হবিগঞ্জের মুখ রিপোর্ট ॥ সন্তানকে মাদ্রাসায় পড়ানোর স্বপ্ন পূরণ হলো না মর্জিনার। তার আগেই ঘাতক কেড়ে নিল তার প্রাণ। বিলাপ করছিলেন আর এ কথাগুলো বলছিলেন মর্জিনার বোন মাজেদা। মাজেদা আক্তার মর্জিনার বড় বোন। তিনি হবিগঞ্জ সদর উপজেলা আনসার কমান্ডার। শনিবার মাঝরাতে শহরের যশেরআব্দা মোকামবাড়ি সংলগ্ন বাসায় মাজেদা আক্তারের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। এসময় তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, তার বোন মর্জিনা রাতে খাদ্যগুদাম সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে চা খেতে যায়। হঠাৎ তাদের প্রতিবেশি বাচ্চু মিয়ার ছেলে (সম্পর্কে বোনপো) রুবেল তাকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে। সাথে সাথে মর্জিনা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মাজেদার দাবি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার বোনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি আরও জানান- রুবেলকে মর্জিনা নিজের সন্তানের মতো আদর ¯েœহ করতেন। আর সেই রুবেলই বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে। তার বোনকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে।
মর্জিনার বিয়ে হয় শহরের উমেদনগরে। তার স্বামী মোঃ ভিংরাজ মিয়া। তিনি মৎস্য ব্যবসায়ী। বিয়ের পর স্ত্রী সন্তান নিয়ে তিনি শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করতেন। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়ে সবার বড়। বর্তমানে সে সৌদি আরব রয়েছে। ছোট ছেলের বয়স প্রায় ৪ বছর। নাম নাহিদ মিয়া। শিশু নাহিদ জানে না তার মা বেঁচে নেই। ঘটনার পর পাড়াপ্রতিবেশিরা তাদের বাসায় ভিড় করছেন। যে-ই বাসায় যাচ্ছে তার দিকেই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকাচ্ছে শিশু নাহিদ। তার পাশে নানী (মর্জিনার মা) জাহেরা খাতুন বিলাপ করছেন আর সন্তান হত্যার বিচার চাইছেন। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন- মর্জিনাকে নিয়ে আমরা নতুন ঘর নির্মাণ করছি। এখনো ঘরের পুরো নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। তার আগেই ঘাতক রুবেল আমার মেয়ের প্রাণ কেড়ে নিল।
মর্জিনার বোন মাজেদা বলেন- তার বোন ছোট ছেলে নাহিদকে মাদ্রাসায় পড়াতে চেয়েছিল। সবাইকে বলতো নাহিদকে মাদ্রাসায় পড়াবে। তাকে মানুষের মতো মানুষ করবে। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন করতে পারল না।
প্রসঙ্গত- শহরের যশেরআব্দা মোকামবাড়ি এলাকায় পূর্ব বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে মর্জিনা আক্তার (৩৫) নামে এক মহিলা নিহত হন। ঘটনার পর পরই খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় ঘাতক রুবেলের মা রাজিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।