স্টাফ রিপোর্টার, মাধবপুর থেকে ॥ জমাকৃত টাকা ফেরত পাওয়ার দাবীতে মাধবপুরে এনজিও নিশান কর্মকর্তাদের ২য় দিনের মতো অবরুদ্ধ করে রেখেছে আমানতকারীরা। অপরদিকে শত শত ক্ষুদ্র ও মাঝারি আমানতকারি নারী-পুরুষের আহাজারিতে ওই এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। এনজিও নিশানের আমানতকারীরা তাদের জমাকৃত টাকা ফেরত পাবেন কি না এনিয়ে গত ৩ মাস ধরে চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠায় দিন পার করছেন।
জানা যায়, অনেকেই অধিক মুনাফার আশায় জমিজমা বিক্রি করে টাকা জমা রেখেছেন এনজিও নিশানে। বেশ কিছুদিন ধরে ওই এনজিওর কর্মকর্তাদের অনিয়মিত উপস্থিতি ও লাভের টাকা না পেয়ে আমানতকারীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। শনিবার সন্ধ্যায় নিশানের চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন সহ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী কার্যালয়ে আসার খবর ছড়িয়ে পড়ে আমানতকারীদের মাঝে। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন দেশ ছেড়ে বিদেশ পালিয়ে যাবেন এমন আশঙ্কায় মুহূর্তের মধ্যে বিক্ষুব্ধ কয়েক শত লোক নিশান অফিস ঘেরাও করে অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবরুব্ধ করে রাখে। শনিবার সন্ধ্যা থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ প্রহরায় তারা অবরুদ্ধ রয়েছেন।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, নিশান পরিবেশ, স্বাস্থ্য সমবায় সমিতির অনুমোদন নিয়ে গত ১৫ বছর গোপনে চুনারুঘাট ও শ্রীমঙ্গলে কর্ম এলাকার বাইরে গিয়ে এনজিওর আদলে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে। এ ঘটনায় তৎকালীন সময়ে নিশানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল।
স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানান, নিশানের সাথে সংশ্লিøষ্টদের বৈধ আয়ের কোন উৎস নেই। কিন্তু তাদের সবার রয়েছে নামিদামি একাধিক গাড়ি, জমিজমা। জনতার তোপের মুখে পড়ে শনিবার রাতে নিশানের পরিচালক জালাল উদ্দিন বলেন, তারা মানুষের কাছ থেকে শত কোটি টাকা নিয়েছেন। বিভিন্ন ব্যবসায় তারা টাকা বিনিয়োগ করেছেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে তারা টাকা পাচ্ছেন না। তাই তারা আমানতদারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছেন না। টাকা ফেরত দিতে তারা গ্রাহকের কাছে সময় চেয়েছেন।
উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, প্রায় ১৫/১৬ বছর আগে নিশান আমাদের অফিস থেকে নিবন্ধন নেয়। কিন্তু ৩/৪ বছর যাবত তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ কবির হোসেন জানান, বর্তমানে আমানতকারীদের একটি বিক্ষুব্ধ গ্রুপ নিশান অফিস ঘেরাও করে রেখেছে। নিশানের চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন সহ কয়েকজন কর্মকর্তা ও স্টাফ অফিসের ভেতরে রয়েছেন। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশের একটি টিম নিশান অফিস এলাকায় অবস্থান করছে। বিষয়টি সুরাহার জন্য স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজন চেষ্টা করছেন বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে শাহজাহানপুর ইউপি চেয়ারম্যান পারভেজ হোসেন চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নিশানের সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে কিভাবে বিষয়টি সমাধান করা যায়।
মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ বিন কাশেম জানান, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। তারা কিভাবে এতো বড় ধরনের আমানত সংগ্রহ করেছে এবং তাতে প্রচলিত আইনের ব্যতয় হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।