চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার হাতুন্ডা গ্রামের বাসুদেব বাড়ির শ্রী শ্রী বাসুদেব মন্দিরের চলতি বাংলা ১৪২৭ সনের উৎসব আয়োজন নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। আগামী ২৪ জানুয়ারি থেকে উৎসব শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তবে দুইগ্রুপের দীর্ঘদিনের দ্বন্ধের কারণে এবার উৎসবের আয়োজন নিয়ে উভয়পক্ষই মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। মন্দির ও উৎসেবর লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে বিগত কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রনয় পাল ও তার ভাই বিধান পালের বিরুদ্ধে। ফলে গত ৪ বছর ধরেই প্রনয় পালকে ছাড়া উৎসব পালন করছেন তারা। গত ৪ বছর ধরে এ সমস্যা চলে আসলেও চলতি বছর মন্দির কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রনয় পালের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ থাকায় তাকে নিয়ে এবার উৎসব করতে চান না হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অধিকাংশ নেতা। এ নিয়ে সম্প্রতি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একাংশ হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে প্রনয় পালের বিরুদ্ধে ৮১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনেন। বাসুদেব মন্দির পরিচালনা কমিটির সাবেক সেক্রেটারী প্রণয় কুমার পাল এবং কোষাধ্যক্ষ বিধান রঞ্জন পালের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়। তারা দীর্ঘ ২২ বছর যাবত অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতার অপব্যহার করে উক্ত মন্দিরের ৮১ লাখ আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে মন্দিরের ভক্তবৃন্দের পক্ষে সুদীন্দ্র করসহ অনেকেই জেলা প্রশাসক, জেলা দুর্নীতি দমন ব্যুরোসহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রনয় পালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
এ প্রেক্ষিতে গত ৯ জানুয়ারি বাসুদেব বাড়ি সংলগ্ন মাঠে এক সভায় সুধীন্দ্র করকে আহবায়ক করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট বাৎসরিক উৎসব পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্য করা হয়, সত্যেন্দ্র চন্দ্র দেব (নারায়ন) শংকর পাল চৌধুরী, সত্যেন্দ্র চন্দ্র দেব, স্বপন কুমার দেব, বিজন কুমার দেব, বীরেন্দ্র দাশ মিলন, ফলেন ভৌমিক, রিপন দেব, সনজিত দেব, প্রজেশ কর প্রশান্ত, বিজয় দেব, সৌরত দেব, সুমন দেব, রতিন্দ্র দেব, রাজু কর, সৈকত কর, বিশাল পাল চৌধূরী, বাসু চন্দ্র দেব, গৌতম গোপ ও শংকর পালকে।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সত্যজিত রায় দাশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সজল দাশসহ ৫ জনকে ডেকে কমিটি করার বিষয়ে তাগিদ দিলে তারা প্রনয় পাল ও বিধান পালকে বাদ দিয়ে যে কাউকে দিয়ে কমিটি গঠনের কথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়ে দেন। কিন্তু জেলা প্রশাসন থেকে গত ১২ জানুয়ারি সমাজসেবা কর্মকর্তা বারিন্দ্র রায়কে প্রধান করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট মন্দির উৎসব পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। এতে আগের কমিটির ৫ জনসহ প্রনয় পাল ও বিধান পালকে সদস্য রাখা হয়। এনিয়ে ক্ষোভ দেখা দেয় সুদীন্দ্র কর সহ একাংশের মধ্যে। তারা প্রনয় পাল ও বিধান পালকে নিয়ে উৎসব করতে পারবেন না বলে সমাজসেবা কর্মকর্তাকে জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উক্ত কমিটি দিয়ে উৎসব পরিচালনার জন্য তাদের উপর চাপ প্রযোগ করছেন বলে অভিযোগ করেন সুদীন্দ্র কর ও সজল দাশ।
এ বিষয়ে মন্দির কমিটির সাবেক সভাপতি ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সুধীন্দ্র চন্দ্র কর বলেন, বিগত ১৪০৬ বাংলা থেকে ১৪২১ বাংলা পর্যন্ত বিভিন্ন সময় সরকারি অনুদানের টাকা যথাযথভাবে মন্দির উন্নয়নের কাজে ব্যবহার না করে ২৪ লাখ ৩১ হাজার ৬২১ টাকা ভূয়া মাস্টার রোল দাখিলের মাধ্যমে প্রণয় পাল ও বিধান পাল আত্মসাত করেছেন। এ ছাড়া মন্দিরের প্রণামির বাক্সের টাকাসহ বিভিন্ন সময়ে দেশ ও বিদেশ থেকে বিভিন্ন দাতা ও ভক্তবৃন্দের পাঠানো টাকা আত্মসাত করেন তারা। এমনকি দীর্ঘ ২২ বছর ধরে কমিটি পুনর্গঠন ও অডিট না হওয়ায় স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিলে পরপর কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এক পর্যায়ে বিষয়টি হবিগঞ্জের হিন্দু ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর চুনারুঘাট থানায় বসে আগের কমিটি বাতিল করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত আহ্বায়ক কমিটি থেকে প্রণয় পালকে অব্যাহতি দেয়া হয়।