সাদপন্থীদের ইজতেমা বন্ধের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জে মাওলানা সাদ পন্থীদের ইজতেমা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জের প্রত্যেক উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও ২৭ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জ শহরের মুক্তিযোদ্ধা চত্তরে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। রবিবার দুপুরে শহরের মার্কাজ মসজিদে সম্মিলিত উলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতা হবিগঞ্জ’র ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। অপরদিকে আগামী ২৭, ২৮ ও ২৯ ফেব্রুয়ারি শহরের সুলতান মাহমুদপুর মাঠে ইজতেমার আয়োজন করেছে মাওলানা সাদ পন্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, প্রায় শতবর্ষী অরাজনৈতিক দ্বীনী সংগঠন দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে চলে আসছিলো। বিগত কয়েক বছর যাবত লক্ষ্য করা গেছে, বিশ্ব তাবলীগের একজন শুরা সদস্য ভারতের দিল্লীর নিজামুদ্দিন মারকাজের একজন মুরুব্বি মাওলানা সাদ হঠাৎ করে তাবলীগের উসুল ও নিয়ম ভঙ্গ করে কোন ধরণের পরামর্শ ছাড়াই নিজেকে তাবলীগ জামাতের বিশ্ব আমীর ঘোষণা করেন। অথচ বিশ্বব্যাপী তাবলীগের এই মেহনতে পরামর্শ ছাড়া কোন কাজ আঞ্জাম দেয়া হয় না। ১৯২৪ সালে তাবলীগের ১ম আমীর হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহঃ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তাবলীগ জামাতে একক আমীর পদ্ধতি চালু ছিল। উক্ত সময়ের মধ্যে ৩ জন আমীর এই জামাতকে নেতৃত্ব দেন। কিন্তু কোন আমীরই নিয়মতান্ত্রিক পরামর্শ ছাড়া নির্বাচিত হননি। পরবর্তীতে বিশিষ্ট মুরুব্বিদের পরামর্শক্রমে ১৯৯৩ সালে ১০ সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক শুরা কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি বিশ্ব তাবলিগের কাজ পরামর্শ ভিত্তিক পরিচালনা করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। যার একজন সদস্য মাওলানা সাদ। মাওলানা সাদ ছাড়া বাকী সকল সদস্য ইন্তেকাল করলে হঠাৎ করে তিনি স্বেচ্ছাচারমূলক অনৈতিক ঘোষণার মাধ্যমে নিজেকে একক আমীর ঘোষণা দেন। ফলে অসন্তোষ ও ভাঙ্গন দেখা দেয় তাবলীগে। যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে।
সংবাদ সম্মেলনে মাওলানা সাদের কোরআন হাদীস বিরোধী বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরা হয়। মাওলানা সাদ মনে করেন ‘হেদায়েত আল্লাহর হাতে নেই, আল্লাহর উপর যার ভরসা নেই সে যেন আত্মহত্যা করে, মসজিদের বাইরে দ্বীনের দাওয়াত দেয়া সুন্নাহ পরিপন্থী কাজ, মক্কা মদীনার পর সবচেয়ে পবিত্রতম স্থান হল মারকাজ নিজামুদ্দিন’। এছাড়াও মাওলানা সাদ দীর্ঘদিন যাবত কোরআন সুন্নাহ বিরোধী মরাত্মক বিভ্রান্তিকর ও অপব্যাখ্যা দিয়ে আসছেন। ফলশ্রুতিতে ২০১৮ সালে মাওলানা সাদ টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ গ্রহনের জন্য বাংলাদেশে আসলেও সাধারণ মুসলমানদের বাধার মুখে ইজতেমায় প্রবেশ করতে পারেননি। পরে তার বাংলাদেশে আসার উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়।
এক প্রশ্নের উত্তরে মাওলানা আব্দুল্লাহ আকিলপুরী বলেন, বাংলাদেশে তাবলীগ জামাত দুইভাগে বিভক্ত হয়ে কয়েক বছর যাবত টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উভয় গ্রুপের মুরুব্বিদের নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, জেলায় জেলায় মাওলানা সাদ পন্থীরা ইজতেমা করতে পারবে না। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মাওলানা সাদ পন্থীরা হবিগঞ্জে ইজতেমার আয়োজন করছে। তাদের এই কার্যক্রম বন্ধ করতে আমরা হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের নিকট স্মারকলিপি দিয়েছি। আমরা আশা করি, এই ইজতেমা বন্ধ করতে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তা না হলে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জের প্রত্যেক উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও ২৭ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জ শহরের মুক্তিযোদ্ধা চত্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবো আমরা। সেই সাথে আমাদের দাবি- মাওলানা সাদ পন্থীদের যে কোন ধরণের গণজমায়েত, তাবলীগের নামে তাদের সব ধরনের অপতৎপরতা বন্ধ ও জেলার বিভিন্ন মসজিদে জোরপূর্বক তাদের জামাত প্রবেশ বন্ধের দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেফাক সভাপতি মাওলানা আব্দুল্লাহ আকিলপুরী, হবিগঞ্জ তাবলীগ জামাতের আহলে শুরার প্রফেসর সৈয়দ মহসিন আলী, চুনারুঘাট শামসূল উলুম টাইটেল মাদ্রাসার মুহতামীম মাওলানা জহুর আলী, ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি (ব্যকস) হবিগঞ্জের সভাপতি সামছুল হুদা, যুব উলামা ঐক্য পরিষদ সভাপতি মাওলানা জাবের আল হুদা, মাওলানা মাসউদুর রহমান চৌধুরী বেলাল, শেখ সেবুল আহমেদ, হাফেজ আব্দুর রহমান, মাওলানা আব্দুল জলিল ইউসূফী, হাজী নুরুল হক, মাওলানা নাজমুল হুদা প্রমূখ।