আল্লামা ফুলতলী রহ: এর ইছালে ছাওয়াব মাহফিল ও কিছু স্মৃতি
মুস্তাফিজুর রহমান আযহারী
আজ শুক্রবার ১৫ই জানুয়ারি ২০২১ উপমহাদেশের প্রখ্যাত বুযুর্গ লক্ষ-লক্ষ ওলামা-কুররাদের শিক্ষাগুরু শামসুল ওলামা আল্লামা আব্দুল-লতীফ চৌধুরী রহঃ এর ১৩তম ওফাত দিবস। এ উপলক্ষে সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার ফুলতলী ছাহেববাড়ি সংলগ্ন বালাই হাওরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের প্রায় ২০ লক্ষাধিক ভক্তবৃন্দের জন্য বিশাল ইছালে ছাওয়াব মাহফিল। কিন্তু দুঃখজনক সত্য হলেও মেনে নিতে হচ্ছে কোভিড-১৯ এর কারণে এ বিশাল সমাবেশ এর আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। স্মৃতির পাতা থেকে বলছি প্রতি বছর এ বিশাল ইছালে ছাওয়াব মাহফিলের প্রস্তুতি চলত প্রায় মাস খানেক আগে থেকেই। মুহিবিবীন-মুরিদীনের মাঝে মুরশিদের বাড়িতে যাওয়ার একটি আবেগ অনুভূতি কাজ করত। সকাল ১০টায় মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে শুরু হত মাহফিলের কার্যক্রম। এরপর খতমে ক্বোরান ও দোয়ার মাধ্যমে শুরু হতো মূল অনুষ্ঠান। এতে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে থাকত খতমে বুখারী, খতমে খাজেগান, দালাইলুল খায়রাত শরীফের খতম, যিকর মাহফিল, বিষয়ভিত্তিক বায়ান ও স্মৃতিচারণ মূলক আলোচনা। মাহফিলে তালিম তারবিয়ত পেশ করতেন আল্লামা ফুলতলী রহঃ এর সুযোগ্য উত্তরসূরী উস্তাযুল ওলামা, ওয়াল মুহাদ্দিসীন, মুরশিদে বরহক হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী। মহাফিলে দেশ-বিদেশের পীর-মাশায়েখ, ওলামা, ইসলামী শিক্ষাবিদ, চিন্তাবিদ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকতেন। বিশেষ করে মিশর কুয়েত, সৌদিআরব, বাহরাইন, ইরাক, ইয়ামেনের প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলারগণ উপস্থিত থেকে মাহফিলের সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দিতেন। কিন্তু এ বছর উপরোল্লেখিত রুটিন মাফিক মাহফিল, বিদেশী মেহমানদের আগমন আমরা দেখব না, তাই খুব কষ্ট হচ্ছে। হযরত আল্লামা ফুলতলী রহঃ ভারতীয় উপমহাদেশে সুপরিচিত এক মহান ব্যক্তিত্ব। ১৯১৩ সালে সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার নিভৃত পল্লী ফুলতলীতে তাঁর জন্ম। প্রায় শতবর্ষব্যাপী জীবন অতিবাহিত করে ২০০৮ সালের ১৫ জানুয়ারি তিনি রাফিকে আলার ডাকে সাড়া দেন। প্রতি বছরের ন্যায় এবার ১৫ই জানুয়ারি বিশাল ইছালে ছাওয়াব মাহফিল হচ্ছে না। লক্ষ লক্ষ মুসলিম জনতাকে বরণ করার জন্য বালাই হাওর প্রস্তুত হয় নাই। মূল স্টেজ, প্যান্ডেল ও প্যান্ডেলের বাইরে বসার জন্য সব মিলিয়ে প্রায় ৪ লাখ বর্গফুট জায়গা প্রস্তুত করা হত। সুষ্ঠভাবে খবার পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত করা হত প্রায় দেড় লাখ বর্গফুটের খাবারস্থান কিন্তু এ বছরে এ আয়োজন হয়নি। জকিগঞ্জ-অটগ্রাম রোডে রতনগঞ্জ বাজারের উত্তর-দক্ষিণ উভয়দিকে গাড়ি পার্কিং এর জন্য বৃহৎ পরিসরে দশটি মাঠ প্রস্তুত করা হত। রতনগঞ্জ বাজার থেকে ছাহেববাড়ি অভিমুখী রাস্তার মুখে মোটর সাইকেল রাখার সু-ব্যবস্থা থাকত। সার্বিক শৃংখলার জন্য প্রায় হাজার খানেক স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণ ও দায়িত্ব বন্টন করত এর কিছুই এবার হচ্ছে না। আইন শৃংখলা বজায় রাখার জন্য পুলিশ, র্যাব ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ দায়িত্ব পালন করত এ বছর এসব উৎসবমুখর নুরানী পরিবেশ দেখা যাবে না। তবে এ বছরে নতুন এক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ৬ই জানুয়ারি বুধবার বাদ মাগরিব থেকে ১৩ই জানুয়ারী বুধবার দিবাগত রাত পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী বার্ষিক খানকার আয়োজন করা হয়েছে তালিম তরবিয়ত পেশ করেছেন হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী বড় ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী, ছাহেবজাদাগণ ও বিশিষ্ট উলামায়ে কিরাম। এ খানকা মাহফিলেও প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ উপস্থিত হয়েছেন।
লেখক: খতিব, মোহনপুর উত্তর জামে মসজিদ, হবিগঞ্জ