
পৌর বিএনপি সভাপতি সাবেক মেয়র এমএফ আহমেদ অলিকে জড়িয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে
নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ শায়েস্তাগঞ্জ পৌর বিএনপি সভাপতি সাবেক মেয়র এমএফ আহমেদ অলিসহ অন্যদেরকে জড়িয়ে মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (৮ অক্টোবর) দিবাগত রাতে পৌর শ্রমিক দলের উদ্যোগে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পৌর শ্রমিক দল আহবায়ক আকিকুর রহমান টিপুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন পৌর শ্রমিক দলের সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক সুমন আহমেদ, যুগ্ম-আহবায়ক ফজর আলী, ফজল মিয়া ও মীর সুমন, সুরুজ মিয়া, শাহ ফয়সাল, ফারুক মিয়া, মিজান মিয়া, দিলু মিয়া প্রমূখ। সভায় বক্তাগণ বলেন- এমএফ আহমেদ অলি তৃণমূল জনগণের ভোটে বার বার নির্বাচিত শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র। তিনি সততার সাথে শায়েস্তাগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তৃণমূল মানুষের কল্যাণে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। যার প্রমাণ শায়েস্তাগঞ্জ পৌরবাসী। পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে শায়েস্তাগঞ্জের উন্নয়নে কাজ শুরু করেন। সে সময় থেকে তার বিরুদ্ধে একটি কুচক্রি মহল ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল। এখনও তারা তৎপর রয়েছে। ৪ অক্টোবর দুপুরে শায়েস্তাগঞ্জ শহরের দাউদনগর বাজার এলাকায় এমএফ আহমেদ অলিসহ তার উন্নয়নের সঙ্গীদের বিরুদ্ধে একটি মানববন্ধন ও সভা করা হয়। সাইদুর রহমানগং আয়োজিত মানববন্ধনে সাবেক মেয়র অলিসহ অন্যদেরকে জড়িয়ে মিথ্যা ও মানহানিকর কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে। আমরা এসব কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
বক্তাগণ আরও বলেন- মূলত তিনি মেয়র থাকাকালীন অবস্থায় ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় চরনূরআহম্মদ মৌজার জেএল নং ১৫৭, খতিয়ান নং ০২, দাগ নং ৮৮৮, সিআরএস ১০০১নং রেলওয়ের জমি দখল নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে রেলওয়ের পার্কিংয়ের উচ্ছেদকৃত পুনর্বাসন ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরী হয়। এমতাবস্থায় শায়েস্তাগঞ্জে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে পৌর পরিষদ নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সিদ্ধান্তক্রমে শায়েস্তাগঞ্জ চরনূরআহম্মদ মৌজার জেএল নং ১৫৭. খতিয়ান নং ০২, দাগ নং ৮৮৮ সিআরএস ১০০১নং ভূমিতে লীজ অথবা নবায়ন না করাব জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রীট পিটিশন ৫৪১৩/০৯ ও ১৩১১/২৪ দায়ের করা হয়েছিল। বর্তমান সময় পর্যন্ত এ রীট চলমান রয়েছে। প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (পূর্ব) বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রামের দপ্তর হতে স্মারক নং সিইও/পূর্ব/ সিসি দাপ্তরিক ভাষা ২০০২/পাট-১/৬১২ ২০২৪ সালের ১৩ জুন তারিখে পত্রে উল্লেখ করেন যে শায়েস্তাগঞ্জে বাংলাদেশ রেলওয়ের ভূমি অবৈধভাবে দখল নিয়ে যাতে পৌর এলাকায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি না ঘটে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকা এবং শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেয়রকে অনুলিপি কপিসংযুক্ত প্রদান করা হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১৭ মার্চ মো. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকা প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার আদেশ অমান্য করে শায়েস্তাগঞ্জে রেলওয়ের জমি অনৈতিকভাবে মোটা অংকের উৎকুচের বিনিময়ে বুঝিয়ে দেওয়ায় চরম উত্তেজনা তৈরী হয়।
ব্রিটিশ কর্তৃক রেলওয়ের কোয়ার্টার ভাঙার কারণে আওয়ামী লীগ শাসনামলে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ ছালেক মিয়া, তার অনুসারী সাবেদ আলী, সাইদুর রহমান, ফুল মিয়া শাহ ও শংকরদে গং এর বিরুদ্ধে শায়েস্তাগঞ্জ থানা ও শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানায় ২০১৬ সালের ১ মার্চ ও ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ রেলওয়ের বিভাগীয় কানুনগো গোলাম নবী এবং ২৮ মার্চ রেলওয়ের এসএসএই/কার্য মো. নূরুল আমিন মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মামলা দায়ের করার পরও ওই বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তাই পৌরবাসীর দাবি ওই বাহিনীর বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।
তারা বক্তব্যে বলেন- ২০২০ সালের ১২ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের মাধ্যমে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে অবশিষ্ট এলটমেন্টসহ কোয়ার্টারগুলো ও অন্যান্য স্থাপনা ভাঙা হয়, তারপর ওই ভূমি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ১৪ এপ্রিল আওয়ামী লীগের ৭ নেতাকর্মীর নামে ভুয়া কৃষি লীজ দেখানো হয়। এ প্রেক্ষিতে পৌরবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দোসর সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহিরের সার্বিক মদদে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল, আব্দুল আওয়াল, সাইদুর রহমান, ফুল মিয়া শাহ ও শংকর গং রেলওয়ের কানুনগো ফারুকুজ্জামান ও সাবেক সচিব ফারুকুজ্জামান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দোকান বরাদ্দ বাবদ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য সাইদুর রহমান এর নেতৃত্বে একটি বাহিনী গড়ে ওঠে। বর্তমানে এ বাহিনীর মাধ্যমে চলছে রেলওয়ে জমির দখল বাণিজ্য।
চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল তারিখে ভুয়া লীজের বিরুদ্ধে রেলওয়ের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (পূর্ব), ১ জুলাই রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও রেলওয়ে মহাপরিচালক বরাবর পৃথক পৃথক লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। এ প্রেক্ষিতে ২৭ আগস্ট ২০২৫ রেলওয়ে মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে এক আদেশ জারি করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, রেলওয়ের ভূমিতে ভুয়া লীজ প্রদান ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে পরীক্ষান্তে বিধি মোতাবেক লাইসেন্স বাতিলের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করা হয়। এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয় থেকে তদন্ত চলমান রয়েছে। এসব বিষয় জানতে পেরে সাইদুর রহমান এর নেতৃত্বাধীন বাহিনী সাবেক মেয়র এমএফ আহমেদ অলিসহ তার উন্নয়নের সঙ্গীদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। আমরা আইনের কাছে এর সু-বিচার কামনা করছি।