কালনী গ্রামে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে পুলিশ সুপার
স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ সদর উপজেলার কালনী গ্রামে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় সৌদি প্রবাসী কাজী দিপু মিয়া নিহত হওয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এন এম সাজেদুল হক। শুক্রবার বিকেলে তিনি কালনী গ্রামে নিহত কাজী দিপুর বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে তাদের শান্তনা দেন এবং হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেন। এছাড়াও তিনি আসামীপক্ষের ভাংচুরকৃত বাড়িঘর পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে বাড়িঘর ভাংচুরের দৃশ্য দেখে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি উপস্থিত লোকজনদের কাছ থেকে জানতে চান এগুলো কে করেছে। নিহতের চাচাত ভাই মানিক মিয়া বলেন- আমরা করেছি। পুলিশ সুপার জানতে চান কি জন্য করেছেন। জবাবে তিনি বলেন-আমাদের লোক মারা যাওয়ায় আমাদের মাথা ঠিক নেই। এজন্য এগুলো করেছি। তখন পুলিশ সুপার বলেন-এগুলো কি ঠিক। জবাবে মানিক মিয়া বলেন ঠিক না।
পরে পুলিশ সুপার উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, একটা মৃত্যুর পরবর্তীতে এই শীতের মধ্যে এতো বাড়িঘর ধ্বংস করা খুবই দুঃখজনক। ভাংচুরকৃত বাড়িঘরে ঘটনায় জড়িতরাই শুধু নয়, তাদের শিশু সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা বসবাস করতেন। অনেক ছেলে মেয়ে লেখাপড়া করতো এখন তারা থাকবে কোথায়। তাদের ভবিষ্যত কি হবে। অপরদিকে যে সন্তান তার বাবাকে হারিয়েছেন তাদেরও ভবিষ্যত কি হবে। আমাদের এ ধরণের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আমরা যুগ যুগ ধরে একে অন্যের প্রতি হিংসাত্মক মনোভাব রাখছেন যাহা একজন মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি রাখা ঠিক নয়। দাঙ্গার পরবর্তীতে বাড়িঘর ভাংচুর যেন এই এলাকার মানুষের ঐতিহ্য হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে দেশের অন্য এলাকার মানুষ দাঙ্গা প্রবণ এলাকা বলে। হবিগঞ্জের অনেক সুনাম রয়েছে সেই সুনাম আপনাদের ধরে রাখতে হবে। আমরা কালনী গ্রামের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সকালে আমরা গ্রাম থেকে অনেক অস্ত্র উদ্ধার করেছি এবং তারা দুই পক্ষের সাথে বসেছিলাম। তারা আমাদের দাঙ্গা করবেন না বলে আশ্বস্থ করেছিলেন। তারা আশ্বস্থ করার পরও সংঘর্ষে জড়িয়েছে। আমরা আর আশ্বস্থের মধ্যে থাকবো না। যারাই এ ধরণের কর্মকান্ডের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। হত্যাকান্ডের সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যেমন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তেমনি যারা বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকার শান্তি ফিরিয়ে আনতে পুলিশ সব ধরণের ব্যবস্থা নেবে।
পরিদর্শনকালে পুলিশ সুপারের সাথে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শহীদুল হক মুন্সী ও হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর কবির।
উল্লেখ্য, কালনী গ্রামের কাজী ফরিদ মিয়া এবং ইউপি মেম্বার লুৎফুর রহমান শাস্তু মিয়ার গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এ বিরোধের জের ধরে বুধবার বিকেলে উভয়পক্ষের লোকজনের মাঝে সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষে কাজী ফরিদ মিয়ার পক্ষের কাজী দিপু মিয়া নিহত হন। আর উভয়পক্ষের ৩০ জন আহত হন। দিপু মিয়া নিহতের ঘটনার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ইউপি মেম্বার লুৎফুর রহমান শাস্তু মিয়ার পক্ষের লোকজন পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে বাড়িঘর ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান। ঘটনার পর থেকেই কাজী ফরিদ মিয়ার পক্ষের লোকজন ইউপি সদস্য সাস্তু মিয়া পক্ষের ৩০/৩৫টি বাড়ি ভাংচুর করে এবং এসব বাড়ি থেকে ধান, চাল, গরু, ছাগল, হাঁস, মোরগ, স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্রসহ প্রায় কোটি টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।