বানিয়াচঙ্গ উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা বললেন, এ নির্বাচনের মাধ্যমে শিশুরা গণতন্ত্র সম্পর্কে হাতে কলমে শিক্ষা লাভ ও নিজেদের অধিকার সম্পর্কে জানতে পারবে। যা ভবিষ্যতে তাদেরকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে
রায়হান উদ্দিন সুমন, বানিয়াচঙ্গ থেকে ॥ শিশুকাল থেকে গণতন্ত্রের চর্চা ও অন্যের মতামতের প্রতি সহিষ্ণুতা, নেতৃত্ব বিকাশের লক্ষ্যে এবং শতভাগ ছাত্র-ছাত্রীর ভর্তি ও ঝড়েপড়া রোধের উদ্দেশ্য নিয়ে সারাদেশের ন্যায় বানিয়াচঙ্গ উপজেলার ১৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন ২০২০ সম্পন্ন হয়েছে। রবিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলে।
সরেজমিনে বানিয়াচঙ্গ সদরের কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল এক নতুন দৃশ্য। ‘ছোটদের নির্বাচন’ নিয়ে বড়রাও আগ্রহী হওয়ায় বিদ্যালয়ের বাহিরে অভিভাবকদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। অভিভাবকরা কেউই ভিতরে ঢুকতে পারছেন না কারণ বিদ্যালয়ের সামনেই কাগজে টানানো দিক নির্দেশনা ‘ভোটার ব্যতীত প্রবেশ নিষেধ’। নির্বাচনে ছাত্র-ছাত্রীরাই প্রার্থী হয় আবার তারাই ভোট দেয়। মাঠের মধ্যে গাছগুলোতে রং-পেন্সিল দিয়ে হাতে তৈরী পোস্টার টাঙানো হয়েছে। যেনো পুরোটাই নির্বাচনের পরিবেশ। এ নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের ন্যায়ই সবকিছুু হয়। শুধু স্ব স্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নির্বাচনে সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকেন। প্রতিটি বিদ্যালয়ে মোট ৭টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পদগুলো হল- পরিবেশ, পুস্তক ও শিখন, স্বাস্থ্য-ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, পানি সম্পদ, বৃক্ষরোপণ, বাগান তৈরি, অভ্যর্থনা ও আপ্যায়ন।
বানিয়াচঙ্গ বড়বাজার আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, নির্বাচন কমিশনার, প্রিজাইডিং অফিসার, প্রার্থী, পোলিং অফিসার, এজেন্ট, ভোটার সবাই ৩য় শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ের মাঠে লাইন ধরে দাঁড়ানো ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছে ভোট দেয়ার জন্য। নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে বারান্দায় দুই শিশু হাতে বাঁশ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) তাজ উদ্দিন আহমেদ জানান, এই নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে শিশু বয়সে নেতৃত্ব বিকাশ এবং বিদ্যালয় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা। পাশাপাশি গণতান্ত্রিকবোধও মনের ভিতরে জাগ্রত হবে। এটা খুবই ভালো লক্ষণ।
বানিয়াচঙ্গ রায়ের পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান জানান, সকাল ৯টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় বেলা ১টায়। এই নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুমুল উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বিপুল ভুষণ রায় জানান, স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা ঘটেনি। বিদ্যালয় থেকে শিশুরা গণতন্ত্রের ধারণা লাভ করলে বাস্তবে তার প্রতিফলন ভালো ভাবে প্রয়োগ করতে পারবে। জামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবুল ফজল জানান, শিশুদের অধিকার, দায়িত্ব, গতিশীল নেতৃত্ব তৈরী সম্পর্কে সজাগ করার লক্ষ্যে এ স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকদিন থেকেই শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দেয়। সাধারণ নির্বাচনের মতোই প্রার্থীরা বিজয়ী হতে ভোটারদের কাছে ভোটও চেয়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে এক অন্যরকম পরিবেশ বিরাজ করছে।
সাংবাদিক রায়হান উদ্দিন সুমন, সাংবাদিক তানজিল হাসান সাগরসহ নিজ নিজ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরাও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন।
এ ব্যাপারে বানিয়াচঙ্গ উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা হাসিবুল ইসলাম জানান, এ নির্বাচনের মাধ্যমে শিশুরা গণতন্ত্র সম্পর্কে হাতে কলমে শিক্ষা লাভ করতে পারবে ও নিজেদের অধিকার, মতামত সম্পর্কে জানতে পারবে। যা তাদেরকে ভবিষ্যতের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। সফলভাবে এই নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্যে তিনি সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থীর পাশাপাশি এলাকাবাসী, অভিভাবক ও সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।