বাবার অসুস্থতার কথা বলে ছুটি নেন বলে জানিয়েছেন কুড়িগ্রামের উপ-পরিচালক

রায়হান উদ্দিন সুমন, বানিয়াচং থেকে ॥ রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলায় মেডিকেল অফিসার এমওএমসিএইচ (এফপি) ডা: সুবিমল চন্দ তার নিজ কর্মস্থল থেকে মেডিকেল লীভ (ছুটি) নিয়ে বানিয়াচং শাপলা মেডিকেল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত রোগী দেখছেন। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে।
সূত্র জানায়, বানিয়াচংয়ের তৎকালীন মেডিকেল অফিসার এমওএমসিএইচ (এফপি) ডা: সুবিমল চন্দ তার কর্মস্থলে থাকাকালীন অবস্থায় বিভিন্ন দুর্নীতি ও নানা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে কর্তৃপক্ষ ডা: সুবিমলকে একই পদে ১৯ জানুয়ারি প্রথমে লালমনিরহাটে বদলির আদেশ দেন মহাপরিচালক পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। পরে লালমনিরহাটের বিভাগীয় কর্মকর্তা দুর্নীতির দায়ে তার এই পদায়ন গ্রহণ করেননি। পরবর্তীতে ২১ জানুয়ারি আরেকটি আদেশে তাকে কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলায় উক্ত শূন্য পদে বদলির আদেশ দেন পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ। সেখানে যোগদানের কয়েকদিন পর তার শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে (মেডিকেল লীভ) একমাসের ছুটি নিয়ে বানিয়াচং চলে আসেন ডা: সুবিমল। বানিয়াচং আসার পর বানিয়াচং বড়বাজারে অবস্থিত শাপলা মেডিকেল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত রোগী দেখছেন তিনি। সরেজমিনে বুধবার ওই মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে দেখা যায় তিনি চেম্বারে আছেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, নিজের কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে তিনি কিভাবে অন্য উপজেলায় এসে রোগী দেখছেন। এই প্রশ্ন এখন সর্বত্র। পাশাপাশি মেডিকেল লীভ নিয়ে আসলে উনি তো অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে থাকার কথা। তা না করে নাগেশ্বরী উপজেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে মিথ্যা কথা বলে দিনের পর দিন বানিয়াচংয়ে পড়ে থাকছেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে- ডা: সুবিমল বানিয়াচং থেকে বদলী হওয়ার পর পরিবার পরিকল্পনা অফিসের ২০১৭-২০১৮ এবং ২০১৮-২০১৯ আর্থিক সালের অফিসিয়াল বিল ভাউচার, ক্যাশবুক, বিল রেজিস্ট্রার ও অন্যান্য কোনো কাগজপত্র দায়িত্বরত কাউকে তিনি বুঝিয়ে দিয়ে যাননি। এসব কাগজপত্রাদি তিনি নাকি তার বাড়িতে নিয়ে রেখে দিয়েছেন এমন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অন্যদিকে বানিয়াচং পরিবার পরিকল্পনা অফিসের ক্লিনিক অধিক্ষেত্রের বিভিন্ন সময়ে বরাদ্দকৃত কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ ক্রয়বাবদ মোট ২লাখ ৫হাজার ৬শ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার মেডিকেল অফিসার এমওএমসিএইচ (এফপি) হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা: সুবিমলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এলাকার রোগীরা আমাকে চায়। তাই সপ্তাহে একদিন এখানে বসা হয়। মেডিকেল ছুটি নিয়ে কিভাবে আপনি চেম্বারে রোগী দেখেন এমন প্রশ্নের জবাবে ডা: সুবিমল বলেন- আমি বাড়িতে এসেছি মেডিকেল ছুটি নিয়ে এই বলে তিনি ফোন কেটে দেন। এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডা: নজরুল ইসামেরর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ডা: সুবিমলের মেডিকেল ছুটি মঞ্জুর করা হয়নি। আবেদনে তিনি তার বাবার ক্যান্সার হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। তাকে ক্যামো দিতে পাশে থাকতে হয় বিধায় ছুটির প্রয়োজন। তবে ডা: সুবিমল কিভাবে বাবার অসুস্থতার মিথ্যা কথা বলে বানিয়াচংয়ে গিয়ে রোগী দেখছেন সেটা তিনি দেখবেন বলে জানান। রংপুর বিভাগের পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক মনোজ কুমার রায়ের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ডা: সুবিমলের ছুটির বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।