![](https://dailyhabiganjermukh.com/wp-content/uploads/2024/11/009-Tahmina-Begum-Gini.jpg)
তাহমিনা বেগম গিনি
প্রতিদিনই ভাবি আজ লিখবো, কিন্তু প্রতিদিনই দেশে এমন সব ঘটনা ঘটে চলেছে যা কলমের কালিতে লিখতে নিজেরই খারাপ লাগে। কিন্তু সত্যকে তো অস্বীকার করার উপায় নেই। রবিবার থেকে যে “ডেভিল হান্ট” শুরু হয়েছে এটা হওয়া উচিত ছিল বর্তমান উপদেষ্টাদের কার্যক্রমের শুরুতেই। তাহলে এত অসৎ রাজনীতিবিদরা দেশ ছাড়তে পারতেন না। দেশের মধ্যে ও অরাজকতার এমন সৃষ্টি হতো না। এখনো ফ্যাসিস্টরা সর্বক্ষেত্রে বর্তমান। ১৬/১৭ বছরের মানসিকতা বদলকরা কি এত সহজ? টাকার লোভ, বাড়ী, গাড়ী, নারীর লোভ যাদের আছে তারা সহজে কিংবা আদৌ বদলাবে কি না বলা যায় না। কত জায়গায় সংস্কার করবেন সংস্কারবিদরা। জমির আসল মাটি কাটা, বালুমহাল দখল, পাহাড় কাটা, পুকুর দখল, নদী দখল, বন উজাড়, শিল্প কলকারখানার বর্জ্যে গ্রামের পর গ্রামের জনগণের জীবনযাত্রা দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে আগের চেয়ে আরো বেশী। কোথাও নালিশ করে, উপর মহলের স্মরণাপন্ন হয়ে কোন কাজই হচ্ছে না। মনে হয় সবাই যেন এখন আইন না মানাকে আইন মনে করছে। চুরি, ডাকাতি, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, মুক্তিপণ, ছিনতাই, সড়ক দূর্ঘটনা কি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছে ভাবলে আশ্চর্য মনে হয়। মাঝে মাঝে মনে হয় কোথায় বসবাস করছি? সেদিন পরিচিত এক উকিল সাহেবা বললেন, তার কাছে নাকি ১৪ বছরের মেয়ে আর ১৬ বছরের ছেলে বলেছে বিয়ে পড়িয়ে দিতে। উনি তাদের অভিভাবকদের ডেকে হস্তান্তর করেছেন। আমরা প্রায়ই পত্রিকার পাতায়, ফেসবুকে পাই এমন বয়সের ছেলে মেয়ে হারিয়ে গিয়েছে। আসলেই কি হারিয়ে যায়? এখনো হত্যা হচ্ছে। আর কত? ১৯/২০ কোটি মানুষ এ দেশে। কত-মত, পথে তারা চলেন। এত মানুষকে ঐক্যমতে আনা কি সম্ভব? রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেই নেই ঐক্যমত। পত্রিকা, মিডিয়া সেখানেও নেই। তাহলে কিভাবে সাধারণ মানুষ বেঁচে থাকবে? এর সাথে চাল, তেল, আটা, চিনি, পেঁয়াজ আরো নিত্য ব্যবহার্য জিনিসের মূল্যের উর্ধ্বগতি অবশ্য এসব রাজনৈতিক শাসনামলেও হতো। রোজা আসছে। এখন কোটিপতি লোকের অভাব নেই দেশে, কিন্তু মধ্যবিত্ত, নি¤œমধ্যবিত্ত দেশের ৪ ভাগের ৩ ভাগ মানুষ তারা কি করবেন? প্রতি রোজাতেই মুসলমানদের সাথে অন্য ধর্মাবলম্বীরাও কষ্টে পড়েন। অথচ পৃথিবীর সকল মুসলিম দেশে রোজা এলেই জিনিসপত্রের দাম কমে যায়। আমরা নিজেরাই ঠিক নই। চলছে ভাষার মাস। কেমন আছে আমাদের মাতৃভাষা? সারাবছরে বাংলাভাষার খবর থাকেনা ফেব্রুয়ারী এলেই শহীদ মিনারের ধোঁয়া মোছা শুরু হয়।
চারিদিকে রব উঠে সাইনবোর্ড বাংলা করো, উচ্চশিক্ষার বই বাংলা করো, ইংরেজী মাধ্যম স্কুলগুলোতে বাংলা চর্চা কেমন হয় জানো। ২১ তারিখ শেষ হলেই আবার ধুলো জমে শহীদ মিনারের সিড়িতে। মাদকসেবী, গরু, কুকুর, ছাগলের আশ্রয়স্থল হয় প্রিয় শহীদ মিনার। ফেব্রুয়ারীতো এখন শোকাবহ মাস নয়। আমি বলি ফেব্রুয়ারীর ২১ তারিখ এলেই ফুলের বাণিজ্য, কালো পাঞ্জাবী, শাড়ী বিক্রেতা, কাপড় ব্যবসায়ী বাণিজ্যের হিসাবের খাতা খোলেন। কিন্তু প্রশ্ন আসে কেমন আছে আমাদের মাতৃভাষা? জীবনের গতি আর ভাষার গতি কি তাল মিলিয়ে চলতে পারছে? এই ডিজিটাল যন্ত্রপাতির যুগে এক একটা প্রজন্মের নতুন নতুন নাম ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে সবাই কি সবার ভাষা ঠিক বুঝতে পারছি? যেমন এইচ বিডি মানে হ্যাপী বার্থ ডে, আরআইপি মানে রেস্ট ইন পিচ, তারপর আছে ফেসবুক। এ শতাব্দিতে সবচেয়ে বড় সম্পদ তৈরি হচ্ছে যোগাযোগের ভাষা নিয়ে। মায়েরা কি বুঝেন টিকটকের ভাষা? প্রতিদিন যেন বদলে যাচ্ছে আমাদের সম্মানের ভাষা, ভালোবাসার ভাষা। পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহনশীলতার ভাষা, আবুল হাসানের কবিতা “মাতৃভাষার” মত বেদনার ভাষা অথচ শহীদ মিনার আমাদের জীবনের লালবাতি। এখান থেকেই শুরু হয়েছিল স্বাধীকার বীজ রোপন। এখন দেশেই যখন কত দলের কত রকম কথার ফুলঝুড়ি ফুঠছে, তখন ভাষাও ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করছে। তবে একটা খুব সত্য কথা না বললেই নয়- দেশের মানুষ এখন আর কোনো “বাদ” চায়না। সব রকমের বাদ থেকে মুক্ত হয়ে দেশবাসি একটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে নতুন দেশের প্রত্যাশায় আছে। কবে নাগাদ আমরা শান্তির পতাকার তলে আসতে পারবো জানিনা, তবুও আশাই বাঁচিয়ে রাখে জীবনকে। বইমেলা চলছে। প্রকাশিত হচ্ছে যত বই তত যদি বিক্রয় হয় তাহলে বলতেই হয় খুব ভাল। কিছু একটা ভালো তো হোক। যেমন প্রতিভাবসু বলে গিয়েছেন-
“বই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ আত্মীয়,
যার সঙ্গে কোন দিন ঝগড়া হয় না,
কোনদিন মনোমালিন্য হয় না।”