মধ্যরাতে সামাজিকভাবে নিষ্পত্তির চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে পুলিশ
এসএম সুরুজ আলী/স্বপন বণিক ॥ আজমিরীগঞ্জের বিরাট গ্রামে মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় দুই ধর্ষককে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা আদালতে ১৬৪ ধারায় ধর্ষণের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আজমিরীগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব আহমেদ তালুকদারের আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। পরে আদালত তাদের কিশোর সংশোধনাগারে প্রেরণের আদেশ দেন। আটককৃতরা হলো- আজমিরীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মশ্বক আলীর ছেলে বাধন মিয়া (১৬) ও বাধনের চাচাত ভাই মনিরুল ইসলাম (১৫)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বিরাট (ভাটিপাড়া) গ্রামের অধির শীলের ১৭ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী কিশোরী সোমবার বিকেল ৪টার দিকে বাড়ির পিছনে গরুর গোবর উঠাতে যায়। এ সময় প্রতিবেশি বাধন মিয়া ও তার বন্ধু চাচাত ভাই আবুল মিয়ার ছেলে মনিরুল ইসলাম কিশোরীকে প্রলোভন দেখিয়ে বাধনদের গোয়ালঘরে নিয়ে মুখে গামছা বেধে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। কিশোরীর মা হেলেন শীল তাকে না পেয়ে খুঁজতে থাকেন। এক পর্যায়ে কিশোরীর শোর চিৎকার শুনে গোয়ালঘরে প্রবেশ করে দেখতে পান লম্পট বাধন মিয়া ও মনিরুল প্যান্ট পরছে। আর গোয়ালঘরে মুখে গামছা বাধা অবস্থায় পড়ে আছে তার মেয়ে। এ সময় হেলেন শীল চিৎকার করলে বাধন ও মনিরুল পালিয়ে যায়। ধর্ষিতার মার চিৎকার শুনে বাধন ও মনিরুলের বাবা-মাসহ স্বজনরা এগিয়ে আসে। এ সময় ধর্ষিতা কিশোরীর মা হেলেন শীল বিষয়টি বাধন ও মনিরুলের মা-বাবাসহ পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসীকে অবগত করেন। পরে সামাজিকভাবে নিস্পত্তির জন্য ধর্ষিতার মা-বাবাকে ধর্ষকদের পরিবারের পক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টি করা হয়। রাত ১২টা পর্যন্ত ঘটনাটি সামাজিকভাবে নিস্পত্তির চেষ্টা চলছিল। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ কিশোরীর মা ঘটনাটি আজমিরীগঞ্জ থানা পুলিশকে অবগত করেন। তাৎক্ষণিক এসআই জয়ন্ত তালুকদার ও এএসআই জাহাঙ্গীরসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ধর্ষিতা কিশোরীকে উদ্ধার করে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এ সময় পুলিশ ধর্ষক বাধনের বাবা মশ্বক আলী ও মাকে আটক করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা ঘটনার দায় স্বীকার করেন এবং লম্পটদের সন্ধান দেন। পরে রাত দেড়টার দিকে আজমিরীগঞ্জ থানার এসআই মুফিজুল ইসলাম ও এসআই জয়ন্ত তালুকদারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ উপজেলার শিবপাশা গ্রামে অভিযান চালিয়ে লম্পট বাধন ও মনিরুলকে আটক করে।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বানিয়াচং সার্কেল) শেখ মোঃ সেলিম জানান, প্রতিবন্ধী কিশোরী ধর্ষণের ঘটনাটি সামাজিকভাবে নিস্পত্তির চেষ্টা চলছিল। পুলিশ সংবাদ পেয়ে ধর্ষিতাকে উদ্ধার করে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে এবং ঘটনার সাথে জড়িত দুই ধর্ষককে আটক করে। এ ঘটনায় ধর্ষিতা কিশোরীর মা বাদী হয়ে আজমিরীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাদেরকে আজমিরীগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করা হলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।