ধর্ষিতার মোবাইল ফোনের ডিসপ্লে নষ্ট করে সিম খুলে নিয়ে যায় ধর্ষকরা ॥ পুলিশের কাছে ধর্ষিতার ভিন্নধর্মী বক্তব্যে ধুম্রজাল সৃষ্টি ॥ এএসপি পারভেজ চৌধুরী বললেন, আমরা নিভিরভাবে তদন্ত করে শীঘ্রই মূল ঘটনা উদঘাটন করব

মতিউর রহমান মুন্না, নবীগঞ্জ থেকে ॥ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে এক গৃহবধূকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের একটি পরিত্যক্ত ভবনে। ভিকটিমের ভাষ্য অনুযায়ী রবিবার দিবাগত রাতভর তাকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে ঘটনাটি জানাজানির পর দিনব্যাপী চলে নানা নাটকীয়তা। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশের এএসপি, ওসিসহ একাধিক কর্মকর্তা। পুলিশকে দেয়া জবানবন্দিতে একেকবার একেক ধরণের তথ্য দিচ্ছেন মহিলা। এতে পুলিশ বিভ্রান্তিতে রয়েছে। বিভিন্ন সূত্র মতে ঘটনার সাথে জড়িত কয়েকজন যুবক সিএনজি শ্রমিক। অনেকেই এ ঘটনাকে রহস্যজনক বলে মনে করছেন। এ ঘটনায় এলাকায় চলছে আলোচনার ঝড়।
অনুমানিক ৩০ বছর বয়সী ওই গৃহবধূর অভিযোগ, রবিবার সন্ধ্যায় তিনি সিএনজি অটোরিকশা যোগে শেরপুর থেকে মজলিসপুর যাচ্ছিলেন। এ সময় মজলিসপুর নামিয়ে না দিয়ে গৃহবধূকে হাত-পা, মুখ বেধে রাতভর বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায় সিএনজি শ্রমিকরা। পরে আউশকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের একটি পরিত্যক্ত ভবনে এনে তাকে সঙ্ঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়। সারা রাত ধর্ষণ করে সকালে সিএনজি যোগে আবার তাকে আত্মীয়র বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর স্থানীয় কিছু মাতব্বর ও জনপ্রতিনিধিরা আপস রফার চেষ্টা চালায়। সিএনজি শ্রমিকদের মাঝেও গ্রুপিং থাকায় সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হয়ে যায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গণধর্ষণের ঘটনাটি ভাইরাল হলে নবীগঞ্জ-বাহুবলের সার্কেল এএসপি পারভেজ আলম চৌধুরী ও নবীগঞ্জ থানার ওসি মোঃ আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের দুইটি টিম ঘটনাস্থলে পৌছে ভিকটিম গৃহবধূকে উদ্ধারসহ তার বক্তব্য সংগ্রহ করেন। এ সময় সংবাদকর্মী ও পুলিশের সামনে ধর্ষিতা গৃহবধূ একেক সময় একেক ধরনের বক্তব্য দেন। কখনও বলেন ৭ জন তাকে ধর্ষণ করেছে কখনও বলেন ৩জন তাকে ধর্ষণ করেছে। আবার কখনও তিনি ২১ থেকে ১৪ জন তাকে ধর্ষণ করেছে বলে বক্তব্য দেন। ফলে তার বক্তব্য নিয়ে পুলিশ ও উপস্থিত জনসাধারণ ও সংবাদকর্মীদের মধ্যে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়। গৃহবধূ আরো জানান, ধর্ষকরা তার মোবাইল থেকে সিম খুলে নিয়ে গেছে এবং মোবাইল ফোনের ডিসপ্লে নষ্ট করে গেছে।
এ ব্যাপারে আউশকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান হারুন জানান, ওই মহিলার অসংলগ্ন বক্তব্যে আমরা বিষয়টি নিয়ে ধুম্রজালের মধ্যে পড়েছি।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ-বাহুবলের সার্কেল এএসপি পারভেজ আলম চৌধুরী বলেন, ওই গৃহবধূর ভিন্নধর্মী বক্তব্যের জন্য মুল ঘটনাটি উদঘাটন করতে আমাদের বিলম্ব হচ্ছে। আমরা নিভিরভাবে তদন্ত করে মুল ঘটনা উদঘাটনের চেষ্টা করছি। অতিদ্রুত সময়ের মধ্যেই মূল ঘটনা উদঘাটন হবে বলে আমরা আশাবাদী।
এদিকে সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঘটনার সঠিক তথ্য পেতে ভিকটিম ও তার স্বামীকে থানা হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। মামলা দায়ের বা কাউকে আটক করার তথ্য পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে সূত্র বলছে, ধর্ষিতা নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের কালাভরপুর গ্রামের বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার সৈয়দপুর বাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। কয়েকদিন আগে তিনি রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় এলাকায় চলছে নানা আলোচনা।