কামরুল হাসান ॥ রঙ-বেরঙের অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার লক্ষ্মীবাউর জলাবন। সাদা বক, বালিহাঁস, সারস, পানকৌড়িসহ দেশি-বিদেশি অসংখ্য পাখির সমারোহ। কিন্তু এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল পাখির এমন অবাধ বিচরণে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিথি পাখি শিকার করে কেউ আর্থিকভাবে লাভবান, আবার কেউ রসনার তৃপ্তি মেটাচ্ছেন। শিকারিরা বন্দুক নিয়ে নির্বিচারে শিকার করে এসব অতিথি পাখি।
পাখি শিকার দন্ডনীয় অপরাধ হলেও এবিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি চোখে পড়ছে না। ফলে অবাধে শিকার ও বিক্রি বেড়েছে পাখির। এই পাখিগুলো সমাজের সচেতন মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশাজীবীরা গোপনে কিনে নিচ্ছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে সরজমিনে দেখা যায়, ৩/৪ জন শিকারী বন্দুক দিয়ে পাখি শিকার করে বস্তা ভরছেন। সাংবাদিকের ক্যামেরা দেখতেই পালিয়ে যাবার চেষ্টা করছেন। ডেকেও তাদের সাথে কথা বলার সুযোগ হয়নি।
স্থানীয়রা জানান- এভাবে প্রতিদিনই শিকারিরা বন্দুক দিয়ে নানা প্রজাতির পাখি শিকার করছে। দিনদিন উপজেলা জুড়ে পাখি শিকারির সংখ্যা বেড়েই চলছে। শিকার করা পাখিগুলো বাজারে নিয়ে তারা প্রকাশ্যে বিক্রি করে।
পাখি শিকার ও নিধন বন্ধের আইন থাকলেও এর কার্যকরী ভূমিকা না থাকায় পাখি শিকারিদের তৎপরতা বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে সাধারণ মানুষের।
‘স্টার সাইফুল’ নামে এক পাখিপ্রেমী জানান, শীতের শুরুতে বিভিন্ন জায়গা থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আসে লক্ষ্মীবাউর জলাবনে। শীতের শেষ সময় পর্যন্ত পাখির আনাগোনা থাকে। আর এই সুযোগে শিকারিরা পাখি শিকার করে নেয়। পাখি শিকার বন্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও কোনো ভূমিকা রাখছেন না। বরং সমাজের এই বিবেকরাই সুযোগ পেলে পাখি কিনে রসনার তৃপ্তি মেটাতে ব্যস্ত।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, লক্ষ্মীবাউর জলাবনটি অব্যবস্থাপনায় ধ্বংস হয়ে যেতে বসেছে। বৈচিত্র্যময় লক্ষ্মীবাউরের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে পাখি। নানান ধরনের গাছগাছালিতে এক সময় নির্বিঘেœ থাকতো বহু প্রজাতির পাখি। লক্ষীবাউরে যেসব পশুপাখি বসবাস করে সেগুলো বিভিন্ন কারণে অনেক ক্ষেত্রেই বিরল। দোয়েল, সাদাবক, ঘুঘু, বালিহাঁস পানকৌড়িসহ বিভিন্ন পাখির বসবাস এখানে। পাখি শিকারের তৎপরতায় একসময় হয়তো এই বনের পাখি বসবে না এমন সংসয় দেখা দিয়েছে। অবাধে পাখি শিকার বনের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য হারাতে বসেছে। আমাদের পরিবেশ প্রতিবেশের এবং নিজেদের স্বার্থেই এখনকার প্রাণ ও প্রাণী গুলোকে সংরক্ষণ করা জরুরি।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রেসিডেন্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পিআরএল) জালাল আহমেদ বলেন, পাখি আমাদের পরিবেশের প্রয়োজনীয় উপদান। পাখি যেমন কীট-পতঙ্গ নিধন করে কৃষির উপকারে আসে, তেমনি আমাদের পৃথিবীর সৌন্দর্য্য বর্ধন করে। পাখি ছাড়া পৃথিবীর কথা চিন্তা করে দেখুন?
বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মামুন খন্দকার বলেন, পাখি শিকার জীব বৈচিত্রের জন্য খুবই ক্ষতিকর প্রভাব। লক্ষ্মীবাউর জলাবনে শীত মৌসুম থেকেই দেশি বিদেশী পাখির সমারোহ হয়। তাই এখান থেকে যারা পাখি শিকার করছে খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।