স্টাফ রিপোর্টার ॥ নবীগঞ্জে স্কুলে অনুপস্থিত থাকতে না দেয়ার জের ধরে প্রধান শিক্ষকের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন সহকারি শিক্ষকরা। নিজেরা স্থানীয় হওয়ায় স্বজনদের দিয়ে বিভিন্ন সময় প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত করারও চেষ্টা করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে ওই উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের কামারগাঁও (২) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এবছরই প্রথমবারের মতো বিদ্যালয়টিতে ৫টি জিপিএ-৫ প্রাপ্তিসহ ইউনিয়নে প্রথম হয়। কিন্তু সহকারি শিক্ষকদের অসহযোগিতার কারণে সদ্য জাতীয়করণকৃত এ বিদ্যালয়টিতে পাঠদানে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষার পরিবেশও বিঘিœত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এসব ঘটনায় প্রধান শিক্ষক সেলিনা বেগম জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।
খবর নিয়ে জানা গেছে, এটি বেসরকারি বিদ্যালয় ছিল। বর্তমান সরকার সম্প্রতি এটি সরকারিকরণ করে। সরকারিকরণ হওয়ার আগে থেকেই বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন সদ্য অবসরপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফিরোজা বেগমের ভাই বদরুল আলম। এ কমিটিতে সদস্য রয়েছেন তার স্বামী সাজিদুর রহমান। বিদ্যালয়ের অভিভাবক কমিটির সভাপতি পদে আছেন তার আরেক ভাই সফিউল আলম। আর এ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক একে অপরের স্বজন। এদিকে ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে ২০১৯ সালে নিয়োগ দেয়া হয় সেলিনা বেগমকে। তিনি সেখানে গিয়ে যোগদানের কয়েকদিন পর দায়িত্ব বুঝে পান পূর্ববর্তী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফিরোজা বেগমের নিকট থেকে। ফিরোজা বেগম অবসরে চলে গেলেও দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে কয়েকদিন বিলম্ব করেন। তখন বিদ্যালয়ের হিসাব ও জিনিসপত্র বুঝিয়ে দেয়া নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, সহকারি শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ কয়েকজন নতুন যোগদানকৃত প্রধান শিক্ষকের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। তারা হিসাব চাওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। এরপর থেকে সহকারি শিক্ষকরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাতায়াতে অনিহা প্রকাশ করেন। অনেক সময় ছুটি না নিয়ে তারা বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। কখনও আবার পরবর্তীতে গিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করার চেষ্টা করেন। এতে বাধ সাধেন প্রধান শিক্ষক সেলিনা বেগম। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সহকারি শিক্ষকদের স্বজনরা বিভিন্ন সময় প্রধান শিক্ষককে হেনস্তা করার চেষ্টা করেন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়। তারা প্রাথমিকভাবে তা সমাধান করার চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু তাদের সে চেষ্টা তেমন কাজে আসেনি। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক সেলিনা বেগম বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে অবহিত করেন। লিখিত আবেদনে নিজে নিরাপত্তহীনতায় ভূগছেন বলেও উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নবীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সাইফুল ইসলাম জানান, বিষয়টি তারা জানেন। শিক্ষকদের বিরোধের বিষয়টি মিমাংসা করে দেয়ারও চেষ্টা করেছেন। প্রধান শিক্ষককে কয়েকদিন ছুটিতে থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, এখানে প্রধান শিক্ষক এক্টিভ। তিনি চান সবাই সময় মেনে চলুক। অপরদিকে সহকারি শিক্ষকরা স্থানীয় হওয়ায় তারা ফাঁকি দিতে চান। এ নিয়েই মূলত বিরোধ দেখা দিয়েছে। আমি তাদেরকে বলেছি সবাই যেন সময় মেনে চলেন। তাছাড়া প্রধান শিক্ষক তাদের মেহমান। তিনি আসায় বিদ্যালয়ের ফলাফল ভাল হয়েছে। তাই সবাই যেন তাকে সহযোগিতা করে তা বলে দিয়েছি। একজন সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছি তিনি যেন নিয়মিত বিদ্যালয়ের বিষয়ে খোঁজ রাখেন। এখানে প্রধান শিক্ষক বলেছেন নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন। তাকে বলেছি, সরকারি লোকের উপর হাত তোলা এতো সহজ নয়।