মোহাম্মদ আলী সরকার, শায়েস্তাগঞ্জ থেকে ॥ শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রীজ সংলগ্ন চুনারুঘাট উপজেলাধীন উবাহাটায় সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট এন্ড এডুকেশন নামে ভূয়া এনজিও (গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্প) গ্রাহককে স¦ল্প সুদে ঋণ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শায়েস্তাগঞ্জ ইউনিয়ন, ব্রাহ্মনডোরা ইউনিয়ন, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নসহ কয়েকটি ইউনিয়নের অন্তত ২শত নারী ও পুরুষ গ্রাহকের নিকট হতে আনুমানিক ২৮ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ওই এনজিও অফিসে ঋণ নিতে এসে এনজিও অফিস তালাবদ্ধ দেখতে পেয়ে চিন্তিত ও হতাশ হয়ে পড়েন শতাধিক নারী-পুরুষ গ্রাহক। পরে ওই অফিসের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মোঃ জিয়াউল হককে তার মোবাইল ফোন ০১৩২৯৮৯৬৮৭১ নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনাটি শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রীজ ও আশপাশ এলাকায় জানাজানি হলে শত শত লোক ওই এনজিও অফিসটির সামনে ভিড় জমান। এ ব্যাপারে ওই এনজিও অফিস বিল্ডিংয়ের মালিক মোঃ জাহাঙ্গির মিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে আলাপকালে তিনি জানান, এনজিও অফিস কর্মকর্তারা চলতি মাসের ১তারিখ হতে ২য় তলায় এক ইউনিট ভাড়া নিয়েছে। তাদের সাথে দু-তিন দিনের মধ্যে ভাড়া নামা চুক্তিপত্র হওয়ার কথা ছিল কিন্তু হয়নি।
এ ব্যাপারে প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী গ্রাহক শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নিশাপট গ্রামের আইয়ুব আলীর পুত্র হেলাল মিয়া জানান, তিনি কয়েকদিন পূর্বে অফিসে এসে বিল্ডিং মালিকের সাথে আলাপ করলে বিল্ডিং মালিক তাকে অভয় দিয়ে বলেন, এনজিও কর্মকর্তারা ১০বছরের জন্য আমার বিল্ডিং ভাড়া নিয়েছে। এক বছরের ভাড়া অগ্রিম দিয়েছে। তারা কোটি কোটি টাকা নিয়ে এসেছে কোন সমস্যা নেই আপনারা ঋণ নিতে পারেন। হেলাল মিয়া আরো জানান, বিল্ডিং মালিকের কথায় বিশ্বাস করে তিনি এক লাখ টাকা ঋণ নেয়ার আশায় এনজিও মাঠকর্মী রবিউল ইসলামের নিকট ৮হাজার ৫০টাকা নগদ সঞ্চয় জমা দেন। বৃহস্পতিবার ২হাজার ৯শত ৫০টাকা জমা দিয়ে ১লাখ টাকা ঋণ নিতে এসেছি কিন্তু অফিস তালাবদ্ধ থাকায় এখন কাউকে খুজে না পেয়ে তিনি হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন।
প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী গ্রাহক শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়নের নার্গিস আক্তার জানান, এনজিও কর্মকর্তারা তার এলাকায় গিয়ে স্বল্প সুদে অর্থাৎ এক লাখ টাকা ঋণ দিয়ে ২বছরে পরিশোধ করতে হবে এবং ২বছরে তারা ১০হাজার টাকা লভ্যাংশ নিবে। এইসব কথা বলায় তার এলাকার আরো ২০/৩০জন গ্রাহক ঋণ নেয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি ১ লাখ টাকা ঋণ নেয়ার আশায় ঘরের পালিত ছাগল ও হাসঁ মুরগি বিক্রি করে তাদের হাতে ২/৩কিস্তিতে ১১হাজার টাকা সঞ্চয় জমা দিয়েছেন। তিনি গতকাল অফিসে ১লাখ টাকা ঋণ নিতে এসে অফিস তালাবদ্ধ দেখতে পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তিনি আরো জানান, তার মতো এলাকার আরো ২০/৩০জন গ্রাহকের নিকট হতে ওই এনজিও কর্মকর্তারা ঋণ দেয়ার কথা বলে কয়েক লাখ টাকা নিয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নের শরিফাবাদ গ্রামের প্রতারণার শিকার গ্রাহক জরিনা জানান, ওই এনজিও কর্মকর্তারা তার কাছ থেকে ১লাখ টাকা ঋণ দেয়ার কথা বলে ১১হাজার টাকা সঞ্চয় নিয়েছে। গতকাল তিনি এনজিও অফিসে ঋণ নিতে এসে অফিস তালাবদ্ধ দেখে চিন্তিত ও হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন।
ঋণ নিতে আসা প্রতারণার শিকার অনেক গ্রাহক জানান, কেউ কেউ ঋণ পাওয়ার আশায় সুদের উপর টাকা এনেছেন আবার কেউ কেউ ঘরের ছাগল, ভেড়া বিক্রি করে সঞ্চয়ের টাকা যোগাড় করেছেন। গ্রাহকরা জানান, অন্তত ২শতাধিক গ্রাহকের আনুমানিক ২৮ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে ওই ভূয়া এনজিও। ওই ভূয়া এনজিওর একজন কর্মকর্তাকেও এলাকায় ও তাদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী গ্রাহকরা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।