চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ উচ্চ আদালত ও সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কড়া নির্দেশনার পরও থামছে না অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। কোন ধরনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই হবিগঞ্জের চুনারুঘাট এলাকার খোয়াই ও করাঙ্গী নদীর গর্ভ থেকে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী বালু কারবারিরা।
নদীর পাড়ে বালু ফেলার ফলে নষ্ট হচ্ছে পাড়ের ফসলি জমি। এমনকি ট্রাক, ট্রাক্টর, এস্কেভেটর মেশিন নদীর তীরে নেয়ার জন্য নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্বিচারে কাঁটছে তারা। সেতুর এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ থাকলেও সেতুর আশপাশেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। অবৈধ এই কারবার বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বার বার জরিমানা করলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। প্রভাবশালী এই বালু কারবারিদের ভয়ে স্থানীয় লোকজন কিছু বলতে সাহস পাচ্ছেন না।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কাজিরখিল খোয়াই সেতু, পাকুড়িয়া খোয়াই সেতু, রাজার বাজার খোয়াই সেতু, সাটিয়াজুরী করাঙ্গী নদী এলাকাসহ আমকান্দি ঝুঁকিপূর্ণ খোয়াই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় খোয়াই নদীর গর্ভে শতাধিক শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। উপজেলার খোয়াই নদীর সীমানায় ৩০টি পয়েন্ট দিয়ে নদীর পাড়ে ডুকছে ট্রাক্ট, ট্রাক্টর, এস্কেভেটর মেশিন। প্রতিদিন ট্রাক, ট্রাক্টর দিয়ে বালু নেওয়ায় খোয়াই নদীর দু’পাড়ের প্রতিরক্ষা বাঁধ রয়েছে হুমকির মূখে।
চুনারুঘাট উপজেলার খোয়াই নদীর বিভিন্ন অংশে ইজারা নেয়া তিন জন ইজারাদারই সরকারী নিয়ম বহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলন করছেন। তারা বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুসরণ না করে বালু ও মাটি উত্তোলন করছেন। ফলে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার বাঁধ, সেতু ও বাড়িঘর হুমকির মূখে পড়ছে।
এদিকে, কাজিরখিল বাজার, পাকুড়িয়া, কাঁচুয়া ও রাজার বাজারে রাস্তার পাশে বালুর ডিপো করায় রাস্তায় সৃষ্টি হচ্ছে যানযট। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। ২৫ টনি বালু ভর্তি শতাধিক ড্রাম ট্রাক দিয়ে প্রতিদিন বালু পরিবহন করায় এলকার সড়ক মহাসড়কে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ইজারাদারদের ক্ষুদ্র স্বার্থ রক্ষা করতে প্রতি বছর সড়ক মেরামত করতে সরকারের কোটি কোটি টাকার অপচয় হচ্ছে।
এদিকে, ভারতের খোয়াই এলাকা থেকে খর¯্রােতা খোয়াই নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করে চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লা সীমান্তের টেকেরঘাট কুলিবাড়ী এলাকা দিয়ে। কুলিবাড়ী থেকে শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রীজ খোয়াই নদী পর্যন্ত ৩৬ কিলোমিটার নদীর দু-পাড়ের বাঁধ রক্ষা করতে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড খরচ করছে। অথচ প্রতিদিন প্রকাশ্যে এর উপর দিয়ে চলাচল করছে মাটি বোঝাই ট্রাক, ট্রাক্টর।
এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন পরিবেশবাদিরা। তবে দায় নিতে নারাজ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন অগোচরে কাঁটা হচ্ছে বাঁধ। এরা প্রভাবশালী তাই তাদের কিছু করা যাচ্ছে না।
চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সত্যজিত রায় দাশ বলেছেন, অবৈধভাবে যারা খোয়াই নদীর দু’পাড়ের বাঁধ কাঁটছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিলটন চন্দ্র পাল বলেন, যারা বৈধ ইজারা নিয়ে ইজারার শর্ত ভেঙ্গে সরকারি নিয়ম বহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলন করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া অবৈধ বালু পাচারকারিদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
খোয়াই নদীর উভয় পাড়ের বাঁধে ট্রাক, ট্রাক্টর চলাচল বন্ধ, খোয়াই নদী থেকে অবৈধ ভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলন বন্ধসহ রাস্তার পাশে অবৈধ বালুর ডিপো গুলো বন্ধ করতে জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি কামনা করছেন এলাকার ভূক্তভোগী জনগণ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক চুনারুঘাটের কৃতিসন্তান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, খোয়াই নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে নদী মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। সরকারের কঠোর নির্দেশনার পরেও বালু উত্তোলন বন্ধ করা যাচ্ছে না। স্থানীয় প্রসাশন ও জনপ্রতিনিধিগনকে যৌথভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে এগিয়ে আসতে হবে।