আজ নবীগঞ্জে শহীদ ধ্রুব দিবস
উত্তম কুমার পাল হিমেল, নবীগঞ্জ থেকে ॥ আজ ৪ঠা ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় বীর সেনানী শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ধ্রুব’র ৫৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭১ সালের এই দিনে নবীগঞ্জ শহর মুক্ত করতে পাকিস্তানী হানাদারদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধে মারা যান এই বীর সেনানী। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এই বীর যোদ্ধার স্মৃতি রক্ষার্থে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি কিংবা তার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। অযতœ আর অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে এই বীর সেনানীর শেষ স্মৃতি সমাধিটুকুও।
সেদিন ছিল ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ৪ তারিখ। সারাদেশের মত নবীগঞ্জেও মুক্তিযোদ্ধাদের উপর পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর চোরাগুপ্তা হামলায় দিশেহারা ছিলেন সাধারণ মানুষ। নবীগঞ্জ থানা প্রাঙ্গণে বাংকার তৈরী করে রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানী বাহিনী শক্ত অবস্থান তৈরী করে। বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে ইতিমধ্যে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এমনি অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের অসীম সাহসী বীর সৈনিক রশীদ ও তার বাহিনী হানাদারদের ক্যাম্পে হামলার সিদ্ধান্ত নেয়। ঐদিন কাকডাকা ভোরে মুক্তিযোদ্ধা কনা মিয়ার বাড়ির পুকুর পাড়ে রশিদ বাহিনী নবীগঞ্জ থানায় অবস্থান করা হানাদারদের ক্যাম্প টার্গেট করে অবস্থান নেয়। এই দলের সর্ব কনিষ্ট সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ধ্রুব অত্যন্ত সাহসিকতার সহিত হানাদারদের বাংকার ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হাতে ক্রলিং করে নবীগঞ্জ-বানিয়াচুং সড়কের উপর দিয়ে অগ্রসর হতে থাকে। তার সহযোদ্ধাগণ শত্রুসৈন্যকে লক্ষ্য করে মেশিন গানের গুলি ছুড়তে থাকে। পাকিস্তানী সেনারাও আক্রমণ প্রতিহত করতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি ছুড়তে থাকে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ঘন্টব্যাপী গুলি বিনময় হয়। সূর্যের আলো দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিবাহিনী আত্মরক্ষার্থে পিছু হটতে থাকে। কিন্তু অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ধ্রুব’র আর পিছু হটা হলো না। শত্রুর ছুড়া গুলিতে তার বুকের পাজর ঝাঝড়া হয়ে যায়। সাথে সাথেই মারা যান এই অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ধ্রুব। দীর্ঘক্ষন তার লাশ পড়ে থাকে নবীগঞ্জ-বানিয়াচং সড়কের উপর। এক সময় পাশ্ববর্তী রাজনগর গ্রামের কিছু সাহসী যুবক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ধ্রুবের লাশ এনে সমাধিস্থ করে নবীগঞ্জ-বানিয়াচং সড়কের বর্তমান থানা ভবনের সামনে ঐ গ্রামের কবরের এক পাশে। পরদিন ৫ই ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধা, তৎকালীন সাব-সেক্টর কমান্ডার মাহবুবুর রব সাদীর নেতৃৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা নবীগঞ্জ থানা প্রাঙ্গণে অবস্থিত পাকিস্তানী হানাদারদের ক্যাম্পে আক্রমণ চালিয়ে দখল করে মুক্ত করেন নবীগঞ্জ শহরকে। কিন্তু দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ধ্রুব’র সমাধিটি আজও সঠিকভাবে চিহ্নিতই করা হয়নি। ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে ফুল দিয়ে সম্মান জানানো হয় মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানীদের। কিন্তু ঠিকানা বিহীন মুক্তিযোদ্ধা ধ্রুবের সমাধি আজও চিহ্নিত করা হয়নি। নবীগঞ্জ থানা সংলগ্ন গেইটের সামনে রাজনগর গ্রামের কবর স্থানের এক পাশে পড়ে আছে অযতœ আর অবহেলায় তার সমাধি।