মন্তব্য প্রতিবেদন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির এমপিকে ধন্যবাদ

নতুন উচ্চতায় আজ হবিগঞ্জ। এখন অন্ততঃ বলা যাবে না অবহেলিত হবিগঞ্জ। একটি জেলার উন্নয়নের অন্যতম মাপকাটি হলো একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। সেই হিসেবে হবিগঞ্জবাসী গর্ব করতেই পারে। আরো গর্বের বিষয় হলো হবিগঞ্জ হলো বাংলাদেশের মধ্যে ৭ম জেলা যেখানে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হচ্ছে। গতকাল জাতীয় সংসদে হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০২০ পাস হয়েছে। এর পূর্বে যে ৬টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে স্থাপিত হয়েছে সেগুলো হলো বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ (১৯৬১ সাল), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুর (১৯৯৮ সাল), শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা (২০০১ সাল), চট্টগ্রাম ভেটেরেনারী এন্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৬ সাল), সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৬ সাল) ও খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৯ সাল)। আর ২০২০ সালে ৭ম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হতে যাচ্ছে হবিগঞ্জে। আরেকটি ব্যাপার লক্ষ্যনীয় ইতোপূর্বে যে ৬টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে তার ১টি রাজধানী ঢাকাতে, ৪টি বিভাগীয় সদরদপ্তরে ও ১টি গাজীপুর জেলায়। সে হিসেবে হবিগঞ্জবাসী আরো গর্ব করতে পারে হবিগঞ্জ জেলা দেশের ৭ম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়টি পেয়েছে। আর এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও এ দাবি আদায়ে যিনি সবচেয়ে ভূমিকা পালন করেছেন হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহিরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
প্রধামমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর যখন হবিগঞ্জের জনসভায় ও উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করতে আসেন তখনই অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর লেটারহেড প্যাডে স্বাক্ষর করে ৪টি দাবি সম্বলিত একটি পত্র দেন। ৪টি দাবি ছিল হবিগঞ্জে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারী মেডিক্যাল কলেজ, শায়েস্তাগঞ্জকে উপজেলায় রূপান্তর ও বাল্লা স্থল বন্দর স্থাপন। পরে তাঁর বক্তব্যেও দাবি ৪টি তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে ৪ টি দাবি বাস্তবায়নের ঘোষনা দিলে হবিগঞ্জের নিউফিল্ডের লাখো জনতা আনন্দিত ও উচ্ছসিত হন।
দেশের ২য় গোপালগঞ্জ খ্যাত হবিগঞ্জের জনগণের আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি প্রত্যাশাও বেশি। ইতোমধ্যে সরকারী মেডিক্যাল কলেজ কার্যক্রম শুরু করেছে। শায়েস্থাগঞ্জ উপজেলায় পরিণত হয়েছে। বাল্লা স্থল বন্দরও বাস্তবায়নের পথে। আর ঘোষণার ৬ বছর পর জাতীয় সংসদে হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০২০ পাস হলো। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ আব্দুল মালেক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা তথা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য প্রথম অনুলিপি হবিগঞ্জের সদর আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহিরকে প্রদান করেন। পরবর্তী দ্বিতীয় অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব ও তৃতীয় অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক-৪ কে প্রদান করেন। হবিগঞ্জের অপর কোনো সংসদ সদস্যকে সেই আদেশের কপি সরবরাহ করা হয়নি। সেজন্য অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহিরের উপরই বর্তায় ফাইল নিয়ে এক মন্ত্রণালয় থেকে আরেক মন্ত্রণালয়ে ছুটোছুটি করার দায়িত্ব। এ ৬ বছরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইল এক মন্ত্রণালয় থেকে আরেক মন্ত্রণালয়ে গিয়েছে। শিক্ষা, কৃষি, অর্থ ও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আইন প্রণয়নে সরাসরি জড়িত ছিল। এক মন্ত্রণালয় থেকে আরেক মন্ত্রণালয়ের ফাইল চালাচালি আমাদের দেশের মতো আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনে কতোটা সময়সাপেক্ষ ও জটিল তা সহজেই অনুমেয়। হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির এর ধৈর্য ও পরিশ্রমকে অবশ্যই ধন্যবাদ।
হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপনের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা ও সমতা অর্জন এবং জাতীয় পর্যায়ে কৃষি বিজ্ঞানে উন্নত শিক্ষাদানের পাশাপাশি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রচলিত অন্যান্য বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি এবং নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনসহ দেশে কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার সম্প্রসারণের লক্ষে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে হবিগঞ্জ জেলায় এই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরুতে যে অনুষদগুলো থাকবে তা হলো- কৃষি অনুষদ, মৎস্য অনুষদ, প্রাণি চিকিৎসা ও প্রাণিসম্পদ বিজ্ঞান অনুষদ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ। আর এসব অনুষদের অধীনে থাকে অনেকগুলো বিভাগ। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটের সুপারিশক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন অনুমোদন দিবে। যুগের চাহিদায় পরবর্তীতে অনুষদ বাড়াতে হলে আবার জাতীয় সংসদে আইনটির সংশোধন আনতে হবে।
এখন আইনটি গেজেট আকারে প্রকাশের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় আইনানুযায়ী হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিবে। স্থান নির্ধারণে কমিটি হবে। বাজেট একনেকে পাস হতে হবে। এ যাবত কালে স্থাপিত অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতায় বলা যায় সরকার হয়তো উপাচার্য, উপ-উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে কোনো অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারে। পরবর্তীতে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মিত হলে সেখানে স্থানান্তরিত হবে। তবে এর সফলতা নির্ভর করে দক্ষ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্ব এবং সুশাসনের উপর। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষাবিদ, দক্ষ, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও স্মার্ট প্রশাসক যেন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিয়োগ দেয়া হয় সরকারের কাছে সেই প্রত্যাশা রইলো। নতুবা শুরুতে মুখ থুবরে পড়বে এর পথ চলা। এগিয়ে যাক হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

-ড. জহিরুল হক শাকিল
অধ্যাপক, পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগ
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।