গাছগাছালির পাশাপাশি ছাদে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করার পরিকল্পনা

মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ এ. কে. এম নজরুল ইসলাম। হবিগঞ্জ শহরের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ছোট বেলা থেকে কৃষির প্রতি তার অদম্য টান। আর হৃদয়ের সেই টান থেকেই ১৯৯০ সালে শহরের বেবীস্ট্যান্ডস্থ দোকানের ছাদে ছাদ বাগান গড়ে তোলেন। তবে তার পরিসর ছিল সীমিত। সেখানে চাহিদামতো গাছ লাগাতে না পেরে পরবর্তীতে ভাড়া বাসার ছাদে বাগান গড়ে তোলেন। ২০১৬ সালে শহরের মোহনপুরে নতুন বিল্ডিং নির্মাণ করে সেই বাগান স্থানান্তরিত করেন নিজের বাসার ছাদে। আর তাকে এসব কাজে সহযোগিতা করেন স্ত্রী হবিগঞ্জ হাই স্কুল এন্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন পারভিন। বৃক্ষ লতা-পাতা আর প্রকৃতির প্রতি পিতা-মাতার প্রেম দেখে তাদের দুই সন্তানেরও ভালবাসা জাগে ছাদবাগানের বৃক্ষের প্রতি। তাইতো প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে তারা ছাদ বাগানে গিয়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় পার করে। সেখানে বসেই তারা গল্প-গুজব আড্ডা দিয়ে সময় পার করে। প্রকৃতির সাথে মিতালী করে ছাদ বাগানের কোনে বসে বাগানে লাগানো তুলসি ও পুদিনা পাতার চা পান করে হৃদয় জুড়ায়।
এ ব্যাপারে এ প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে নজরুল ইসলাম জানান, বৃক্ষ, ফুল, লতা-পাতা ও পশু পাখির প্রতি তারে হৃদয়ের টান। আর হৃদয়ের টানেই তিনি বাসার ছাদে গড়ে তুলেছেন বাগান। এ বাগানের যতœআত্তি তিনি নিজেই করেন। আর তাকে সহযোগিতা করেন তার স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রী। তিনি প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে ঘন্টা দেড়েক ছাদ বাগানে কাজ করেন। বাগানে লাগানো গাছের যতœ নেন। বিকেলে আবার দোকান থেকে বাসায় ফিরে কিছুটা সময় গাছের সান্নিধ্যে কাঠান। বছর খানেক আগে ছাদ বাগানে তিনি বিদেশী পাখি (যা খাঁচায় আবদ্ধ অবস্থায় পালন করা যায়), কোয়েল, মোরগ, বিভিন্ন প্রজাতির কবুতর লালন পালন শুরু করেন। তাছাড়া ছাদ বাগানের গাছে তিনি কলস বেঁধে দিয়েছেন যাতে দেশি শালিকসহ নানা পাখি বাসা বেঁধে নিয়মিত বাচ্চা ফুটায়। পাখিরা তার গাছের পাকা ফল খেয়ে কিচির মিচির করে। এতে তিনি হৃদয়ে এক অন্যরকম অনুভূতি অনুভব করেন। তিনি জানান, বাগান করার প্রথমদিকে তিনি নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েছেন। বিভিন্ন সময় গাছে ভাইরাস, পোকার আক্রমণসহ নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে তিনি কৃষি অফিসারকে বাসায় এনে তার ছাদ বাগান পরিদর্শন করান এবং সমস্যা উত্তরণের উপায় খুঁজেন। পরবর্তীতে কৃষি অফিসারের পরামর্শে সমস্যা থেকে তিনি অনেকটা পরিত্রাণ পান।
তিনি তার বাগানে নানা প্রজাতির দেশী-বিদেশী ফুল, ফল, মসলা ও শাক সবজির বীজ ও চারা রোপন করেছেন। বর্তমানে এই ছাদ বাগানে মাল্টা, ৩ প্রজাতির পেয়ারা, আতাফল, শরীফা, বারোমাসী আম, কামরাঙা, সফেদা, আপেলকূল, ২ প্রজাতির লেবু, মিষ্টি তেতুল, রসুন পাতা, পুদিনা, মৌরি, লং, বনসাই, পুঁই শাক, ডাটা, বেগুন, ঢেড়স, কচু, করলা, কাকরুল, শসা, কাঁচা মরিচ, নাগা মরিচ, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, চাল কুমড়া, থানকুনি, ধনিয়া পাতা, ক্যাপসিকাম, টমেটো, চিচিংগা, লাল শাক, চেরি ফুল, তুলসী, গোলাপ, বিভিন্ন প্রজাতির পাতা বাহার, চন্দ্র মল্লিকা, ক্রিসমাস ট্রি, পাম, নয়ন তারা, লাভ ইন হার্ট, ৩ প্রজাতির লোটাস (পদ্ম), লাল সালু, ঝাউ, ঝুমকু লতা, কামিনি, পাথর কুচি, সন্ধ্যা মালতিসহ নানা প্রজাতির ফুল, ফল, মসলা ও শাক সবজির গাছ রয়েছে। তিনি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসব ফুল, ফল ও অন্যান্য গাছের চারা সংগ্রহ করেছেন।
এ. কে. এম নজরুল ইসলাম জানান, তিনি তার ছাদ বাগানের গাছের গোড়ায় রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন না। ফলে ছাদ বাগানে উৎপন্ন সকল শাক সবজি ও ফলমূল থাকে বিষমুক্ত এবং স্বাস্থ্য বান্ধব।
সরেজমিন ছাদ বাগানে গিয়ে দেখা যায় বাগানে ফুল, ফল আর শাক সবজি গাছে প্রায় ঠাসা। রয়েছে নানা ঔষধি গাছও। বেশ কয়েকটি পেয়ারা গাছে অসংখ্য পেয়ারা ঝুলছে। বাগানের এক কোনে একটি দেশি পেয়ারা গাছ রয়েছে। যাতে রয়েছে অনন্ত কয়েক শতাধিক পেয়ারা। এর কোনটি পাকা আধ-পাকা। গাছে ঝুলে আছে পাকা শরিফা, লেবুসহ নানা ফল। ছাদ বাগানের এক কোনে রয়েছে বসার জন্য ব্রেঞ্চ যা পাকা করে বানানো। নজরুল ইসলাম জানান, তার দুই মেয়ে। বড় মেয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে লেখাপড়া করছে আর ছোট মেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। তারা দুজন তার ছাদ বাগান খুব বেশি উপভোগ করে। তারা বাগানের নৈসর্গিক পরিবেশে বসে প্রকৃতি উপভোগ করে। বাগানে বসে তুলসী পাতা আর পুদিনা পাতা দিয়ে তৈরী চা পান করে সময় পার করে। ছাদে রয়েছে একটি মাটির চুলা। কখনো সেই চুলায় রান্না করে সবাই আনন্দ করে তা ছাদে বসেই খাওয়া হয়। সে এক অন্যরকম অনুভূতি। নজরুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, ছাদের আয়তন কম হওয়ায় ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তিনি পছন্দের অনেক গাছই লাগাতে পারেন না। তিনি স্বপ্ন দেখেন ভবিষ্যতে ছাদে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করার। এজন্য তিনি সকলের দোয়া কামনা করছেন।