স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ শহরের বগলা বাজার ও আনোয়ারপুর এলাকাবাসীর মাঝে জমি নিয়ে সৃষ্ট ভয়াবহ বিরোধ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির এমপি’র প্রচেষ্টায় নিষ্পত্তি হয়েছে। গত ৩ অক্টোবর দিনভর সালিশের মাধ্যমে বিরোধ মিমাংসার পর গতকাল বুধবার সংসদ সদস্যের বাসভবনে জমির দলিল এবং ক্ষতিপূরণের টাকা হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্য দিয়ে হবিগঞ্জ শহরবাসী ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থেকে রক্ষা পেলেন বলে মন্তব্য করেছেন সালিশে উপস্থিত মুরুব্বীয়ান এবং এলাকাবাসী।
জানা গেছে, হবিগঞ্জ শহরের বগলা বাজার এলাকার বাসিন্দা পিনাকী চৌধুরী ও তার ভাই প্রায় এক মাস পূর্বে পাঁচ শতাংশ জায়গা মৌখিকভাবে বিক্রি করেছিলেন একই এলাকার দীজু বণিকের নিকট। কিন্তু পরবর্তীতে তারা কিছু অধিক মূল্য পেয়ে বায়নামূলে ওই জায়গা বিক্রি করে দেন আনোয়ারপুর এলাকার সেজু মিয়াসহ কয়েকজনের কাছে।
এই খবর জানাজানি হলে বগলাবাজারের হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। কারণ পিনাকী চৌধুরীর বাসার ভিতরে একটি লক্ষ্মী নারায়ন মন্দির বিদ্যমান। যুগ যুগ ধরে বগলা বাজারের সনাতন ধর্মের মানুষ এই মন্দিরটি ব্যবহার করে আসছিল। এরপর বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে বগলা বাজারের বণিক সম্প্রদায়ের লোকজন হবিগঞ্জ মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের শরণাপন্ন হন।
মন্দিরটি সংরক্ষণ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার স্বার্থে মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দসহ বগলা বাজারের বণিক সম্প্রদায় দীজু বণিককে জায়গাটি ফিরিয়ে দিতে সেজু মিয়াসহ আনোয়ারপুরবাসীকে অনুরোধ জানান। মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের অনুরোধ রক্ষা না করে আনোয়ারপুরের সেজু মিয়া বিরোধীয় ভূমিটি গত ১৭ সেপ্টেম্বর দলিলমূলে রেজিস্ট্রি করে নেন। এই বিষয়টি জানাজানি হলে বগলা বাজার হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তারা রাতেই দলবেঁধে সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির এর বাসায় এবং পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সশরীরে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য আবেদন করেন।
এমপি আবু জাহির তাৎক্ষণিক বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে পুনরায় মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের মাধ্যমে বিরোধটি নিষ্পত্তির জন্য উদ্যোগ নেন। বিগত ৩ অক্টোবর এই বিরোধ মিমাংসায় এমপি আবু জাহির এর বাসভবনে তাঁর সভাপতিত্বে দিনব্যাপি সালিশ অনুষ্ঠিত হয়। সালিশে মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব রইছ মিয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওসমান গণি, বর্তমান সভাপতি সামছু মিয়া, সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন, বিশিষ্ট মুরুব্বী অহিন্দ্র দত্ত চৌধুরী, জগদীশ চন্দ্র মোদক, মোঃ সজিব আলী, মোঃ আরব আলী, স্বরাজ রঞ্জন বিশ্বাস, নলিনী কান্ত রায় নিরু, শংকর পাল, ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন, শঙ্খ শুভ্র রায়সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। সভায় ৪৯ জন মুুরুব্বী বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সালিশে উন্মুক্ত মতামত প্রদান করেন। এরপর হবিগঞ্জের সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে সালিশের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেন এমপি আবু জাহির। সিদ্ধান্তে সেজু মিয়া জায়গাটি দলিলমূলে দীজু বণিকের নিকট হস্তান্তর করবেন, দীজু বণিক জমির মূল্য ৯৫ লাখ টাকার পাশাপাশি সেজু মিয়াকে পূর্বের রেজিস্ট্রি’র ক্ষতিপূরণ বাবত আরও ১০ লাখ টাকা ফিরিয়ে দিবেন এবং মন্দিরটি দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে থাকার সিদ্ধান্ত দেন তিনি।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার বিকেলে এমপি আবু জাহির এর বাসভবনে জায়গাটির রেজিস্ট্রিকৃত দলিল দীজু বণিকের নিকট হাস্তান্তর করা করেন সেজু মিয়া এবং সেজু মিয়াকে ক্ষতিপূরণ বাবত ১০ লাখ টাকা সমজিয়ে দেন দীজু বণিক। একই সঙ্গে ২৩ অযুতাংশ ভূমি দীজু বণিক মন্দিরের নামে দানপত্র করে দেন।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com