আজমিরীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে চোরাই ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে কুশিয়ারার কালনী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বেশ কিছুদিন ধরে লোকজনের নিকট বিক্রি করে আসছে একটি অসাধু বালুখেকো চক্র। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ২৩ আগস্ট এবং ২৪ আগস্ট অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলনের সরঞ্জাম অর্থাৎ ১ হাজার ৫শ’ ফুট পাইপ, মেশিন সহ ট্রলার জব্দ ও ধ্বংস করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) উত্তম কুমার দাস।
সূত্র জানায়, চলমান নদীর তলদেশ থেকে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু ওই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এলাকার একটি অসাধু চক্র কুশিয়ারার কালনী নদীর তলদেশ থেকে বেশ কিছুদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। এ চক্রটি বিভিন্ন এলাকার ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট প্রতিফুট বালু ১২ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করছে। গত এক সপ্তাহ পূর্বে উপজেলার ৪নং কাকাইলছেও ইউনিয়নের বদলপুর গ্রামে, গত শনিবার আজমিরীগঞ্জ পৌরসভাধীন মালুম মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শুক্রীবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশকিছু স্থানে বালু ভরাট করে ভিটা নির্মাণের কাজ করে চক্রটি। বিগত কয়েকদিনে উল্লেখিত জায়গা সমূহে উত্তোলনকৃত মাটির পরিমাণ অনুমানিক ৩ লাখ ঘনফুট। প্রতি ঘনফুট ১৫ টাকা হিসেবে ৩ লাখ ঘনফুট বালুর বিক্রয় মূল্য ৪৫ লাখ টাকা।
এরই ধারাবাহিকতায় ২৩ আগস্ট দুপুরে ওই চক্রের লোকজন আজমিরীগঞ্জ পৌর এলাকার সমীপুর (কুমারহাটী) গ্রামের অদূরে কাকাইলছেও-আজমিরীগঞ্জ রাস্তা সংলগ্ন নীচু স্থানে চোরাইভাবে বালু ভরাট করে ভিটা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এরই প্রেক্ষিতে কুশিয়ারা কালনী নদীর তীর থেকে কাকাইলছেও-আজমিরীগঞ্জ রাস্তা অতিক্রম করে ভিটা অবদি পাইপ সংযোগ দেয়। একই দিন বিকাল অনুমানিক ৪টায় বালুভর্তি বড় ট্রলার এসে আনলোড করার কাজ শুরু করে।
২৪ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মতিউর রহমান ৪নং শিবপাশা ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে ২টি ড্রেজার মেশিন এবং ৬ হাজার মিটার পাইপ জব্দ এবং ধ্বংস করেন। সেই সাথে তিনি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে অবৈধ বালু উত্তোলনের দায়ে নজরুল মিয়াকে (৪৩) ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।
সূত্র জানায়- অসাধুচক্রের লোকজন কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের আব্দুল্লাপুরের অদূরে কুশিয়ারার কালনী নদীর তলদেশ থেকে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছিল। এ ছাড়া একই এলাকার মিটামইন ও ইটনা এলাকা থেকেও বালু উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে এ চক্রের বিরুদ্ধে। এরা বালু ভরাটের নির্ধারিত স্থানে তড়িঘড়ি করে পাইপ সংযোগ দিয়ে একই সময় বালু ভরাট করে, পাইপ খোলে নিয়ে আবার সাথে সাথে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যায়। যার কারণে ওই চক্র সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে বরাবরই।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলার ২নং বদলপুর ইউনিয়নের পাহাড়পুর বাজারের বাঁশ মহাল এলাকায় ২৩ আগস্ট সকাল থেকে পাহাড়পুরের একটি বালুখেকো চক্র নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে নদীর অপর পাড় পাশর্^বর্তী শাল্লা উপজেলার প্রতাপপুরে উত্তোলিত বালু ১০ হাজার ঘনফুট বালু ধারণক্ষমতা সম্পন্ন নৌকার মাধ্যমে আনলোড করে দিনভর। সূত্র মতে, ২৩ আগস্ট এক দিনে প্রায় ১ লক্ষ ঘনফুট বালু উত্তোলন করেছে তারা। বিষয়টি স্থানীয় কিছু লোকজনের নজরে আসলে তারা বালু উত্তোলনে বাধা দেয়। তারা বলেন- নদী থেকে এভাবে বালু উত্তোলন করলে ফসলি জমি ও বসতভিটা নদী ভাঙনের কবলে পড়বে। এসময় ড্রেজার চালকরা স্থানীয়দের সাথে খারাপ আচরণ করেন। কিন্তু সোমবার সকাল ১১টায় মেশিনটি উজানের দিকে চলে যায়।
এমন অনিয়মে নীরব থাকা নিয়ে অভিযোগের আঙুল উঠছে ২নং বদলপুর ইউনিয়নের তহসিলদার আব্দুস সালামের দিকে। মুঠোফোনে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- ‘সুনামগঞ্জের ইউএনও সাহেব মাটি উঠাতে বলেছেন, আমি কি তাদের সাথে লাঠি মারবো।’ একথা বলতে বলতে তিনি উত্তেজিত হয়ে উল্টো তাকে প্রশ্ন করার কারণ জানতে চান। তখন আব্দুস সালামকে প্রশ্ন করা হয়- ‘আপনি যেহেতু এখানকার দায়িত্বে আছেন আপনার তো বিষয়টি জানার কথা, আপনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কি বিষয়টি জানিয়েছেন?’ উত্তরে তহসিলদার আব্দুস সালাম উত্তেজিত হয়ে বলেন- ‘জানিয়েছি সবাইকে।’
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) উত্তম কুমার দাস বলেন- গতকাল খবর পেয়ে অভিযান পরিচালনা করে সরঞ্জামাদি জব্দ এবং ধ্বংস করা হয়েছে। আর পাহাড়পুরের বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন- ‘তহসিলদার যেহেতু দায়িত্বে আছেন অবশ্যই উনি দেখবেন। এছাড়া সুনামগঞ্জের ইউএনও যদি বলতেন তাহলে অবশ্যই অফিসিয়ালি আমরা জানতাম, আর এদের যদি কাগজপত্র থাকতো তাহলে পালাবে কেনো?’
ফোনে তহসিলদার আব্দুস সালামের উত্তেজিত হওয়ার বিষয়টি তাঁকে জানালে তিনি বলেন- ‘বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মতিউর রহমান খাঁন বলেন- অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।