স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ সদর উপজেলার টেকনিশিয়ান উদ্যোক্তা শাহীনুর কামাল শাহীনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছেন। ৩ জুলাই এই অভিযোগ করা হয়।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রন টেকনিশিয়ান উদ্যোক্তা শাহীনুর কামাল শাহীনের হাতে। শুধু নিয়ন্ত্রন নয়, সরকারী গোপন নথিপত্র ব্যবস্থাপনা দাপ্তরিক “ইনএনও” অফিসের প্রশাসনিক “ইউজার আইডি-পাসওয়ার্ড কম্পিউটার ব্যবহারের পাশাপাশি ইউএনওর ব্যক্তিগত জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের ইউজার আইডি-পাসওয়ার্ড অবৈধভাবে ব্যবহার করে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদনসহ অবৈধভাবে বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছেন চুক্তি ভিত্তিক (অস্থায়ী) টেকনিশিয়ান উদ্যোক্তা শাহীন। তিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা উপজেলা সিএ ও অফিস সহকারীগণের চেয়ারও জোরপূর্বক দখল করে রেখেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে শাহীন উপজেলা দাপ্তরিক নথিপত্রের হস্তক্ষেপ করে গোপনীয় বিভিন্ন প্রতিবেদন, রিপোর্ট, দরপত্র প্রকাশ, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধি ভাতা এবং যুব-উন্নয়নের আওতায় বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়ার নাম করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ইউএনও কার্যালয়ের আগত জন্ম ও মৃত্যু নিববন্ধন সংশোধনের সেবা গ্রহণকারী সংশোধনী আবেদন খানা নিয়ে গেলেই নগদ ও বিকাশ ও টাকা দিতে হয় শাহীনকে। ১২/১৩ বছরের ধরে বিভিন্ন ইউনিয়নের ভুক্তভোগীরা উপজেলা কার্যালয়ে যারা জন্ম, মৃত্যু ও ভোটার কার্ডের বয়স সংশোধন করতে যাচ্ছেন তাদের কাছ থেকে নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে ২০০/৫০০ টাকা এমনকি তার চেয়ে বেশি টাকাও হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। নিবন্ধনের বয়স সংশোধন করতে গেলে শাহীন ঢাকা থেকে সংশোধন করে আনতে হয় বলে ৫ থেকে ১৫ হাজার এবং আইডি কার্ড সংশোধন করতে গেলে দেড় থেকে ২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। আবার জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের সাধারণ তথ্য (বাংলা থেকে ইংরেজি এবং নাম ও বানান সংশোধনের ক্রেতে ১শ থেকে ১ হাজার টাকা দিলেই শাহীন সংশোধন করে দেন শাহীন। যেগুলো থেকে টাকা পাননি সেইগুলো ৮ থেকে ৯মাস ফাইলবন্দি থাকে। শাহীন সদর উপজেলায় প্রতিটি শাখায় ইউএনওর নাম করে জোরালোভাবে তদবীর চালিয়ে সমাজ সেবা থেকে বয়স্ক ও বিধবা ভাতা, কৃষি অফিস থেকে কৃষি কার্ড, সমবায় অফিস থেকে মৎস্যজীবি কার্ড, যুব অফিস থেকে প্রশিক্ষণে লোক ভর্তি, সরকারি টেন্ডার, ইমাম ও হাফেজ নিয়োগ, গ্রাম-পুলিশ নিয়োগ, নিলামের কাগজের দরপত্র প্রকাশিত হলেও তিনি নিজেও তার আত্মীয় স্বজন, দালাল চক্র লোকজনদের কাজ পেয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাণিজ্য করছেন। তার পিতা সদর উপজেলা আশেঢ়া গ্রামের আহাদ মিয়া একজন সিএনজি অটোরিক্সা চালক। ইউএনও অফিসে চুক্তি ভিত্তিক কাজ করে সরকারি কোয়ার্টারে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছেন শাহীন। গোপায়া ইউনিয়ন পরিষদের নিকটসহ শ্বশুরবাড়ি টুপিয়াজুড়ীতে তার নিজ ও স্ত্রীর নামে গড়ে তুলেছেন সম্পত্তি। পাশাপাশি রয়েছে ২টি মাইক্রোবাস, ২টি ট্রাক ও ১টি পালসার মোটর সাইকেল। চলতি বছরের ১৯ জুন উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের জন্য গ্রাম-পুলিশ, মহল্লাদার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। উক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়ার পর কৌশলে শাহীন প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে মনোনীত করেন। পরে ইউএনওর নাম বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা চুক্তি করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে আরো দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে সদর উপজেলা ৮টি ইউনিয়নের ভুক্তভোগী রাহাত বিনতে রনি, শাহ আলম, সুমন মিয়া, হৃদয় মিয়া, খোকন মিয়া, পারভেজ মিয়া, কালাম মিয়া, মামুন মিয়া,সুবোধ কান্তি দাশ, শুভ ঘোষ, জমির আলী, কাউছার মিয়া ও মানিক মিয়া এ অভিযোগ দায়ের করেন।