
ডাক্তারের চেম্বারে বসে চিকিৎসা দেন নার্স। একজন কনসালটেন্ট সপ্তাহে দুদিন হাসপাতালে আসেন। দুপুরবেলা দেখা যায় ল্যাবে তালা
এস কে কাওছার আহমেদ, আজমিরীগঞ্জ থেকে ॥ আজমিরীগঞ্জের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। লক্ষাধিক মানুষের সেবার একমাত্র আশ্রয়স্থল এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারের সেবা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
কিছুদিন পূর্বে শিশু সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন হরিধর সরকার। উপজেলার শিবপাশা ইউনিয়ন থেকে সকাল আনুমানিক ৮টায় সেবা নিতে আসেন তিনি। বাচ্চাকে ভর্তি দেন জরুরি বিভাগের ওয়ার্ড বয়ের দায়িত্বে থাকা জুয়েল রায়। ভর্তির ফরম পূরণ করার পর দাবি করেন দুইশত টাকা। না দিলে ভর্তি ফরম দিতে চাননি জুয়েল। বাধ্য হয়ে দুইশত টাকা দেন দিনমজুর হরিধর সরকার।
গত সপ্তাহে চিকিৎসা নিতে আসেন বাক প্রতিবন্ধী মুস্তাকিম মিয়া। দায়িত্বে থাকা ডাক্তার টেস্ট করানোর জন্য বললেন থাকে। টেস্টের জন্য ল্যাবে গেলে দেখা মিলে দুপুর আনুমানিক বারোটায় তালা ঝুলানো। নির্ধারিত সময়ের আগেই দায়িত্ব ছেড়ে চলে যান ল্যাব টেকনোলজিস্ট। এবিষয়ে জরুরি বিভাগে থাকা কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করলে জানান উনি চলে গেছেন। আরো অনিয়মের তথ্য রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যোগদানের পর থেকেই অবহেলা আর অনিয়মে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
১২ফেব্রুয়ারী বুধবার সরজমিনে দেখা যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ডাক্তার শূন্য। ডাক্তারের চেম্বারে ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা দিচ্ছেন একজন নার্স। ডাক্তারের সেবা নিতে রোগীরা ঘুরছে এক ভবন থেকে অন্য ভবনে। অনেকেই সেবা না পেয়ে ক্লান্ত হয়ে ফিরছে বাড়ী।
একজন কনসালটেন্ট প্রতি রবিবার ও বুধবার আসেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তিনি সকাল দশটা থেকে এগারোটার মধ্যে আসলেও সিলেট থেকে এসে হাজিরা দিয়ে বারোটার মধ্যেই চলে যান। রিপোর্ট নিয়ে অনেক রোগী উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসলে দেখাতে পারেননি উনাকে।
ডেন্টাল বিভাগের সামনে গিয়ে দেখা মিলে বাহিরের দরজা লাগানো। খোঁজ নিয়ে জানা যায় ডাক্তার থাকলেও তিনি ভিতরে দরজা বন্ধ করে কাজ করেন। হাসপাতালে প্রতিটি সেক্টরে নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে চলছে সেবা প্রদান।
কর্মকর্তাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলতে নারাজ সেবা নিতে আসা রোগীরা।
নাম গোপন রেখে একজন সেবা নিতে আসা রোগী জানান তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে উনারা সঠিক চিকিৎসা দেন না। কবে এসব থেকে মুক্তি পাব আল্লাহ ভালো জানেন।
এসব বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: ইকবাল হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি জানান আমি টাকা নেওয়ার বিষয়ে প্রমাণ পেলে যথাযথ ব্যাবস্থা নিব। কেউ যদি দায়িত্বে অবহেলা করেন তাদের বিরুদ্ধে উর্ধতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ডেন্টাল বিভাগের ডাক্তার নতুন তাকে সঠিক দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশ দেয়া হবে। দরজায় থালা ঝুলানো বিষয়ে তিনি অবগত নন, যদি এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় তাহলে ল্যাব টেকনোলজিস্টের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান উক্ত কর্মকর্তা।