মহামারী করোনা বাংলাদেশে সামাজিক সংক্রমণ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। এখন প্রতিদিনই ক্রমবর্ধমান হারে নতুন রোগী চিহ্নিত হচ্ছে ও হবে। সম্ভবতঃ কিছু রুগী সময়মত পরীক্ষার অভাবে রোগ নির্ণয়ের পূর্বেই স্বাভাবিক সর্দি কাশি বা নিউমোনিয়ার রুগী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন ও মৃত্যুবরণ করছেন। অথচ বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার “ব্যাপক পরীক্ষা” পরিচালনা করে ‘করোনা রুগীদের’ আলাদা করে ফেলার একমাত্র ও মোক্ষম কৌশলটি প্রয়োগে আমরা এখনও সফল হতে পারিনি। এর ফলে মনে হয় প্রচুর রুগীর ধাক্কা এখন আমাদের সামাল দিতে হবে। অতএব, বর্তমান পর্যায়ে আমরা সরকার ও প্রশাসন এর কাছে নি¤œবর্ণিত দাবি জানাচ্ছি:
১. আমরা জানি যে হবিগঞ্জ জেলার অনেক মানুষ ঢাকা, নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গার্মেন্টস, হোটেল, রেষ্টুরেন্ট ও নানান প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি ইতিমধ্যেই হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সরকার ঘোষিত ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল নারায়নগঞ্জসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে ট্রাক এবং অন্যান্য পরিবহন মাধ্যমে অনেক লোকজন জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঢুকছে এবং সামাজিকভাবে মিশে গেছেন। বিষয়টি অত্যন্ত আতঙ্কের। এতে করে এই জেলায় বসবাসকারী মানুষকে চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এমতাবস্থায় জেলার প্রবেশমুখ মাধবপুরসহ লাখাই ও মিরীগঞ্জ উপজেলার নৌপথ বন্ধ একনিষ্ঠ এবং দ্রুত গতিতে দীর্ঘ ‘লকডাউন ও কারফিউ জারী’ করেই এই অঞ্চলের মানুষ বাঁচানোর কাজ করতে হবে।
২. শহরের বিভিন্ন এলাকা আর হাট-বাজারে মানুষের সমাগম দেখে মনে হয় অনেক সাধারণ মানুষ জেনে বা না জেনে তারা সরকারের নির্দেশ অমান্য করছেন। এ বিষয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় কাজটি সম্পন্ন করার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনমনীয় সিদ্ধান্ত অবশ্যই কঠোর ভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়, অবুঝ অসচেতন নাগরিকদের ঘরে থাকা নিশ্চিত করণে সেনাবাহিনী এবং পুলিশের সংখ্যা ও জনতার উপর তাদের চাপ বৃদ্ধি করতে হবে।
৩. সকল দরিদ্র মানুষের নিকট প্রয়োজনমত সরকারী ত্রাণ পৌছানোর সরকারী ব্যবস্থাপনায় আরো দক্ষতা ও দ্রুততা নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে স্থানীয় বন্য প্রাণীদের জন্যও খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
৪. উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যায়ে করোনা রুগী চিহ্নিতকরণের জন্য পরিকল্পিতভাবে ও দ্রুত সকল মানুষের সংক্রমণ পরীক্ষার জন্য আরটি-পিসিআর টেস্ট কিট সরবরাহ ও পরিকল্পনা মাফিক ব্যাপক রুগী চিহ্নিতকরণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
৫. চিকিৎসক ও অন্যান্য চিকিৎসা সেবা কর্মীদের মধ্যে যারা সরাসরি করোনা রোগীর চিকিৎসার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে করোনায় আক্রান্ত হবেন তাদের চিকিৎসা ও আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনামূলক ঝুঁকি ভাতা, স্বাস্থ্য ও জীবন বীমা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৬. পর্যাপ্ত সংখ্যক ও পূর্ণ মানসম্পন্ন সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সংগ্রহ করে তা নিরবিচ্ছিন্ন, সঠিক ও অবারিত প্রক্রিয়ায় চিকিৎসক, চিকিৎসা সেবা, পরিচ্ছন্ন কর্মী, সাংবাদিক ও স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য নিশ্চিত করতে হবে।
৭. হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে সংকটাপন্ন রোগীর চিকিৎসার জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে ‘আই সি ইউ’ এর ব্যবস্থা করতে হবে। আইসোলেশন কার্যক্রমের জন্য আধুনিক ষ্টেডিয়াম, জালাল ষ্টেডিয়াম, কিবরিয়া মিলনায়তন, জেলা পরিষদ মিলনায়তন, শিল্পকলা একাডেমিসহ বৃহৎ হল বা অডিটরিয়ামে ‘ফিল্ড হাসপাতাল’ নির্মাণ করতে হবে এবং প্রয়োজনমত সক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে।
৮. করোনা চিকিৎসায় কর্মরত সকল ডাক্তার, নার্স, স্বেচ্ছাসেবক ও অন্যান্য কর্মচারীদের পরিবহন ও থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের নিজ নিজ পরিবার যেন সংক্রমিত না হয় সেজন্য এই বিচ্ছিন্নকরণ জরুরী প্রয়োজনীয় বিষয়।