শায়েস্তাগঞ্জ প্রতিনিধি || ব্যবসায়ীদের পাওনা টাকা পরিশোধ না করে এবং টাকা নিয়ে লভ্যাংশ প্রদানের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে শায়েস্তাগঞ্জের ভোগ্যপণ্যের দুই ব্যবসায়ীর গা-ঢাকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ব্যবসায়ীরা হলেন- পলাশ দাশ ও প্রণব দাশ। তাদের গ্রামের বাড়ি চুনারুঘাট উপজেলার উবাহাটা ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, পলাশ ও প্রণব দাশ প্রায় পাঁচ বছর ধরে শায়েস্তাগঞ্জের হাসপাতাল রোডে পেঁয়াজ-রসুন, তেল, চিনিসহ ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা করে আসছেন। বাজারের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাকিতে পণ্য কিনেছেন। কারো কাছ থেকে ধার নিয়েছেন। ব্যাংকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লভ্যাংশ প্রদানের কথা বলে আপশপাশের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। গত শুক্রবার থেকে তাদেরকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও শুক্রবার থেকে বন্ধ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী জানান, আর কে এন্টাপ্রাইজ-১ ও আর কে এন্টারপ্রাইজ-২ নামে হাসপাতাল রোডে তাদের দুটি দোকান শুক্রবার ভোর থেকে তালাবদ্ধ রয়েছে। পলাশ ও প্রণব দাশ শায়েস্তাগঞ্জ, হবিগঞ্জ, চুনারঘাটসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ী ও অন্যান্য পেশার লোকদের কাছ থেকে নানা কৌশলে কোটি টাকা নিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন।
শায়েস্তাগঞ্জ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি ইয়াসির খান জানান, হবিগঞ্জ শহরের একজন আড়ৎদার এর প্রায় দেড় লাখ টাকা পাওনা ছিলো তাদের কাছে। গত বৃহস্পতিবার চেক নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে আর কে এন্টারপ্রাইজের হিসেবে কোনো টাকা না পেয়ে তারা শায়েস্তাগঞ্জে এসে পলাশের দোকান বন্ধ দেখতে পান। এরপর পাওনাদার পলাশের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ঘর তালাবদ্ধ দেখেন এবং বিষয়টি শায়েস্তাগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দকে জানান। বিষয়টি জানাজানি হলে অন্য পাওনাদারেরাও তাদের দোকানের সামনে এসে ভিড় করেন।
সরকারি চাকরিজীবীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করেন পলাশ ও প্রণব দাশ। সুদের বিনিময়ে ব্যাংকে টাকা জমা না রেখে তাদের প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। পলাশ ও প্রণবের অভিনব ফাঁদে পা দিয়ে লাভের আশায় কেউ ২৫ লাখ, কেউ ১০ লাখ, আবার অনেকে ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে কয়েকজনকে গ্যারান্টার করে মোটা অঙ্কের ঋণ নেন তারা। এভাবে প্রায় ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে দুইজন লাপাত্তা হয়ে যান।
প্রতারণার শিকার পাশের দোকানদার গুপাল পাল বলেন, তার দুই আত্মীয়কে জমি বন্ধকের কথা বলে ৬ লাখ ৩৪ হাজার টাকা নিয়েছেন পলাশ। ব্যবসায়ী লতিফ উল্লাহ জানান, লাভ দেওয়ার কথা বলে তার থেকে নিয়েছেন ৪ লাখ টাকা। ব্যবসয়ীক অংশীদার হবার কথা বলে ওলিপুরের হেলাল আহমদের কাছ থেকে নিয়েছেন ৩ লাখ টাকা। শায়েস্তাগঞ্জের একজন চাকরিজীবির কাছ থেকে তিন দফায় নিয়েছেন ৪৯ লাখ টাকা। আর কে এন্টারপ্রাইজ-১ এর ঘরের মূল মালিক কাশিপুরের ভেনু মিয়ার কাছ থেকে নিয়েছেন ১ লাখ টাকা। বরমপুরের ফরিদ মিয়ার কাছ থেকে ৫ লাখ এবং একই গ্রামের আসলাম উদ্দিনের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়েছেন বলে তারা জানিয়েছেন। তাদের কাছে প্রাণ কোম্পানির একজন ডিলার পাবেন ৫ লাখ টাকা। চুনারুঘাটের একজন সরকারি চাকরিজীবির কাছ থেকে নিয়েছেন ৫ লাখ টাকা। হাসপাতাল রোডের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম পাবেন বিকাশের ৩৩ হাজার টাকা। এভাবে প্রতিদিনই নতুন নতুন পাওনাদারের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
এক ভুক্তভোগী বলেন, পলাশ ও প্রণব অল্প পুঁজি নিয়ে ৫-৬ বছর আগে ব্যবসা শুরু করেন। বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে রাতারাতি বদলে যান তারা। পাওনা টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হলে তারা গা ঢাকা দেন।
পলাশের গ্রামের বাড়ির পাশের ঘরের নীশা রাণী নামের এক মহিলা জানান, শুক্রবার ঘুম থেকে ওঠে তাদের ঘরটি তালাবদ্ধ দেখতে পান। স্ত্রী সন্তানসহ কোথায় গেছেন তা তারা জানেন না। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ব্যবসায়ী পলাশ ও প্রণবের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি দিলীপ কান্ত নাথ বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।