দুই পা হারানো মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে দরিদ্র পিতা এখন সর্বশান্ত ॥ চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা কামনা
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামি একাডেমি এন্ড হাই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী নদী। স্বপ্ন ছিল পড়াশুনা করে একদিন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে, ডাক্তার হয়ে মানব সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিবে। কিন্তু তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে গেল। একটি দুর্ঘটনা তার সব স্বপ্নকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দিল।
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের রফিক মিয়ার ১০ বছর বয়সী কন্যা নদী আক্তার। গত ১৫ মে সন্ধ্যায় নদীর পার্শ্ববর্তী একটি হোটেলের স্বত্ত্বাধিকারী মর্জিনা খাতুনের বাসায় বেড়াতে যায়। এক সময় শিশুমনে সে বাসার ছাদে উঠলে সেখানে ফেলে রাখা বিদ্যুতের সংযোগের তারে জড়িয়ে পড়ে সে। বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হয়। তাৎক্ষণিক স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। সিলেটে কয়েকদিন চিকিৎসার পর তার শারিরীক অবস্থার আরো অবনতি হয়। এক পর্যায়ে সেখানকার চিকিৎসকরা আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য নদীকে ২৭ মে ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠান। সেখানেও অবস্থার অবনতি হওয়ায় ৪ জুন চিকিৎসকরা বাধ্য হয়ে তার হাঁটুর নিচ থেকে দুই পা কেটে ফেলেন। সে দিন থেকে নদী আক্তার চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়।
শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামি একাডেমি এন্ড হাই স্কুলের শিক্ষক আব্দুর রকিব জানান, নদী খুবই মেধাবী একজন ছাত্রী। পড়াশুনায় তার প্রচন্ড আগ্রহ ছিল। সে সহপাঠীদের প্রায়ই বলতো বড় হলে সে মানব সেবা করতে ডাক্তার হবে। কিন্তু তার সে স্বপ্ন পূরণ হলো না। একটি দুর্ঘটনা তার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে দিল।
নদীর বাবা রফিক মিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায়- দুর্ঘটনার পর থেকে নদীর চিকিৎসার খরচ জোগান দিয়ে বর্তমানে সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন তিনি। আর্থিক সঙ্কটের কারণে নদীর চিকিৎসা প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। জায়গা-জমি যা ছিল তা বিক্রি করে তিন মাস ধরে মেয়ের চিকিৎসা করাচ্ছেন। ইতিমধ্যে তার প্রায় ১৭/১৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। তার বর্তমান অবস্থা তেমন ভাল নয়। সম্প্রতি ডাক্তার তাকে ২০ দিনের জন্য বাড়িতে নিয়ে আসার পরামর্শ দেন। সেই অনুযায়ী তাকে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন। আজ মঙ্গলবার আবার তাকে চিকিৎসার জন্য শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাবেন। ডাক্তাররা জানিয়েছেন আরও অন্তত দেড় বছর তাকে চিকিৎসা করাতে হবে। তিনি বলেন- নিজের সহায় সম্বল ও আত্মীয় স্বজনের সহযোগিতায় মেয়ের চিকিৎসা করিয়েছি। এখন আর তার চিকিৎসা খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন- আমার নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও যদি মেয়েটির পা থাকতো তাহলে আমি তা করতে দ্বিধাবোধ করতাম না। তিনি আশায় বুক বেধে আছেন নদী আবারও সুস্থ হয়ে বিদ্যালয়ে যাবে, লেখাপড়া করবে। ইতোমধ্যে রফিক মিয়া শেষ সম্বল জায়গা জমি বিক্রি করে সর্বশান্ত। উন্নত চিকিৎসার অভাবে শিশু নদী এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এমতাবস্তায় অসহায় পিতা রফিক মিয়া তার প্রিয় সন্তানের সুচিকিৎসার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন। কেউ সহায়তা করতে চাইলে ০১৭৩৭৪৫৮৫৩৯ (বিকাশ) অথবা একাউন্ট নং ৬৯৬৮, হিসাবের শিরোনাম রফিক মিয়া ইসলামী ব্যাংক শায়েস্তাগঞ্জ শাখায় সহযোগিতা পাঠাতে পারেন।