক্রম জেলাব্যপী বিস্তৃত হয়।
চৌধুরী আব্দুল হাই চাচা সমাজের মানুষের উপকার হয় এমন জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমে তিনি পিছপা হননি। সব সময় চিন্তা করতেন মানুষের উপকারের কথা। সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে তিনি সবসময় বলতেন এবং পরামর্শ দিতেন সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের উপকার যাতে হয়। হবিগঞ্জ নাগরিক কমিটির কার্যক্রম কোন অনুষ্ঠান করতে গেলে নিজেই অর্ধেক খরচ বহন করতেন। অনুষ্ঠান শেষে আবার রাতের বেলায় খবর নিতেন আমি ভালোভাবে অনুষ্ঠান শেষ করে বাসায় পৌছেছি কি না? এমন অভিভাবক তুল্য মানুষ আর পাওয়া যাবে না।
আমি তার ১৫ বছর হবিগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দেখলাম এক অসাধারণ মানুষ চৌধুরী আব্দুল হাই চাচা তিনি কখনও কারও সমালোচনা করতেন না, পরনিন্দা বা বাজে কথাবার্তা বলতেন না এবং অপ্রয়োজনীয় কথা পরিহার করতেন। তিনি সর্বদা হবিগঞ্জের মানুষের উপকারের জন্য সদা সর্বদা চেষ্টা চালিয়ে যেতেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরির সুপারিশ সহ গরীব অসহায় ছাত্র-ছাত্রীদের নিজস্ব বৃত্তি দিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করতেন। কত চিঠি লিখেছেন হবিগঞ্জের কৃতি সন্তানদের যাতে তারা এলাকায় বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে জোর তৎপরতা চালিয়ে যান। তবে হবিগঞ্জের মানুষও চৌধুরী আব্দুল হাই চাচাকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করেন। হবিগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ হবিগঞ্জ নাগরিক কমিটির কার্যক্রম করতে গিয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা পেয়েছি চৌধুরী আব্দুল হাই চাচার ব্যক্তিত্বের কারণে।
চৌধুরী আব্দুল হাই ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। তিনি একাধারে রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক। হবিগঞ্জের অনেক সামাজিক কর্মকান্ড, স্কুল-কলেজ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৮৬ সালে মহান জাতীয় সংসদে হবিগঞ্জ-লাখাই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। চাচার সাথে কত স্মৃতি, কত অনুষ্ঠানে দেখা সাক্ষাত, কত রমজান মাসে একসাথে ইফতার, ঈদের আগে ও পরে দেখা সাক্ষাত না হলে ফোন করতেন অথবা লোক মারফতে খবর পাঠাতেন। তিনি স্বমহিমায় হবিগঞ্জের মানুষের হৃদয়ে আসনে স্থান পেয়েছেন। আজ কেবল এসব স্মৃতি। চাচা আজ শারীরিকভাবে অনেকটা অসুস্থ। পরম করুণাময়ের কাছে দোয়া করি তিনি যেন শারীরিকভাবে সুস্থ থাকেন আমাদের মাঝে।